মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের ৪৫ লাখ মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন। রাজধানী কিয়েভ শহরের মেয়র শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউক্রেন দাবি করেছে, বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট অবকাঠামোয় রুশ হামলার জেরে কিয়েভ কার্যত অন্ধকারে রয়েছে।
মেয়র ভিতালি ক্লিৎচকো বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্ধকার ও ঠাণ্ডার মধ্যে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে মানুষ সত্যিকার অর্থেই ভীত। সামনে আরো কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়ে কিয়েভের বাসিন্দাদের আবারও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনুরোধ জানান তিনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ক্রমাগত হামলা করে যাচ্ছে রাশিয়া। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসন্ন শীতে ইউক্রেনের ভোগান্তি বাড়াতে এসব হামলা করছে তারা। ইউক্রেনে ক্রমাগত হামলার মধ্যে গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, আরো ১৮ হাজার রুশ সেনাকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। মস্কোর লক্ষ্য ছিল, যুদ্ধে তিন লাখের মতো রিজার্ভ সেনা নিয়োগ করা।
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় রুশ-নিয়ন্ত্রিত শহর খেরসন থেকে বেসামরিক নাগরিকদের দ্রুত নিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খেরসনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে বর্তমানে রুশ বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন শুক্রবার মস্কোর রেড স্কয়ারে দেয়া এক ভাষণে এ নির্দেশ দেন। এসময় তিনি আরও বলেন, খেরসনের বিপজ্জনক যুদ্ধ-কবলিত এলাকাগুলো থেকে বেসামরিক লোকদের অবিলম্বে সরিয়ে আনতে হবে। পুতিন বলেন, খেরসনে এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিযান চালানো হবে। কাজেই বেসামরিক নাগরিকদের কষ্ট দেয়া যাবে না। এ বক্তব্যের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন খেরসনে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিলেন।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে খেরসন থেকে হাজার হাজার নাগরিককে বের করে নিয়ে এসেছে। খেরসন শহরকে ‘দুর্গে’ পরিণত করা হবে বলেও মস্কো ঘোষণা দিয়েছে। ইউক্রেন দাবি করছে, খেরসনের অধিবাসীদের জোর করে শহর থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রথমবার রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহের স্বীকারোক্তি ইরানের : প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহের কথা স্বীকার করেছে ইরান। গতকাল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দোল্লাহিয়ান বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ যুদ্ধ শুরুর আগেই মস্কোকে ইরানের নির্মিত ড্রোন সরবরাহ করা হয়েছে।
ইউক্রেন ও পশ্চিমারা কয়েক মাস ধরে অভিযোগ করে আসছে, যুদ্ধে ইরানের নির্মিত ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া। তবে শনিবারের আগ পর্যন্ত ইরান এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ইরানি ড্রোন ব্যবহারের কথা স্বীকার করেনি। তেহরানে সাংবাদিকদের ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে আমরা অল্প কয়েকটি ড্রোন রাশিয়াকে সরবরাহ করেছি।
এর আগে ইরানি কর্মকর্তারা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন। গত সপ্তাহের শুরুতেই জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূত সাইদ ইরভানি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধে ইরানের অবস্থানকে নিরপেক্ষ হিসেবে দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, ইউক্রেনে বেসামরিকদের ওপর হামলায় ইরানি ড্রোন রাশিয়া ব্যবহার করছে কিনা তা তদন্ত করার জন্য।
গতকালরাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহের কথা স্বীকার করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, ইউক্রেনে নিজেদের ড্রোন ব্যবহারের বিষয়ে তারা অবগত নয়। ইরান সংঘাত থামাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করছে তা সম্পর্কে ইউক্রেনের কাছে যদি কোনও প্রমাণ থাকে তাহলে সেটি আমাদের দেয়া উচিত। যদি প্রমাণ হয় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়া ইরানের ড্রোন ব্যবহার করছে, তাহলে এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনও ভিন্নতা থাকবে না।
কিয়েভকে অস্ত্র না দিয়ে পশ্চিমের উচিত আলোচনায় বসা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনোভ গতকাল বলেছেন, পশ্চিমারা একটি ভুল নীতি অনুসরণ করে চলেছে। তাদের ধারণা ইউক্রেনের পরিস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রে সমাধান করা যেতে পারে তবে বাস্তবে এটি কীভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তা বিবেচনা করা উচিত।
‘ইউক্রেনে অস্ত্রের অতিরিক্ত সরবরাহের বিষয়ে আমেরিকান প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, আমাদের তথাকথিত অংশীদাররা একটি ভুল নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিশ্বাস করে যে সমস্যাটি যুদ্ধক্ষেত্রে সমাধান করা যেতে পারে এবং আরও শক্তি ও উপায় ব্যয় করতে থাকে। এখন তারা রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সশস্ত্র বাহিনী সংগ্রহ করছে,’ কিয়েভের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার একটি নতুন প্যাকেজ সম্পর্কে মন্তব্য করতে সাংবাদিকদের আন্তোনভ বলেছেন।
‘উন্নয়নশীল পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক,’ তিনি বলেছিলেন। ‘আসলে, ইউক্রেনে, ইউক্রেনের মাটিতে, আমরা ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে নয়, সম্মিলিত পশ্চিমের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যারা রাশিয়ার ভিত্তিকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে, আমাদের নিঃশেষ করতে, আমাদের সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সংস্থানকে শূন্য করার চেষ্টা করে এবং এমন একটি পরিস্থিতির পর্যায়, যেখানে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সমানভাবে আলোচনা করার সুযোগ পাবে না,’ কূটনীতিক জোর দিয়েছিলেন।
তবে, আন্তোনভের মতে, ওয়াশিংটন যাই করার চেষ্টা করুক না কেন রাশিয়া জিততে পারবে। ‘আমাদের অন্য কোন উপায় নেই এবং কোন সন্দেহ নেই যে আমরা সঠিক কারণ অনুসরণ করব এবং আমরা জিতব,’ তিনি উল্লেখ করেছেন। আন্তোনভ বলেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রে সমাধান করা যায় না এবং পশ্চিমাদের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে নজর দেয়া।
‘আমাদের আজকে কিয়েভকে অতিরিক্ত অস্ত্র দিয়ে পাম্প করার কথা ভাবতে হবে না, বরং কীভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। যুদ্ধক্ষেত্রে সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করা অসম্ভব,’ তিনি বলেন। এর আগে পেন্টাগনের ডেপুটি মুখপাত্র সাবরিনা সিং শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে, সহায়তার নতুন প্যাকেজের অধীনে, ইউক্রেন ৯০টি সংস্কার করা টি-৭২ ট্যাঙ্ক, ১,১০০টি ফিনিক্স ঘোস্ট কামিকাজে ড্রোন, হক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অস্ত্র পাবে। সূত্র : তাস, এপি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।