Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্যানারিদূষণ থেকে নদী বাঁচাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাতে ঢাকার হাজারিবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল প্রায় ২ দশক আগে। ২০০৩ সালে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরীর কাছে নতুন আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। সিইটিপি বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনব্যবস্থাসমৃদ্ধ এই ট্যানারি শিল্পে নদী ও পরিবেশদূষণ রোধ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে ট্যানারি স্থানান্তর হলেও এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেড় দশকের বেশি সময় লেগে যায়। এর মধ্যে ঢাকার বুড়িগঙ্গা অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত একটি মৃত নদীতে পরিনত হয়েছে। বুড়িগঙ্গাকে বর্জ্য ও দূষণমুক্ত করতে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেও দূষণ ও বর্জ্যমুক্ত করা যায়নি। অন্যদিকে, সাভারের ট্যানারিশিল্পে স্থানান্তরের পর এক দশকেরও কম সময়ে আরেকটি নদী ধলেশ্বরী এখন দূষিত ও মৃতপ্রায় অবস্থায় উপনীত। শুধু এ নদীই নয়, হেমায়েতপুরের খাল, জলাভূমি এবং পরিবেশ ট্যানারিবর্জ্যে দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনসাধারণ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা যে নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল, তা বুড়িগঙ্গার মত দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

দেশের ট্যানারি শিল্পের রফতানি আয় বা শতাধিক ট্যানারি কারখানার কর্মসংস্থানের চেয়ে নদী ও পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে পরিবেশবিদরা মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পরিবেশ ছাড়পত্র না নেয়ায় ১৯টি ট্যানারি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরও এসব ট্যানারি চালু রেখে পরিবেশদূষণ করে যাচ্ছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এসব কারখানা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে, ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসব কারখানার মালিকদের আগে থেকে নোটিশ করা হলেও তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নোটিশ আমলে নেয়নি বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বলা বাহুল্য, ট্যানারি মালিকদের একগুয়েমি ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে বছরের পর বছর ধরে নোটিশ দিয়েও হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করা যায়নি। এখন সাভারে গিয়েও তারা পরিবেশগত ছাড়পত্র, বর্জ্যব্যবস্থাপনা বা পরিবেশগত নিরাপত্তার তোয়াক্কা করছে না। পরিবেশ ও নদীদূষণের দায়ে এসব ট্যানারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যানারি শিল্পের দূষণের কারণে শুধু বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীই নয়, দেশের অন্যান্য নদ-নদীও দূষিত হয়ে পড়ছে। ট্যানারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে না করে তা চালু করাও ছিল অপরিনামদর্শীতা। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, ট্যানারি শিল্প না থাকলে তা নতুন করে গড়ে তোলা যায়, নদী মরে গেলে তা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এ কারণে, ট্যানারি শিল্প নদীর কাছ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।

সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর ১৯টি কারখানা বন্ধ করে দিলেই ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য থেকে নদী ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। সেই সাথে অন্তত ১১২টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন করে উৎপাদন চালাচ্ছে। এসব কারখানাকে নিজস্ব বর্জ্যব্যবস্থাপনার শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযুক্ত ট্যানারি মালিকদের কেউ কেউ বিনা নোটিশে তাদের ট্যানারি বন্ধের অভিযোগ তুলেছেন। প্রায় ৭ বছর আগে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করলেও কখনো পরিবেশ অধিদফতরের লোক কারখানা পরির্দশনে যায়নি বলেও তারা দাবি করেছে। পরিবেশ ও নদী দূষণের সাথে জড়িত কোনো কারখানাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। তবে নদী ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপের উপর নির্ভর করে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সামগ্রিক ট্যানারি শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্বের চেয়েও নদী দূষণের ভয়াবহ পরিনতি ও সামগ্রিক ক্ষতিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তাদের এই মনোভাব যর্থাথ ও ইতিবাচক। শুধু ট্যানারি শিল্পই নয়, নদীর দূষণ ঘটাতে পারে এমন যে কোনো কলকারখানা নদী তীরে স্থাপনের ছাড়পত্র প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী সন্নিহিত এলাকায় ভারীশিল্প কারখানা, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডসহ মারাত্মক দূষণ সৃষ্টিকারি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। শিল্পোৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে অগ্রাহ্য করা যায়না। তবে দেশের কৃষিব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও মানুষের জীবনযাত্রায় দূষণমুক্ত নদীর গুরুত্ব অনেক বেশি। যেকোনো মূল্যে নদ-নদীকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে এবং বাঁচাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন