Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাপের মুখে অবশেষে জেলেনস্কির সুর বদল

রাশিয়ার সাথে সংলাপে রাজি ইউক্রেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অধীনে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়, এমন অনড় অবস্থান থেকে অবশেষে সরে আসতে হ’ল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু, সংলাপে বসতে কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছেন।

তিনি জাতিসংঘের সনদ মানতে এবং চলমান যুদ্ধে যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সম্মেলন কপ-২৭-এ ভার্চ্যুয়ালি দেয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি রাশিয়াকে এ শর্ত দেন। তিনি রাশিয়াকে সত্যিকারের শান্তি আলোচনায় বাধ্য করতেও আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।

জেলেনস্কি ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধারেরও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, তার প্রধান দাবি, দখলীকৃত গোটা এলাকা থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এটি না মানলে শান্তিচুক্তি সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন সংবাদপত্র পলিটিকো অনুসারে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের কিয়েভ সফর সহ কিয়েভ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই পরিবর্তন ঘটেছে। পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনে জেলেনস্কি এবং তার সহযোগীদের তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য সরাসরি বলেননি, কিন্তু পরোক্ষভাবে বার্তা দিয়েছেন যে, কিয়েভকে অবশ্যই ‘যুক্তিগতভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে তার ইচ্ছুকতা দেখাতে হবে।

এদিকে, যদিও, মঙ্গলবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুডেনকো বলেছেন যে, চলমান সঙ্ঘাতের অবসানের জন্য কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মস্কোর কোনো পূর্বশর্ত নেই এবং আলোচনার জন্য তাদের সদিচ্ছা রয়েছে, তবে, তিনি ইতিমধ্যেই কিয়েভকে সদিচ্ছার অভাবের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। রাশিয়ার জন্য এটি মানা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও। রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকোর মতে, ‘জেলেনস্কি চাল বদলানোর চেষ্টা করছেন কারণ আলোচনার প্রতিশ্রুতি কিয়েভকে কিছুতে বাধ্য করছে না, কিন্তু এটি পশ্চিমা অংশীদারদের সমর্থন টিকিয়ে রাখা সম্ভব করে তোলার জন্য।’

এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনার হবে না বলে এক ঘোষনা পত্রে স্বাক্ষর করেন জেলেনস্কি। কিন্তু, রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থির সাম্প্রতিক মন্তব্য যে, মার্কিন আইন প্রণেতারা ইউক্রেনের জন্য আর ‘ব্যøাঙ্ক চেক’ দেবেন না, রিপাবলিকানদের ক্রমবর্ধমান নেতিবাচকতাকে প্রতিফলিত করে। এবং মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্জনের পর ইউক্রেনের জন্য ওয়াশিংটনের অবারিত রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ হতে যাচ্ছে।

পাশাপাশি, একদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, রক্তহীম করা শীতের মধ্যে জ¦ালানী, বিদুৎ ও পানি সঙ্কটে নিমজ্জিত ইউরোপ এবং অপরদিকে অর্থ, খাদ্য ও জ¦ালানী সঙ্কটে নাজেহাল বর্তমান বিশ^। এর মধ্যে, জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যুদ্ধকালীন ইউক্রেনীয় শস্য এবং অন্যান্য পণ্য কৃষ্ণ সাগরে পাঠানোর অনুমতি সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করার বিষয়ে ইউক্রেনীয় কৃষকদের আশ্বস্ত করেছিলেন, যা জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় ১০ মিলিয়ন টনেরও বেশি খাদ্যপণ্য ইউক্রেনীয় বন্দর ছেড়ে একটি মনোনীত করিডোর ধরে খালাসের অনুমোদন করেছিল। এটির মেয়াদ ১৯ নভেম্বর শেষ হতে চলেছে। মঙ্গলবার একজন রাশিয়ান কূটনীতিক এটি পুনর্নবায়নের মস্কোর অসন্তোষ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে ক্রেমলিন এটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পশ্চিমা অস্ত্র এবং সাহায্য ইউক্রেনের মূল শক্তি। তাই, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধকে কীভাবে দেখছে, তা উপেক্ষা করার ধৃষ্টতা কিয়েভের নেই। তাই প্রকাশ্যে যতোই শর্ত জুড়ে দেন, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাপের মুখে উদ্ধত অবস্থান থেকে ক্রমেই সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন জেলেনস্কি। সূত্র: এপি, তাস।



 

Show all comments
  • Mobarak Mobarak ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৭:০৭ এএম says : 0
    এ যুদ্ধের জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেন দ্বায়ী। বিশ্ব বাসি আসুন আমরা তাদের ঘৃণা প্রকাশ করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Jainal Miazi ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    ন্যাটো ও আমেরিকা সহ, যাদের উস্কানির কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দুনিয়ার সকল দেশ একজোট হয়ে এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Bashir Ahmed ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 0
    আমেরিকার কারনে আজ বিশ্ব ব্যাবস্থার দুর্দশা
    Total Reply(0) Reply
  • Jainal Miazi ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    আমেরিকা উপর নির্ভরশীল হাওয়ার কারনে। ইউরোপ অসুবিধায় পরেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ