Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাস উত্তোলনে সুখবর: চাহিদা না মিটলেও সঙ্কট কিছুটা কাটবে

ভোলায় দৈনিক ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস মিলেছে : প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:৩০ এএম

গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাসাবাড়িতে চুলাও জ্বলে না দিনের বেশির ভাগ সময়। যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ করা সিএনজি স্টেশন দিনে ৫ ঘন্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে গ্যাস নিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগছে দেশের মানুষ। সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজালেও নতুন নতুন গ্যাস কুপ খনন, গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহে উদ্যোগ নেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও বঙ্গাপোসাগরে বিপুল পরিমান গ্যাসের মজুদ রয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার সাগরে তাদের অংশে গ্যাসের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের ব্যপক বিনিয়োগের মাধ্যমে বিপুল গ্যাস উত্তোলন করে ব্যবহারের চীনে রফতানি করছে। অথচ বাংলাদেশে কাগজে কলমে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা ‘কাগজে কলমে’ করলেও সাগরের গভীরে গ্যাস অনুসন্ধানে ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার হর্স পাওয়ারের রিগ প্রয়োজন সেটাই নেই। বর্তমানে গ্যাস অনুসন্ধানের যে রিগ রয়েছে তা এক হাজার, দেড় হাজার ও দুই হাজার হর্স পাওয়ারের রিগ।

গ্যাসের মজুত, সরবরাহ ও অনুসন্ধানে যখন বেহাল অবস্থা; মিলকারখানা বন্ধ হচ্ছে তখন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কিছুটা হলেও আশার বানী শোনালেন। তিনি গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ভোলার শাহবাজপুরের টবগী-১ অনুসন্ধান ক‚পে দৈনিক ২ কোটি ঘনফুট হারে গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা অনুসন্ধান ক‚পে এখন থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করতে পারবো। গ্রাহক পর্যায়ে এর মূল্য ১১ টাকা করে ধরলে মোট ৮ হাজার কোটি টাকার মতো দাঁড়াবে। আর যদি এলএনজির মূল্য ধরি তাহলে অনেক মূল্য হবে এটার। তিনি আরো জানান, পর্যায়ক্রমে ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ দুটি ক‚প আগামী বছর জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করতে পারবো। আশা করছি জুনের পরে এ দুই ক‚প থেকে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা পাবো।

চাহিদার তুলনায় এ গ্যাস খুবই সামান্য। প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন এবং বাজারজাত করার কাজ করা পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেয়া ২০২২ সালের জুলাই মাসের তথ্যে দেখা যায়, দেশে উত্তোলনযোগ্য আর সম্ভাব্য মিলে মোট মজুদের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৩ টিসিএফ। এর মধ্যে আবিষ্কৃত ২৮ টিসিএফ গ্যাসের মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যবহার করা প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ সাড়ে ১৯ টিসিএফের বেশি। পেট্রোবাংলার গত ৩০ অক্টোবরের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই মুহ‚র্তে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৭০টি ক‚প রয়েছে, এর মধ্যে ৬৯টি ক‚প থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে দেখা যায় যে গ্যাস মজুত রয়েছে এবং উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে আগামী ৯ বছর এ গ্যাস চলবে। তবে উন্নয়নের দিকে নজর দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে অনাগ্রহী সরকারের প্রতিমন্ত্রীর তথ্য মতে, গ্যাস কুপ খনন ও উত্তোলন যে শুরু হয়েছে সেটা সুখবর।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০২২-২০২৫ সময়কালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার ক‚প খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্সের তত্ত¡াবধানে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান ক‚পটি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ৫২৪ মিটার গভীরতায় খনন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ক‚প খননের পর ক‚পে সম্ভাব্য গ্যাস মজুত ও উৎপাদন হার নিরূপণে গৃহীত কারিগরি পরীক্ষামূলক টেস্টিং (ডিএসটি) কার্যক্রম গত ১ নভেম্বর সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এতে দেখা যায়, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড হতে টবগী-১ ক‚প এলাকাটি আনুমানিক ৩.১৭ কিমি দূরে অবস্থিত। ভ‚তাত্তি¡ক তথ্যাদি এবং ডিএসটি রিপোর্ট অনুযায়ী এ অনুসন্ধান ক‚পে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত প্রায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। দৈনিক গড় ২ কোটি ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় ওই ক‚প হতে ৩০-৩১ বছর গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। টবগী-১ ক‚পে গ্যাসের মজুত বিবেচনায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা এলএনজি আমদানি মূল্য বিবেচনায় বহুগুণ। আগামী ৭ নভেম্বর ক‚পটি দ্রæত উৎপাদনক্ষম করার লক্ষ্যে ক‚পের কমপ্লিশন এবং ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

এ প্রকল্পের আওতায় আগামী বছরের জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো ২টি ক‚প (ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২) খনন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ৩টি ক‚প হতে সর্বমোট দিনে ৪৬ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। ##

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ