Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বের প্রধান সঙ্কটগুলোর অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন। সে কারণে ঘন ঘন ব্যাপক বন্যা, খরা, সামুদ্রিক ঝড়, ভূমিধস, মরুকরণ ও দাবানল সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে অগণিত মানুষের বর্ণনাতীত ক্ষতি হচ্ছে। সাগরেরও উচ্চতা বেড়ে উপক‚লবর্তী এলাকার সব কিছু ডুবে যাচ্ছে। তাতে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুৎ হচ্ছে। সর্বোপরি পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানি হচ্ছে। চলতি বছরে গরম আবহাওয়ার কারণে ইউরোপে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে হু। ইন্টারন্যাশনাল ক্রায়োসফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ নেটওয়ার্ক গত ৮ নভেম্বর জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের বরফের মজুত হারিয়ে যাবে এবং এ্যান্টার্কটিকা মহাদেশেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমাট বরফ গলে যাবে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহু দেশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সর্বনাশা কর্মের জন্য প্রধানত দায়ী কার্বন নিঃসরণ। ব্যাপক কার্বন উদগীরণের কারণে বায়ুমÐলের উঞ্চতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগ বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত, যা ইতোমধ্যেই ২৬বার হয়েছে। সূচনা ১৯৯৫ সালে বার্লিনে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মূল কাজ বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বের সব দেশকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। গত সম্মেলনসমূহে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের শীর্ষ নেতা এবং সুশীল, পরিবেশবিদ, ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি, ক‚টনীতিক, পর্যবেক্ষকগণ যোগদান করেছেন। পরিবেশ বাঁচাও নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। তাই সম্মেলনগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে। চুক্তিও হয়েছে। তাতে বিশ্বের প্রায় সব দেশই স্বাক্ষর করেছে। এর অন্যতম প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫ ও গøাসগো জলবায়ু চুক্তি-২০২১। কিন্তু এসব চুক্তি ও প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়। বরং স¤প্রতি কার্বন নিঃসরণের প্রধান হোতা কয়লার ব্যবহার অনেক বেড়েছে জ্বালানি সংকট ও মূল্য অত্যধিক হওয়ায়। উপরন্তু প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নেই, এমন দেশে প্রযুক্তি সরবরাহের অগ্রগতি তেমন হয়নি! তাই বায়ুমÐলের উঞ্চতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ডবিøউএমও-এর সা¤প্রতিক প্রতিবেদন মতে, শিল্পবিপ্লবপূর্ব সময়ের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে ১.১৫ ডিগ্রি। ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছরই তৈরি হচ্ছে উষ্ণতম বছরের নতুন রেকর্ড। কার্বন নিঃসরণ বাড়তে থাকায় বায়ুমÐলে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ এখন অতীতের চেয়ে বেশি। এছাড়া, ৩০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে। ফলে বিপদসীমা অতিক্রম করছে বরফ গলন, বৃষ্টিপাত, অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ। সংস্থাটির প্রধান অধ্যাপক তালাস বলেন, এর মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য উপক‚লীয় ও অপেক্ষাকৃত নিচু দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নইলে সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছাবে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়। লস এ্যান্ড ড্যামেজ কোলাবোরেশনও স¤প্রতি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপদাপন্ন ৫৫টি দেশে ইতোমধ্যেই (২০০০-২০২০ সাল) যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ ৫০,০০০ কোটি ডলারেরও বেশি। আগামী দশকে এ ক্ষতি আরো ৫০,০০০ কোটি ডলার বাড়বে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে এখনই কার্বন উদগীরন বন্ধ করা হলেও ক্ষতি অব্যাহত থাকবে বহুদিন। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস স¤প্রতি বলেছেন, ‘গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এখন ১০% বৃদ্ধির পথে এবং শতাব্দীর শেষ নাগাদ বর্তমান নীতির অধীনে তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। অর্থাৎ আমাদের গ্রহ এমন এক অবস্থায় যাচ্ছে, যেখানে জলবায়ু বিশৃঙ্খলাকে অপরিবর্তনীয় করে তুলবে এবং চিরতরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটাবে’। ইউনেস্কোও স¤প্রতি বলেছে, ‘২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রধান কিছু হিমবাহ অদৃশ্য হয়ে যাবে’। অন্যদিকে, জলবায়ু পরির্বতনে ক্ষতিগ্রস্ত গরীব দেশগুলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বছরে যে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল, তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এই দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এসব অন্যতম বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ৬৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। উপরন্তু যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে ৩-৪ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই অবস্থায় ২৭তম বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৭ শুরু হয়েছে মিসরের শার্ম-আল-শেখে। গত ৭ নভেম্বর শুরু হওয়া এ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটবে আগামী ১৮ নভেম্বরে। ইতোমধ্যেই এ সন্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের শীর্ষ নেতা/প্রতিনিধি এবং সুশীল, ব্যবসায়ীক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পরিবেশবাদীদের প্রতিনিধি, ক‚টনীতিক, পর্যবেক্ষক মিলে ২০ হাজারের অধিক মানুষ সমবেত হয়েছেন। তবে, সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী দেশ তথা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ অনেক দেশের শীর্ষ নেতা যোগদান করেননি। অবশ্য, তারাসহ অনেক দেশের শীর্ষ নেতা ১৫-১৬ নভেম্বর তাঁদের জাতীয় বিবৃতি দেবেন বলে জানা গেছে। এ সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ তথা ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়া ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নামে একটি নতুন তহবিল গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। এতদিন এটি কোনো সম্মেলনেই এজেন্ডাভুক্ত হতে পারেনি ধনী দেশগুলোর আপত্তির কারণে। অবশ্য এই এজেন্ডার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে এবং আরো কী কী বিষয়ে আলোচনা, সিদ্ধান্ত ও চুক্তি হবে তা এক সপ্তাহ আগে বলা কঠিন। তবে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের প্রধান আকাক্সক্ষা হচ্ছে, জলবায়ু ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনে পূর্ব প্রতিশ্রæতি বহাল তথা বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ও চুক্তি এবং তা বাস্তবায়ন।স্মরণীয় যে, কার্বন নিঃসরণের জন্য প্রধান দায়ী দেশগুলো হচ্ছে: ক্রমানুসারে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ভারত, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া। এ দেশগুলো ধনী ও উন্নয়নশীল দেশ। আর গরীব দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী খুব কম। তবুও তারা বৈশ্বিক বায়ুমÐলের উঞ্চতা বৃদ্ধির কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পূরণ করা দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়।

কপ-২৭ এর সম্মেলনে এ পর্যন্ত অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাকে অবশ্যই হয় ‘সহযোগিতা’ নতুবা ‘ধ্বংস’Ñ দুটোর একটিকে বেছে নিতে হবে। বিশ্ব এখন ‘জীবন মরণের লড়াইয়ে’ রয়েছে। বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে আমরা নরকের জলবায়ুর মহাসড়কে আছি, আমাদের পা দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে দ্রæত অর্থায়ন করতে হবে। আইএমএফের এমডি জর্জিভা বলেন, আমরা যদি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি টন কার্বনের গড় মূল্য কমপক্ষে ৭৫ ডলার নির্ধারণ করতে না পারি তাহলে ব্যবসা ও ভোক্তাদের স্থানান্তরিত করার জন্য প্রণোদনা তৈরি না করাই ভালো। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া উচিৎ। সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল বলেছেন, আমরা একটি সবুজ পরিবর্তনের পক্ষে, যা ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত। এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা চাই না, যা আমাদের উন্নয়নকে ব্যাহত করে। চীনের শীর্ষ জলবায়ু বিষয়ক দূত জেন হুয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা বাড়াতে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ধনী দেশগুলো অত্যধিক কার্বন নির্গমন করে অপরাধ করছে। আর তার শিকার হচ্ছে গরীব দেশগুলো! আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে ক্ষতিপূরণের জোর দাবি জানাচ্ছেন। আন্টিগা ও বারবুডার প্রধানমন্ত্রী ব্রাউন জলবায়ু ইস্যুতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেতে আন্তর্জাতিক আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় যথাযথ লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য নিরলসভাবে লড়াই চালিয়ে যাব। যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি বলেছেন, বাইডেন সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব হ্রাসে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেবে। এছাড়া, বিগত বছরের ন্যায় এ সম্মেলনেও অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে। এর মধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ড অন্যতম। সংস্থাটির প্রধান বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য তার সংস্থা আগামী ৫ বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। উপরন্তু ডিজেলচালিত রণতরীগুলোকে বিদ্যুচ্চালিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পার্শ্বসভাও হচ্ছে।

গত ৮ নভেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘ সমর্থিত একটি প্রতিবেদন মতে, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে চীন বাদে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশগুলোতে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে দুই লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ, এর প্রভাব হ্রাস ও অভিযোজনে এই বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই অর্থ ধনী দেশগুলো থেকে আসা উচিত। এর বাইরে ১.৪০ লাখ কোটি ডলার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া, জাতিসংঘের নিয়োগ করা এক উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন শিল্প ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান, আর্থিক ও বেসরকারি সংস্থার বেশির ভাগের নেট জিরো বা কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা দুর্বল। বাস্তবে এ হলো মূলত লোকদেখানো, যা ‘গ্রিনওয়াশিং’ নামে খ্যাত। এ ধরনের নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা কার্বন নিঃসরণের বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে অবমূল্যায়িত করছে। বিশেষজ্ঞরা নেট জিরো প্রতিশ্রæতির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য কিভাবে সুস্পষ্ট মানদÐ নির্ধারণ করতে হবে, তার ১০টি ব্যবহারিক পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে গত ৮ নভেম্বর। যা’হোক, ধরিত্রীকে বাঁচাতে হবে, বাসের উপযোগী করতে হবে। সে জন্য বায়ুমÐলের উঞ্চতা বৃদ্ধি কমাতে হবে, যার অন্যতম উপায় কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করা। কিন্তু সেটা একবারে সম্ভব নয়।তাই পর্যায়ক্রেম করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে, লাল গোশত খাওয়া কমাতে হবে। কারণ, পশু থেকে ব্যাপক মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরীব দেশকে সহায়তা হিসাবে ক্ষতিপূরণ তহবিলের অর্থ প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো থেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ফান্ডের অর্থ সংশ্লিষ্ট গরীব দেশগুলো যেন সঠিকভাবে পায় তা তদারকি করতে হবে জাতিসংঘকে। নতুবা বিশ্ব বাটপাররা সব চেটেপুটে খেয়ে ফেলবে। উল্লেখ্য, ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। এটা মূলত দুটি ক্ষেত্রে দেয়া হবে, যার একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো ও অন্যটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য নেয়া পদক্ষেপ। তবে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজে’র আওতায় যে অর্থ সহায়তার কথা বলা হচ্ছে, তা এর অতিরিক্ত। এই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়িত হলে গরীব দেশগুলোর কিছু কল্যাণ হবে। তাই এটি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। এছাড়া, গরীব দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের সাথে সাথে প্রযুক্তি দিয়েও সহায়তা করতে হবে। গরীব দেশগুলোর শুধু ক্ষতিপূরণ নিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না, নিজেদেরও কার্বন উদগীরণ বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি মানুষ ও প্রাণীকূলের জন্য চরম ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং জীবনরক্ষাকারী উপাদান অক্সিজেন সৃষ্টি করার প্রধান হাতিয়ার যে বৃক্ষ ব্যাপকভাবে তা রোপণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল সৃষ্টি করতে হবে সমগ্র বিশ্বেই।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

Show all comments
  • hassan ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৫:১২ পিএম says : 0
    যুদ্ধে প্রচন্ড প্রকৃতি গরম হয় এবং মানুষের ভোগের জন্য সশস্ত্র ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা হয়েছে এখান থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় এই জন্যই আজকে আমরা নিজেদের উপর নিজেরাই গজব টেনেছি এসব বন্ধ করতে হবে লোকদেখানো সম্মেলন করে কোন লাভ হবে না একমাত্র আল্লাহর আইন সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠা করলে তাহলে আল্লাহ সমস্যার সমাধান করে দেবেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন