Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাসড়কে চলাচল নিরাপদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের অগ্রগতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের বিকল্প নেই। সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকে এ খাতে। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু নির্মাণ ও উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এতে দিন দিন সড়ক-মহাসড়কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আসছে। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন ও মানুষের যাতায়াতও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনরাত সবসময়ই সমানতালে সড়কগুলো ব্যস্ত থাকে। সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সড়ক-মহাসড়ক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেলেও এতে যানবাহন ও যাত্রী চলাচলের যে নিরাপত্তা প্রয়োজন, সেই নিরাপত্তা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। হাইওয়ে পুলিশ থাকলেও তাদের পরিধি বৃদ্ধি পায়নি। সেই আগের অবস্থায়ই রয়ে গেছে। আধুনিক ও বিস্তৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত না হওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীরা অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই যাতায়াত করছে। সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই, খুন নতুন কিছু না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বাসের অভ্যন্তরে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ওঁৎ পেতে যানবাহন আটকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। বাধা দিতে গেলে মারধর এমনকি খুনও করছে। দেশের প্রায় সবকটি মহাসড়কের কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এতে মহাসড়কে যাতায়াতের বিষয়টি আতঙ্কজনক হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে পুলিশ ডাকাতদলের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

মহাসড়কে নানা কৌশলে ডাকাতদল যানবাহনে ডাকাতি করে থাকে। কখনো সড়কের উপর গাছ ফেলে, কখনো বাসে উঠে, কখনো চলন্ত গাড়িতে রড নিক্ষেপ করে বিকট শব্দ সৃষ্টি করে বাস থামিয়ে ডাকাতি করে। এ ধরনের প্রায় ১৫-২০টি ডাকাত দল মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে বলে পত্রিকান্তরে জানা যায়। এক্ষেত্রে কিছু বাস ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরেরও দায় রয়েছে। তারা রাতে মহাসড়কের নানা জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায়। এ সুযোগে ডাকাতদলও বাসে চড়ে বসে। এসব ঘটনা নতুন না হলেও প্রতিকার না হওয়ায় তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে কারা ডাকাতি করে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবগত থাকলেও তাদের দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। ঘটনা ঘটার পর কিছু ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ক্ষেত্রে উদাসীন। ফলে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রী নিরাপত্তা নাজুক হয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নগর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র একধরনের নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধের ধরণ ও অপরাধী দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ভীতিকর পরিবেশ বিস্তৃত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষ এখন অনিরাপদবোধ করছে। অপরাধ ও অপরাধী দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সক্ষমতা নেই, তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ। অনেক অসাধ্য অপরাধ উদ্ঘাটনে তার সক্ষ্যমতা প্রমাণিত। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বছরের পুরনো মামলার আসামী ধরার নজির সৃষ্টি হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তার নিরবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণের কারণে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অপরাধ ও অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে তার সাফল্য অধিক। বরাবরই এ অভিযোগ রয়েছে, সরকার সামাজিক ও নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পুলিশকে যতটা ব্যবহার করে, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। পুলিশকে রাজনীতিকরণের কারণে নাগরিক নিরাপত্তায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি দমন ও পীড়নে পুলিশের ব্যবহার থেকে সরকার বের হতে পারেনি। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ যতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম সক্রিয় দেখা যায়। ফলে পুলিশ কমিশনারকেও নাগরিকদের সেবায় পুলিশকে নিবেদিত হওয়া এবং নাগরিকদের পুলিশের সেবা গ্রহণের জন্য আহ্বান করতে হচ্ছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পুলিশের সেবা নিতে নাগরিকদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। অথচ পুলিশের মূল দায়িত্বই হচ্ছে, নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোথায় নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ও যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পুলিশকে অধিক তৎপর ও সতর্ক থাকতে হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, পুলিশের এ ধরনের তৎপরতার অভাবে মহাসড়কগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পুলিশের যে মূল দায়িত্ব নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তা পালনের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটছে। নাগরিকরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে পুলিশের সেবা নিতে উৎসাহী হয়ে উঠে তা নিশ্চিত করা জরুরি। পুলিশকে জনসেবা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা উচিৎ। মহাসড়কে যে নিরাপত্তাহীনতা ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা পুলিশি তৎপরতার অভাবেই হয়েছে। এক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশকে আরও আধুনিক ও সক্রিয় হতে হবে। সরকারকে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক যেসব এলাকার মহাসড়কে ডাকাত ও অন্যান্য অপরাধী সক্রিয়, তাদের চিহ্নিত করে অভিযান চালিয়ে নির্মূল করতে হবে। যেকোনো উপায়ে মহাসড়কসহ দেশের সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন