২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে এর উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পেইন বা প্রচারের মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর পালিত হয় ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে। এবারের থিম বা মূল প্রতিপাদ্য বিষয় “এডুকেশন টু প্রোটেক্ট টুমরো”। আগামীর সু-স্বাস্থ্যের জন্য ডায়াবেটিস বিষয়ে শিক্ষা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। রক্তের সুগার শরীরে কি ধরনের প্রভাব বিস্তার করে তা নিয়ে আমাদের আলোচনা।
মুখ গলার সমস্যা: রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে আপনার মুখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং মুখের কোনায় ফেটে যেতে পারে যেহেতু আপনার শরীর নিজস্ব প্রয়োজনে সেখান থেকে ফ্লুইড টেনে নেয়। রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে এবং লালার নিঃসরণ কম হলে সংক্রমন দেখা দিতে পারে। আপনার মাড়ি ফুলে যেতে পারে এবং জিহবা এবং গালের অভ্যন্তরে সাদা প্যাঁচ বা দাগ দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারনত ওরাল থ্রাশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে সাদা প্যাঁচ বা দাগ থাকলে তা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ধরনের সমস্যায় অধিক পরিমানে পানি পান করতে হবে এবং সুগার ফ্রি চুইংগাম কিছুটা হলেও সাহায্য করে থাকে।
ত্বকের সমস্যাঃ আপনার শরীর সব স্থান থেকে পানি গ্রহণ করে অতিরিক্ত সুগার থেকে মুক্তি লাভের জন্য। এর ফলে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত এবং ফাটা ত্বকের সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে আপনার পায়ে, কনুই, পায়ের পাতা এবং হাতে। সময়ের সাথে সাথে উচ্চ গøুকোজ লেভেল নার্ভ ড্যামেজ করতে পারে। এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলে শরীরের কোনো স্থানে কাঁটা, ক্ষত অথবা সংক্রমন অনুভব করা কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে পড়ে। যথাযথ চিকিৎসা না হলে এটি আরও বড় সমস্যায় রূপ নেয়।
চোখ ও দৃষ্টির সমস্যাঃ সুগারের মাত্রা বেশি হলে আপনার শরীর চোখের লেন্স থেকে ফ্লুইড টেনে নিতে পারে যার কারনে চোখের ফোকাস কঠিন হয়ে পড়ে। উচ্চ মাত্রায় বøাড সুগার চোখের কালো অংশ অর্থাৎ রেটিনার রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিশক্তি হারানো এমনকি অন্ধ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে।
পিপাসা বেশী হতে পারেঃ অতিরিক্ত সুগার থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনার শরীর নিজের টিস্যু থেকে পানি টেনে নেয়। কারন শক্তি তৈরির জন্য এবং পুষ্টি যোগানোর জন্য ঐ ফ্লুইড প্রয়োজন হয়। এছাড়া বর্জ্য অপসারনের জন্য ফ্লুইড প্রয়োজন হয়। তখন আপনার ব্রেনে সংকেত পৌঁছে যায় যে, আপনি তৃষ্ণার্থ। সুতরাং আপনি বেশি পানি পান করে থাকেন।
হজমের সমস্যাঃ রক্তে সুগার বেশি হলে হজমে সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময়ব্যাপী যদি আপনার রক্তে সুগার বেশি থাকে তাহলে এর ফলে ভেগাস নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করার পর তা যেন পাকস্থলী এবং অন্ত্রে চলাচল করতে পারে সেজন্য ভেগাস নার্ভ সাহায্য করে থাকে। ভেগাস নার্ভক্ষতিগ্রস্ত হলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আপনি ওজন হারাতে পারেন যেহেতু আপনি আগের মত ক্ষুধার্ত নন অর্থাৎ আপনার ক্ষুধা কম লাগে। কারন খাদ্যদ্রব্য চলাচল ঠিকভাবে করতে পারেনা। এসিড উদগীরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া মাংসপেশীর ক্রাম্প, বমি এবং অতিমাত্রায় কনস্টিপেশন দেখা দিতে পারে। তাই রক্তের সুগার লেভেল অবশ্যই নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভবঃ যদি আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে তাহলে আপনি ক্লান্তি অনুভব করবেন। যখন আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকবে এবং রক্তের সুগার প্রায়ই বেশি থাকে তখন আপনি ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে পড়েন। ইনসুলিন সাহায্য করে যেন এনার্জি বা শক্তি আপনার কোষে পৌঁছে। ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীলতার কারনে শরীরের কোষ ঠিকভাবে পুষ্টির যোগান পায় না।ফলে আপনি ক্লান্তি অনুভব করেন। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও আপনার একই ধরনের ক্লান্তি হতে পারে। কারন আপনার শরীর নিজ থেকে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারছে না। যদি আপনি এর চিকিৎসা সঠিকভাবে গ্রহণ না করেন তাহলে রক্তে সুগারের পরিমান সবসময় বেশি থাকবে। সঠিক ঔষধ এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কিডনির সমস্যাঃ রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে অতিরিক্ত সুগার ধীরে ধীরে আপনার কিডনি ড্যামেজ করতে পারে। আমাদের শরীরে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে রক্ত ফিল্টার করার ক্ষেত্রে। রক্তে সুগার বেশি থাকলে কিডনি অতিরিক্ত কাজ করে থাকে রক্ত ফিল্টার করার জন্য। যদি রক্তে সুগার এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে কিডনির জন্য তা সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায় তখন কিডনি অতিরিক্ত সুগার মুক্ত করে দেয় প্রস্রাবের মাধ্যমে। যদি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের কারনে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। কিডনি ড্যামেজ হলে কিডনি আর রক্ত ফিল্টার করতে পারে না।ফলে রক্তের বর্জ্য অপসারিত হয় না। এর ফলে কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে। তাই যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস হলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আবার রক্তে সুগার কমে গেলেও নানা রকম শারীরিক সমস্যা তৈরী হয়:
হাটর্ বিটের সমস্যাঃ রক্তে সুগার কমে গেলে অদ্ভুত হাটর্ বিট অথবা হার্ট বিটে সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য অর্থাৎ সুগারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে অনেকেই ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু কোন কারনে রক্তে সুগার কমে যেতে পারে। রক্তে সুগার বেশি কমে গেলে গøুকাগন নামক হরমোন রক্তের সুগার লেভেল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু যখন এই হরমোনটি খুব কম থাকে তখন হার্ট রেটে সমস্যা হয়। মনে হবে একটি হার্ট বিট অনুপস্থিত। ডাক্তারি ভাষায় যা এরিথমিয়া নামে পরিচিত। এরিথমিয়া একটি অবস্থা যেখানে হাটর্ বিট অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক থাকে। আরও সহজ করে বলতে গেলে এরিথমিয়া অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক হার্ট বিট। হার্টের বিট বেশি বা কম হতে পারে। হার্টের অস্বাভাবিক রিদম হতে পারে। তাই রক্তে সুগার লেভেলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
রক্তে সুগার কমে বিভ্রান্তিঃ আপনার রক্তে সুগার কমে গেলে আপনার মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। যখন আপনার বøাড সুগার সত্যিকার অর্থে অনেক কমে যায় অর্থাৎ হাইপোগøাইসেমিয়া সৃষ্টি হয় তখন আপনার সহনশীলতা বা বহন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আপনার কথা বলার ক্ষেত্রে উচ্চারনে সমস্যা হতে পারে এবং আপনি ভুলে যেতে পারেন আপনি কোথায় আছেন? মাঝে মাঝে এটি হঠাৎ করে ঘটে যে আপনি বুঝতেও পারবেন না আপনি আশ্চর্যজনকভাবে বা অচেনা আচরণ বা কাজ করছেন। মারাত্মক ক্ষেত্রে আপনি মূর্ছা যেতে পারেন এমনকি কমায় চলে যেতে পারেন। তাই বøাড সুগার নিয়মিত মনিটর করতে হবে।
দুর্বলতা অনুভবঃ আপনার ব্রেনের কোষগুলোর গøুকোজ প্রয়োজন হয় ঠিকভাবে কাজ করার জন্য। যখন পর্যাপ্ত পরিমানে গøুকোজ থাকে না তখন আপনি ক্লান্তি অনুভব করেন। রক্তে সুগার কম থাকলে আপনি দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরা অনুভব করতে পারেন। আপনার মাথা ব্যাথাও হতে পারে। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
সুগার লেভেল খুব কমে গেলেঃ যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে ইনসুলিন একটি উপায় রক্তে সুগার কমানোর জন্য যখন রক্তে সুগার বেশি থাকে। কিন্তু ইনসুলিনের পরিমান বেশি হয়ে গেলে খুব দ্রæত শরীর থেকে গøুকোজ অপসারিত হয়। তখন আপনার শরীর দ্রæত গøুকোজ যোগান দিতে পারে না। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে আপনি ক্লান্তি অনুভব করবেন। অন্যান্য রোগ এবং ঔষধ একই ধরনের কাজ করতে পারে অর্থাৎ রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। রক্তে সুগার লেভেল কম-বেশি হলেঃ যখন আপনার রক্তের সুগার লেভেল খুব বেশি অথবা খুব কম হয়ে যায় তখন এটি রিবাউÐ প্রভাব ফেলতে পারে। রিবাউÐ অর্থ প্রতিক্ষেপন। আপনার রক্তের সুগার এক লাফে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাউন্স করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্র বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। পাকস্থলীর কারনে আপনি অসুস্থবোধ করতে পারেন। বমি বমি ভাব হতে পারে। খাবার খাওয়ার পরেও তীব্র ক্ষুধা অনুভব হতে পারে। এটি একটি লক্ষন হতে পারে যে, আপনার শরীর সঠিক উপায়ে খাবারকে সুগারে রুপান্তরিত করেনি। অসুস্থতা অথবা কিছু ঔষধের কারনে এমন হতে পারে। যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আপনার ডাক্তার ঔষধ সমন্বয় করে দিবেন।
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে: যে হরমোন আমাদের শরীর থেকে নিঃসরিত হয় রক্তে সুগার বৃদ্ধি করার জন্য তা যদি খুব কমে যায় তখন শরীরে অনেক ঘাম হয়। যখন আপনার রক্তের গøুকোজ লেভেল অনেক পড়ে যায় তখন সম্ভবত ঘাম প্রথম লক্ষন যা আপনার নজরে আসে। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে বøাড সুগার স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা যায়। এজন্য প্রয়োজন ডাক্তার দেখানো, ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস। রক্তে শর্করার মাত্রা আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস রোগী ছাড়াও সবার জানা প্রয়োজন রক্তে সুগারের পরিমান বেশি বা কম হলে কি কি সমস্যা হয়।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।