Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অন্ধকারে

নিখোঁজ ৭ তরুণের সন্ধান মেলেনি

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বনানী থেকে একসঙ্গে নিখোঁজ হয়  চার তরুণ। তারপর  আরো ৫ জন নিখোঁজ হয় দেশের ভিভিন্ন এলাকা থেকে। তাদের মধ্যে ২ জনের সন্ধান মিললেও অন্যদের কোনো হদিস মিলেনি। নিখোঁজ ওই ৭ তরুণ কোথায় আছে, তারা আত্মগোপনে নাকি কেউ ধরে নিয়ে আটক করে রেখেছে এর কিছিুই জানেন না তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি। নিখোঁজ ৭ তরুণের ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছে র‌্যাব পুলিশ। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে  প্রায় একই সময়ে  ওই ৭ যুবক নিখোঁজ  হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা কোথায় অবস্থান করছে, তা জানা যায়নি। তাদের কোনো সন্ধান পাচ্ছে না পুলিশও। নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজনের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের জীবনাচরণ বিশ্লেষণ করে নানারকম সংশয় তৈরি হয়েছে পুলিশের মনে।
জানতে চাইলে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছে, নাকি কেউ তাদের তুলে নিয়ে গেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।’
এদিকে নতুন করে নিখোঁজ যুবকদের নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তারা আত্মগোপনে থেকে কোথাও জঙ্গি হামলা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাবনা, রংপুর ও বরিশাল থেকে ৯ তরুণ নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে বরিশালের একজন ও রংপুরের একজন বাসায় ফিরে গেছে। গত ১৩ দিনেও বাকি সাত জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা যেকোনও মূল্যে তাদের সন্তানদের ফেরত পেতে চান। কেউ যদি স্বেচ্ছায় ‘ভুল পথে’ গিয়েও থাকে, তবে তাদের উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়ায় সংশোধনের সুযোগ চান।
পুলিশ জানায়, ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একযোগে চার তরুণ নিখোঁজ হয়। তারা হলো- সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, চার জনের একযোগে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে সাফায়েতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ঘেঁটে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে সন্দেহ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য জানাতে পারেননি তারা। পাবনা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র জাকির ফিরে  এলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে তনয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় জঙ্গিদের ভাষায় ফিদায়ি হওয়া বা হিজরত করার আগ পর্যন্ত তারা নিজেদের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পরার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের বুঝতে দেয় না। এ কারণে তারা ধর্মীয় অনুশাসনও যথাযথভাবে পালন করে না। একযোগে চার তরুণ নিখোঁজের ক্ষেত্রে সাফায়েতের মাধ্যমে বাকি তিন তরুণ ‘মোটিভেটেড’ হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
এদিকে  নিখোঁজ সুজনের ভাই সুমন জানান, ‘সুজন নিখোঁজের পর থেকে পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছে।’ সুমন বলেন, ‘সে কোথায় আছে কীভাবে আছে আমরা কিছুই জানতে পারছি না। পুলিশও আমাদের কোনো ‘আপডেট’ জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের পরিবারের সবাই অনেক দুশ্চিন্তায় রয়েছে।’
নিখোঁজ মেহেদীর চাচা মাহবুব হাওলাদার বলেন, ‘১৩ দিন হয়ে গেল, চারটা ছেলে কোথায় গেল কেউ খুঁজে বের করতে পারছে না। তারাতো একদিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে যায়নি। তাদের পাসপোর্টও নেই। তাহলে কেন খুঁজে বের করা যাচ্ছে না?’ মাহবুব হাওলাদার আরও বলেন, ‘যদি ওরা স্বেচ্ছায় কোনও ভুল পথে গিয়ে থাকে তবুওতো তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আনা উচিত। বের করে এনে আইনি প্রক্রিয়ায় যা করার করবে। এতে পরিবারের সদস্যরাও শাস্তি পাবে যে, ছেলে ভুল করেছে তার শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু এসবের কিছুইতো দেখছি না।’
৫ ডিসেম্বর সাইদ আনোয়ার খান নামে বনানী এলাকার আরেক তরুণ নিখোঁজ হয়। ও লেভেল সম্পন্ন করা এই তরুণ কলাবাগানে একটি ক্যারাতে প্রতিযোগীতায় ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ শেষে আর বাসায় ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, নিখোঁজ সাইদের জীবনাচরণে তারা ‘সন্দেহজনক’ কিছু তথ্য পেয়েছেন। এসব সূত্র ধরেই তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে।
সাইদের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিখোঁজের পর থেকেই সাঈদের বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন। তারা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু ১৩দিন পেরিয়ে গেলেও সাইদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাইদ আনোয়ার খানের মা বলেন, ‘যে ছেলে ছোট ভাইকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় বেড়াতে যাবে বলে সব ধরনের প্রস্ততি নিয়েছিল, সেই ছেলে স্বেচ্ছায় বেড়িয়ে যেতে পারে না। ওকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে বলে সন্দেহ তার।’
সাইদ আনোয়ারের মা বলেন, ‘ঘটনার দিন ছেলে ক্যারাতে ক্লাসে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে সে নিখোঁজ হয়েছে। সে যদি স্বেচ্ছায় চলে যেত, তাহলে তার ক্যারাতে ক্লাসে যাবার প্রয়োজন ছিল না। সে এমনিতেই বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে যেতে পারতো।’
সাইদের মামা ইকরাম কবির জানান, ‘আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা কোনও আপডেট দিতে পারছে না।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৩০ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটার বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হওয়া কেয়ার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ইমরান ফরহাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। ইমরানের ফুফাতো ভাই মামুন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে আমরাতো কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। র‌্যাব-পুলিশ কেউ আমাদের কোনও আপডেট দিতে পারছে না। পরিবারের সদস্যরা সবাই ভেঙে পড়েছে।’
গত ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর রংপুর ও পাবনা থেকে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্র তানভীর আহম্মেদ তনয় ও জাকির হোসেন বিপ্লব নিখোঁজ হয়। দুজনেরই বাড়িই রংপুরে। পাবনা মেডিক্যাল কলেজের এক নম্বর ছাত্রাবাসের পাশাপাশি কক্ষে থাকত তারা। গত রবিবার সকালে জাকির বাড়ি ফিরেছে। সে রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছে তার ভাই জাহাঙ্গীর। তবে তনয় এখনও বাড়ি ফেরেনি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, তনয়কে উদ্ধারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।জঙ্গিবাদের প্রাথমিক পর্যায়ে তনয়ের যোগসূত্র রয়েছে বলেও ওই সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া, ৩০ নভেম্বর বরিশালের আগৈলঝারা থেকে নিখোঁজ হওয়া নেয়ামতউল্লাহকে গত শুক্রবার রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে ঢাকায় পালিয়ে এসে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছিল এই মাদ্রাসাছাত্র।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিখোঁজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ