পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিষয়টি নতুন নয়। বহু বছর ধরেই এসব গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। এসব যানবাহন যারা চালায় তাদের অনেকের বৈধ লাইসেন্স নেই। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে। গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীতে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া বিভিন্ন সড়কে কমপক্ষে ৯০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। রাজধানীর প্রায় ৭০টি রুটে এসব যানবাহন চলাচল করছে। রাজধানীর বাইরের ফিটনেসবিহীন যানবাহনও প্রবেশ করছে। মাঝে মাঝে পুলিশ ও বিআরটিএ ভ্রম্যমান আদালত বসিয়ে অভিযান চালালেও তার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। নির্বাধেই এসব যানবাহন চলাচল করছে। রাজধানীতেই যদি এত ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক বহাল থাকে, তাহলে দেশের অন্যান্য জেলা শহরের যানবাহনের কি অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়। এসব যানবাহন একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, অন্যদিকে যানজট সৃষ্টি ও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে আহত-নিহত করছে। বছরের পর বছর ধরে সড়কে এ ধরনের অরাজকতা চললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
পসিংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রায় ২০ লাখ নিবন্ধিত যানবাহ চলাচল করে। এর মধ্যে বেশিরভাগই প্রাইভেট গাড়ি। ৫ লাখ হালকা গাড়ি। এর মধ্যেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহ শনাক্তের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না। একজন সাধারণ মানুষও সহজেই বুঝতে পারে। বিশ্বের কোনো রাজধানীতে এমন ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। বলা হয়ে থাকে, রাজধানীসহ যেকোনো শহরের যানবাহনের দৃশ্য সেই শহরের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। সভ্যতারও প্রকাশ ঘটায়। উন্নত বিশ্বের গণপরিবহণ ও সেগুলোর সৌন্দর্য ও সুযোগ-সুবিধা এতই যে, মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়ে সেগুলোতেই বেশি চলাচল করে। ঢাকার গণপরিবহন হিসেবে বাস, মিনিবাস এমনকি বিআরটিসি বাসের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে, আমরা কোনো সভ্য নগরে বসবাস করছি না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, উন্নয়নের ঢামাঢোলের মধ্যে আছি, অথচ আজ পর্যন্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে পারিনি। যেখানে বলা হচ্ছে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির অন্যতম প্রধান শর্ত, সেখানে অবাধে চলছে ভাঙাচোড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন। বছরের পর বছর ধরে দেশে যানবাহন ব্যবস্থা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এসব ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বলা যায়, যাত্রীরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে রয়েছে। এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। এ থেকে বুঝতে বাকি থাকে না, রাজধানীর গণপরিবহন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশও এগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এর কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে উৎকোচ বাণিজ্য কম হয়। এর বিপরীতে ফিট ও বৈধ গাড়ির ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরতে পারলে সেগুলো বেশি বাণিজ্য হয়। ফলে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দিকে তাদের নজর কম থাকে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালকÑএই দুইয়ের কারণে রাজধানীতে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি চলছে। বৈধ লাইসেন্সবিহীন চালকরা বেপরোয়া হয়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত ও পঙ্গু হচ্ছে। শুধু এসব যানবাহনের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকই নয়, অসংখ্য টেম্পুর চালক শিশু, যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এরাও বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব অনিয়ম জানা থাকলেও পুলিশ ও বিআরটিএ’র কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
ঢাকার সমস্যার অন্ত নেই। এটি বিশ্বের সবচেয়ে অবাসযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে বহু আগেই চিহ্নিত হয়েছে। একটি রাজধানীর নাগরিকদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা লাভ করার কথা, তার ন্যূনতম সুবিধা তারা পাচ্ছে না। পরিবহন ব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে, যাত্রীদের নিদারুণ দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। যেসব গণপরিবহন রয়েছে, সেগুলোর যাত্রী সুবিধা বলতে কিছু নেই। কোনো রকমে যাত্রী তুলেই চলাচল করছে। যেগুলোর ফিটনেস নেই, সেগুলো রীতিমতো মরণঘাতী হয়ে রয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা আধুনিক করা নিয়ে অনেক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। সড়কে আনফিট গাড়ি চলতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বাস্তবে এসবের কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। কাজীর গরু কেতাবেই রয়ে গেছে। এর জন্য মূলত দায়ী, পুলিশ ও বিআরটিএ। তাদের কার্যকর উদ্যোগ না থাকা এবং দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই ফিটনেসবিহীন ও বৈধ লাইসেন্সবিহীন চালক সড়ক দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনেরও দায় রয়েছে। তারা যদি সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব। আমরা মনে করি, সড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক উচ্ছেদে পুলিশ ও বিআরটিএকে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। লোকদেখানো অভিযান চালালে হবে না। এসব যানবাহন ও চালক শনাক্ত করে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই এসব যানবাহন সড়কে চলাচল করতে দেয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।