পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতীদের উন্নত ও যথোপযুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষে গত দুই বছর থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকা মেডিকেলে কার্যক্রম শুরু হয় ফিটো-ম্যাটারনাল ইউনিটের। কিন্তু এখনও সেখানে কোনো বিশেষজ্ঞকে পদায়ন করা হয়নি। তাই সাধারণ গাইনি বিশেষজ্ঞরাই এই ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
অথচ দেশে সরকারি পর্যায়ে এই বিষয়ে একজন এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। যাকে একটি উপজেলায় পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর ৯৯ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটে থাকে এবং এক শতাংশ উন্নত দেশগুলোতে। উন্নত দেশগুলোর এই উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পিছনে রয়েছে অসংক্রামক রোগসহ জটিল রোগে আক্রান্ত গর্ভবতীদের চিকিৎসা সেবায় ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন বিভাগ। যা বাংলাদেশে ফিটো-ম্যাটারনাল নামে পরিচিত।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৬ লাখ নারী যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছর তারা গর্ভাবস্থা ও প্রসবজণিত কারণে মারা যায়। এর মধ্যে মাতৃমৃত্যুর ৯৯ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটে থাকে। এই মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি মৃত্যু হয় দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। হাইরিক্স প্রেগনেন্সি টেক্সট বুকের তথ্যানুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি ৭৫ জনে একজন নারী তার জীবনে প্রসব ও গর্ভজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বহন করে যা উন্নত দেশে ৭ হাজার ৩০০ জনে একজন নারী।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মাতৃমৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে Ñ ১৩ শতাংশ অনিরাপদ গর্ভপাত, ১২ শতাংশ প্রি-এক্লাম্পসিয়া, একøাম্পসিয়া, ২৫ শতাংশ গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী রক্তপাত, ১৫ শতাংশ ইনফেকশন, ৮ শতাংশ বাধাগ্রস্থ এবং ৭ শতাংশ হচ্ছে অন্যান্য। মৃত্যুকারণের মধ্যে পরোক্ষ হচ্ছেÑ ২০ শতংশ। রক্তশূন্যতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রি-এক্লাম্পসিয়া, একøাম্পসিয়া, গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী রক্তপাত, ইনফেকশন, বাধাগ্রস্থ, রক্তশূন্যতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যাগুলো যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ।
বাংলাদেশে ফিটো-ম্যাটারনাল বিভাগে ব্যাপক আকারে রোগীদের সেবা দেয়া শুরু করেনি যার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে সরকারি পর্যায়ে এই বিষয়ে একজন এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ থাকলেও তাকে উপজেলায় পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ইউনিট রয়েছে। সেখানে সাধারণ গাইনি বিশেষজ্ঞরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি) পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন মাতৃস্বাস্থ্য। বাংলাদেশে গত ২৫ বছরে (১৯৯০ থেকে ২০১৫) মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। যদিও বৈশ্বিকভাবে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ৪৪ শতাংশ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মদানের সময় এবং সন্তান জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে মায়ের মৃত্যু হলে সেটা ‘মাতৃমৃত্যু’ হিসেবে গণ্য হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ১৭০ থেকে নামিয়ে ৭০ এ নিয়ে আসা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত দুই বছর থেকে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে ফিটো-ম্যাটারনাল ইউনিট। কিন্তু এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, ২০১৪ এবং ২০১৩ সালে ঢাকা মেডিকেলের প্রসূতি বিভাগে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল যথাক্রমে শতকরা শূন্য দশমিক ৬৫ এবং শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২০১৪ সালে এক্লাম্পসিয়া, জন্ডিস, হৃদরোগ সংক্রমন এবং প্রসবের আগে মৃত্যু হয় যথাক্রমে শতকরা ৩৭, ১১, ৫, ৯ এবং ১০ জন গর্ভবতী। ২০১৩ সালে উক্ত রোগে মৃত্যুবরণ করে যথাক্রমে শতকরা ২৫, ১৩, ৪, ১৮ এবং ১২ জন প্রসূতি। এই সমীক্ষার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যদি হয় দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সরকারি হাসপাতালের চিত্র তাহলে বাকি এলাকার অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।
ঢাকা মেডিকেলের এই সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে। কিন্তু বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালে ৯০৫ জন উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন প্রসূতি রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে মারা যান ৪ জন। এই হিসেবে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৪ এই হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। অর্থাৎ ২০১৪ সালে রোগী ভর্তি হয় ৭৮২ জন। এর মধ্যে মারা যায় ২ জন। এই হিসেবে মাতৃমৃত্যু হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
বিএসএমএমইউতে ২০০৪ সালে ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন ইউনিটটি চালু করেন ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ফিরোজা বেগম। বর্তমানে এই ইউনিটে বেড সংখ্যা হচ্ছে ১৮টি। প্রতিবছর গড়ে এই ইউনিটে শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন ৮০০ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। বর্হিবিভাগে প্রতি বছর উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন প্রায় ৫ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। এসব রোগীদের অন্যান্য হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয়। প্রফেসর ডা. ফিরোজা বেগম বলেন, ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগে খুব দ্রুতই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় করতে পারে।
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) সচিব প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী জানান, ২০১২ সাল থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী এবং গর্ভস্থ শিশুদের বিভিন্ন অসুস্থতার যথোপযুক্ত চিকিৎসার উদ্দেশে ফিটো-ম্যাটারনাল মেডিসিন নামে একটি বিষয় চালু করা হয়। যা মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানোতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে ফিটো-ম্যাটারনাল বিভাগ সরকারি পর্যায়ে বিসিপিএস অনুমোদিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান।
বিসিপিএস সূত্র জানায়, ফিটো-ম্যাটারনাল বিষয়ে সচিবের লিখিত আবেদনটি এরমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে যিনি বিসিপিএস থেকে চলতি বছরে ‘সেশন-জুলাই ২০১৬’ এফসিপিএস সাব স্পেশালিটি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি হলেন ডা. মোছা. তাজমিরা সুলতান। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম এই বিষয়ে এফসিপিএস পাস করেন। বর্তমানে তাকে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে।
ঢামেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাফল্য তা ধরে রাখার জন্য অবশ্যই নতুন নতুন বিষয়ে পদ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি বিষয়েই আলাদা আলাদা সাব-স্পেশালিটি তৈরী করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কিছু কিছু নতুন বিষয়ে পদ সৃষ্টি হয়নি তবে তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসা সেবায় স্পেশালিটি এবং সাব-স্পেশালিটি পদ সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে যেসব নতুন বিষয় বিশেষজ্ঞ হয়েছেন তাদের পদ সৃষ্টি হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।