পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সবার আগে খাদ্য। খাদ্য ছাড়া জীবন একদিনও চলে না। যতদিন জীবন আছে ততদিন খাবার গ্রহণ করতেই হবে এবং তা শরীরের চাহিদা মতো। যে খাত এই খাবার উৎপাদন করে সেই খাতকে আমরা কৃষিখাত বলি। সুতরাং, কৃষিখাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে এবং কৃষির উন্নয়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কৃষিকাজের আওতায় আনতে হবে। কৃষি মানে কেবল ধান, গম কিংবা ভুট্টার চাষ নয়। প্রতিটি খাদ্যপণ্যই কৃষির অন্তর্ভুক্ত। আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ, লবণ এবং যাবতীয় মসলা দ্রব্যের সবই কৃষিপণ্য। নানা রকম তরকারি, ডাল, শাকসবজি, ফলমূল, আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, আমড়া, আনারস সবই কৃষিপণ্য। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি, মাছ সবই কৃষিজাত এবং এদের থেকে প্রাপ্ত মাছ, মাংস, ডিম, দুধÑ সবই কৃষিপণ্য। সয়াবিন, সরিষা, সানফ্লাওয়ার, পামওয়েলÑ সবই কৃষিজাত পণ্য। সুতরাং সকল ধরনের কৃষিজাতপণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে এবং চাহিদার সাথে উৎপাদনের ব্যালেন্স করতে হবে। দেশের সকল জমির উর্বরতা এবং উৎপাদন গুণাগুণ এক নয়। অর্থাৎ সব জমি সব ফসলের জন্য উপযুক্ত নয়। এক এক জমি এক এক ফসলের জন্য উপযুক্ত। তাই যে জমি যে ফসলের জন্য উপযুক্ত সেই জমিতে সেই ফসলের চাষ করতে হবে। যে জমিতে ধান ভালো হয় সেই জমিতে ধান, যে জমিতে গম ভালো হয় সেই জমিতে গম আর যে জমিতে তরকারি ভালো হয়, সেই জমিতে তরকারির চাষ করতে হবে। যে জমিতে আম ভালো হয়, সেই জমিতে আমের চাষ করতে হবে। যে জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়, সেই জমিতে লবণ উৎপাদন করতে হবে। যেখানে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু লালন পালনের সুযোগ রয়েছে, সেই এলাকায় এসব গবাদি পশু লালন-পালন করতে হবে। যেখানে হাসঁ-মুরগি লালন পালনের সুযোগ রয়েছে, সেই জমিতে হাঁস-মুরগির লালন-পালন করতে হবে। আর পুকুর, জলাশয়, হাওর লেকসহ যে সব জায়গায় মাছ চাষের সুযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করতে হবে। পাহাড়ি ভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। আর বসত ভিটায়, বাড়ির আশেপাশে যেসব খালি জায়গা রয়েছে সেসব জায়গায় বিভিন্ন জাতের ফলমূল, তরকারি, শাকসবজির চাষ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি গাছের চারা হলেও রোপণ করতে হবে।
কৃষি সেক্টরের তদারকি, উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদানের জন্য দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় রয়েছে। কৃষিখাতের উন্নয়নের স্বার্থে এসব মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষির উন্নয়নে এসব খাতে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ দিতে হবে, তাদের দেশে-বিদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে। একই সাথে কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষককে ভালো এবং উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করতে হবে। ভালো এবং উন্নত বীজ ছাড়া কখনো ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। একই সাথে কৃষিজাত পণ্য এবং প্রাণীকে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এবং উৎকৃষ্টমানের ঔষধ এবং কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে। একজন কৃষক প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যেন সব ধরনের সহযোগিতা পায়, সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় কৃষি সেন্টার চালু করা হোক। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এর শাখা থাকতে হবে, যাতে করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষকরা এই সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক সব ধরনের সহযোগিতাপয়।
কৃষিকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আমরা কৃষক বলি। আর একজন কৃষকই হচ্ছে সত্যিকারের উন্নয়নের কারিগর। যে বৃষ্টিতে ভেজে, রোদে শুকায় এবং শীতে কাঁপে। সর্বদাই সে মাঠে কাজ করে। তার কঠোর এবং অমানবিক পরিশ্রমে ফসল ফলে। তার উৎপাদিত ফসলেই সবার মুখে আহার জোটে। কৃষকরাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এবং তারাই উৎপাদন করে বেঁচে থাকার মূল উপাদান খাদ্য। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক।
কৃষিকাজের জন্য একজন ব্যক্তিকে সব সময় নিয়োজিত হতে হবে, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। অথবা কৃষকরাই যে কেবল কৃষিকাজ করবে, তাও কিন্তু নয়। যে কোনো ব্যক্তি কৃষিকাজ করতে পারে। পুরুষ-মহিলা সবাই করতে পারে। একজন ব্যক্তি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী বা যে পেশায়ই নিয়োজিত থাকুক না কেন, তার হাতে কিছু না কিছু সময় থাকে। সেই সময়টুকু সে কৃষি কাজে ব্যয় করতে পারে। তাতে তারও লাভ, দেশেরও লাভ।
লেখক: প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।