পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মা, তুমি ভাত খেয়ে ঘুমাও। আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। গত শুক্রবার রাতে নয়ন (২৬) লালমনিরহাটে থাকা মা বুলবুলি বেগমকে মোবাইল ফোনে একথা বলে এশার নামাজ আদায় করতে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার মসজিদে যান। এর কয়েক ঘণ্টা পর নয়নের বন্ধু ফোন দিয়ে জানায় মসজিদে বিস্ফোরণে নয়ন দগ্ধ হয়েছেন। মা রাতেই লালমনিরহাট থেকে রওনা দিয়ে সন্তানের খোঁজে ঢাকায় আসেন। তবে সন্তানের দেখা পাননি। সন্তান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি। আর মা হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষে আহাজারি করছেন, আমার নয়নকে একটু দেখাও। গতকাল সকাল থেকে একেকটি পোড়া দেহের মৃত্যুর খবরে এভাবেই স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ। হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় সান্ত¦না দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন সবাই।
ক্ষুব্ধ স্বজনরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মসজিদ কমিটিকে গ্যাস লিকেজের কথা বললেও তারা কর্ণপাত না করাতেই হারাতে হলে এতোগুলো তাজা প্রাণ।
গতকাল সকালে ঢামেকে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষ এবং আশপাশে আহাজারি করছেন নিহত ও আহতের স্বজনরা। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া সন্তান রিফাতের উপরেই সচ্ছল ভবিষ্যতের স্বপ্ন ছিল রিকশাচালক আনোয়ার হোসেনের। নারায়ণগঞ্জের মসজিদের এসি বিস্ফোরণে হারিয়েছেন সেই অবলম্বন। অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদনকে বলেন, আমার ছেলে মরে গেছে। কত কষ্ট করে বড় করছি, এখন আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ? আনোয়ারের মতো শত শত স্বজন এখন অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পিয়ন নূরুদ্দীন। স্বল্প বেতনে পড়ালেখা করিয়েছেন তিন ছেলে সাব্বির, জোবায়ের ও ইয়াসিনকে। তিনজনই একসঙ্গে নামাজ পড়তে গিয়েছিলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে। ছোট ছেলে ইয়াসিন কোনোমতে বেরিয়ে যেতে পারলেও প্রাণ হারিয়েছেন বাকি দুইজন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পাই। এ টাকা দিয়ে কষ্ট করে ছেলেদের পড়ালেখা করাইছি। আমার দুই ছেলে মরে গেছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব? আল্লাহ নিজ হাতে ছোট ছেলেটারে বাঁচাইছে।’
বড় ভাই নিজামের খোঁজে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে অপেক্ষা করছিলেন লাইজু। তারা তিন ভাই-বোন এখনো সঠিক খবর পাননি নিজামের। লাইজু বলেন, ভেতরের লোকজন বলছে, ভাই ভালো আছে। কিন্তু আমরা কোনো খবর এখনো জানি না। আল্লাহ আল্লাহ করতেছি। আল্লাহ যেন আমার ভাইরে সুস্থ করে রাখে।
আরেক পোশাক শ্রমিক মো. কেনান। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। কেনানও বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। তার ছোট ভাই মো. ইমরান বলেন, আমার ভাই গার্মেন্টসে চাকরি করে। মসজিদে নামাজে পড়তে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আমি বাসা থেকে দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি রাস্তার ওপরে সবাই ছটফট করতেছে। কেউ কেউ রাস্তায় জমে থাকা পানিতে গড়াগড়ি করছিল। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। এরপর আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে সবাইকে একে একে হাসপাতালে নেয়া হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহীম (৫০)। এশার নামাজ পড়তে তিনিও শুক্রবার রাতে মসজিদে যান। তার বড় ছেলে ফয়সালও মসজিদে ছিলেন। ছেলে নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে একশ’ গজ দূরে যান। এর মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। হঠাৎ তার বাবার কথা মনে পড়ে। দৌড়ে মসজিদের সামনে যান। ফয়সাল বলেন, মসজিদের সামনে গিয়ে দেখলাম থাইগ্লাস ভেঙে আগুনের গোলা বের হচ্ছে। আগুনের গোলার সঙ্গে মানুষও বের হয়ে আসছে। দু’বার আগুনের গোলা বের হয়েছে। এরপর দেখি বাবাও রাস্তায় পড়ে আছে। দাড়ি, চুল, কাপড় সব পুড়ে গেছে, কিছু নেই। দ্রুত তাকে নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে আসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।