পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মোবাইলফোন অপারেটরদের গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর দিকেই নজর। সেবার মানোন্নয়নে তেমন আগ্রহ নেই। তাই দেখা যাচ্ছে, তাদের গ্রাহকসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সেই সুবাদে আয়ও বাড়ছে। আসলে আয় বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। এজন্যই গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর এত গরজ। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম অফার দেয়া হচ্ছে। গ্রাহকরাও তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তারা ঠকছে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট-কোনোটিতেই মানসম্পন্ন সেবা মিলছে না। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে গ্রামীণফোনের আয় হয়েছে ১১ হাজার ২৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রবি ও বাংলালিংকের আয়ও আগের চেয়ে বেড়েছে। অথচ, কোনো অপারেটরেরই সেবার মান বাড়নি বা বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাজে নেটওয়ার্কের কারণে মিউট কল বা কলড্রপ অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা পরিশোধ করে গ্রাহকের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র কলড্রপের কারণে বছরে গ্রাহকদের ক্ষতি হচ্ছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। টাকার বিনিময়ে সেবা কিনে গ্রাহকরা প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে। সেবার এই যাচ্ছেতাই অবস্থায় স্বয়ং ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী ইনকিলাবের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সেবার মান বাড়ানোর তাকিদ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব রীতিমত সাক্ষ্য দিয়েছেন এই বলে যে, তিন মিনিট কথা বলতে গিয়ে তিনি দুইবার কলড্রপের শিকার হয়েছেন। বলা বাহুল্য, গ্রাহকসেবার এই দুর্দশার দায় মন্ত্রী ও সচিব এড়িয়ে যেতে পারেন না। পারেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। মোবাইলফোন গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবার দাবি নতুন নয়। শুরু থেকেই সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আজও তার অবসান ঘটেনি। মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের তরফে বিভিন্ন সময় মিউট বা কলড্রপ বন্ধ এবং ইন্টারনেটের গতি যথাযথ পর্যায়ে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অথচ, বাস্তবে উভয় ক্ষেত্রে গ্রাহকদের হয়রানি ও ক্ষতি বেড়েছে। সেবার অবনমন ঘটেছে।
দেশের মোবাইলফোন অপারেটরদের গ্রাহকসংখ্যা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। সেই তুলনায় তাদের সেবাসক্ষমতা বাড়েনি। কত মেগাহার্টজে কত সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেয়া যাবে, তার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)। সেই মানদণ্ড মতে, প্রতি মেগাহার্টজে ৫ লাখ গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। বর্ণিত মানদণ্ড দেশের কোনো মোবাইলফোন অপারেটরই মানে না। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গ্রামীণফোন প্রতি মেগাহার্টজে সেবা দিচ্ছে ১৭ লাখ গ্রাহককে। আর রবি দিচ্ছে ১২ লাখ ও বাংলালিংক ৯ লাখ গ্রাহককে। খোদ বিটিআরসির বক্তব্য, কলড্রপের কারণে একদিকে আর্থিক ক্ষতি অন্যদিকে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আর্থিক ক্ষতি এবং বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার অবসানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বিটিআরসি তাহলে কী করছে? গ্রামীণফোনের নেটওয়াকের পরিধি, গ্রাহকসংখ্যা, আয়-সবই বেশি। সেবা অবনমনের দিক থেকেও গ্রামীণফোন শীর্ষে। মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তার নতুন সিম বিক্রী বন্ধ করার পর পুরানো সিম বিক্রীও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হয়তো অন্যান্য অপারেটরের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, তাতে কি সেবার মান বাড়বে? সেবার মান বাড়াতে এর চেয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। প্রতিটি মোবাইলফোন অপারেটর মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এক্ষেত্রে কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক তাদের বিপুল অংকের লভ্যাংশ প্রতি বছর নিয়ে যায়। এ অর্থ এদেশের ধনী-দরিদ্র সকল গ্রাহকের দেয়া অর্থ। সঙ্গতকারণেই তারা বিনিময়ে মানসম্পন্ন সেবা আশা করে। ভয়েস কলসেবার মতো ইন্টারনেট সেবাও অবনত মানের। সব মোবাইলফোন অপারেটরের ফোরজি সেবা দেয়ার কথা থাকলেও কোনো অপারেটরেই নির্ধারিত ন্যূনতম ডাউনলোড গতি পাওয়া যায় না। গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ৩৯টি উপজেলায় বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজি সেবার তো প্রশ্নই ওঠে না, টুজি সেবাও পাওয়া যায় না।
মোবাইলফোন অপারেটররা তাদের গ্রাহকসংখ্যা বাড়াবে, মার্কেটের আকার বাড়বে, আয় বাড়াবে, কাড়ি কাড়ি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাবে আর মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করবে না, এটা হতে পারে না। অবশ্যই তাদের কাক্সিক্ষত সেবাদানে বাধ্য করতে হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, সেবার মান বাড়াবার জন্য ২০১৮ সালে স্পেকট্রাম দেয়া হয়। কিন্তু এখনো সেগুলো রোলআউটই করেনি। তাহলে সেবার মানোন্নয়ন হবে কীভাবে? এই প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীর এক ধরনের হতাশা ও অপারগতা প্রকাশিত হয়েছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে, স্পেকট্রাম দেয়াই যথেষ্ট নয়, তা কাজে লাগছে কিনা, সেটাও দেখা আবশ্যক। কীভাবে গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা দেয়া যায়, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে। অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা যত কঠোরই হোক মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়কেই সেটা করতে হবে। এ ব্যাপারে আর গড়িমসি বা সময়ক্ষেপণ করা হবে না বলেই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।