Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহার, পুতিনের পরিকল্পনা আসলে কি?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:৩৯ পিএম

রাশিয়ার সেনারা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন ছেড়ে চলে গেলেও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সতর্ক করছেন - যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার এ যুদ্ধের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

গত বুধবার মস্কো ঘোষণা করে যে, তারা খেরসন শহর থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ‘আমি জানি এটা একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবে আমরা আমাদের সৈন্যদের জীবন এবং আমাদের বাহিনীর লড়াই করার সক্ষমতাকে রক্ষা করবো,’ বলেন জেনারেল সুরোভিকিন। পশ্চিামার বলছেন, খেরসন থেকে এই সেনা প্রত্যাহার রাশিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি বড় এবং অপমানজনক আঘাত। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলছেন ব্যাপারটাকে তারা মোটেও এভাবে দেখছেন না।

দিমিত্রি পেসকভ বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, খেরসন থেকে রুশ সৈন্যদের হটে যাওয়াটা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য অপমানজনক কিছু নয়। টিভি উপস্থাপক ভ্লাদিমির সলোভিয়ভ তার অনুষ্ঠানে বলছিলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম মার্চ মাসেই কিয়েভে আমাদের পতাকা উড়ুক। তাই কিয়েভ ও চেরনিহিভ থেকে আমাদের সৈন্যদের পিছিয়ে আসাটা ছিল বেদনাদায়ক।’ ‘কিন্তু এটাই যুদ্ধের নিয়ম...আমরা নেটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি,’ বলেন তিনি।

যুদ্ধে কী হচ্ছে তার বর্ণনার ভাষাকে ক্রেমলিন ঠিক এভাবেই ঘুরিযে দিচ্ছে -বলছেন স্টিভ রোজেনবার্গ। রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বার্তাটা হচ্ছে এই রকম: ইউক্রেনে রাশিয়াকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং নেটোর সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে। অন্য কথায়, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে যে বিপর্যয় হচ্ছে তা ক্রেমলিনের কোন দোষে নয় - এসব ঘটছে বাইরের শত্রুদের কারসাজির ফলে।

যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিজয়গুলো সত্ত্বেও একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং সেসব এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ চলতে থাকলেও রুশ দখল এখনো কায়েম আছে। রুশ সৈন্যদের প্রস্থানের পর খেরসন শহরে উল্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এমন আতংকও আছে যে রাশিয়া হয়তো সেখানে পাল্টা আক্রমণও চালাতে পারে - জানাচ্ছেন নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতারা।

রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের স্থলযুদ্ধ বিষয়ক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জ্যাক ওয়াটলিং গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কৌশলে একটা পরিবর্তন এনেছেন। তিনি বলছেন, ‘এর লক্ষ্য হচ্ছে তাদের নতুন তৈরি করা প্রতিরক্ষা ব্যুহের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণকে মোকাবিলা করে তাকে দুর্বল করে ফেলা, এবং অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালিয়ে পশ্চিমা জোটের মনোবল ও অস্ত্রের মজুতকে হ্রাস করা। অন্যদিকে আগামী বছরে নতুন লোক এনে সামরিক বাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করা।’

রাশিয়া ও ইউক্রেনে এখন শীতকাল প্রায় এসে গেছে। এসময় প্রচণ্ড ঠান্ডা ও ভারী তুষারপাতের কারণে যুদ্ধ হয়ে উঠবে অত্যন্ত কঠিন। জ্যাক ওয়াটলিং বলছেন, ইউক্রেনের জন্য যা জরুরি তা হলো রুশ সৈন্যরা যেন শীতের সময়টায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করা। তিনি আরো বলছেন, এমন কিছু খবরও আছে যে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউক্রেনকে সুপারিশ করছে যেন তারা আলোচনায় বসে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে - ইউক্রেন আভাস দিয়েছে যে তারা অভিযান অব্যাহত রাখবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ যুদ্ধে শীত একটা নির্ণায়ক ভুমিকা পালন করবে এবং এ সময়টায় উভয় পক্ষই হয়তো অভিযানে বিরত থাকবে - এমনটাও হতে পারে। কিছু বিশ্লেষক ও কূটনীতিক এমনকি শীতের সময়টায় একটা শান্তি আলোচনার সম্ভাবনার কথাও বলছেন। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ