পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শীতের শুরুতেই চরম গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীতে রান্না-বান্না করার ক্ষেত্রে গ্যাসের যেমনি তীব্র সঙ্কট তেমনি শিল্পাঞ্চলেও গ্যাস সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না বিতরণ কোম্পানী। এব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, সরকার বাসা-বাড়িতে পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহারকে আরো নিরুৎসাহিত করছে। অপরদিকে এলপিজি ব্যবহারে কোন নীতিমালা না থাকায় এ সংক্রান্ত কোম্পানীগুলো যে যেমন খুশি সিলিন্ডারের দাম হাঁকছে। এই বাস্তবতায় ভোক্তা, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সব পক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বাড়াবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। কত শতাংশ দাম বাড়বে। সব হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করেছে কমিশন। এখন শুধু দিনক্ষণ দেখে ঘোষণা দেয়ার পালা। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, পেট্রো বাংলা ও এর অধীন কোম্পানীগুলো প্রায় প্রতিটিই লাভজনক। তাদের তহবিলে ২৫ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে, তাই গ্যাসের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এতে অর্থনীতি ও সমাজজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এদিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দাম বৃদ্ধির জন্য গ্যাস কোম্পানীগুলোর যুক্তি হচ্ছে গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকার শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের দাম থেকে বর্তমানে সরকার প্রায় ৮১ শতাংশ অর্থ শুল্ক ও কর হিসেবে আয় করছে। এই কর ও শুল্ক হার অর্ধেক কমানো হলেও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
গ্যাস সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকদিন থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে শীত এলে প্রতিবছরই দেখা যায় সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এর পিছনে মূল কারণ হচ্ছে বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি। পাইপ লাইনের ব্যস্থাপনাগত ত্রুটি এর মধ্যে অন্যতম। কার্যত এর যেমন কোনো উন্নতি হয়নি, তেমনি উন্নতির কোন প্রয়াস রয়েছে, তেমন কোন লক্ষণও স্পষ্ট নয়। সে বিবেচনায় বলা যায়, গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। হয়ত তারা মনে করছে এভাবেই চলবে। তাই এদিকে নজর দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু নিত্যদিনের প্রয়োজনে গ্যাসের কোন বিকল্প নেই, তাই মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটি তাদের ইচ্ছায় পরিণত করেছে। অনেকটা জিম্মির মতো। বাস্তবতা হচ্ছে, কেন দাম বাড়ানো হবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কোন সন্তোষজনক কারণ দেখাতে পারেনি। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গ্যাসের দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এরমধ্যে আবাসিক চুলার দাম বর্তমানের চেয়ে ২০০ টাকা বাড়তে পারে বলে বলা হয়েছে। সিএসজির দাম আরো একটু বেশি বাড়বে। বর্তমান বছরে গ্যাস বিল আদায় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৩ শতাংশ। গ্যাস বিক্রি থেকে কোম্পানীগুলোর মুনাফার ওপর দিতে হয় ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ট- যা মোট রাজস্বের ২ শতাংশ। গ্যাসের উপর যে সম্পদমূল্য ধরা হয়েছে, তা থেকে ১৬ শতাংশ এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৫ শতাংশ কাটা হয়। বলা যায়, সরকারের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সূত্র ধরে মাত্রাতিরিক্ত করারোপ করা হয়েছে, হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে সব খাতেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে সেবার মানের কোন উন্নয়ন না ঘটিয়ে এবং সংকটের কোন সমাধান না করেই কেবলমাত্র জনগণের পকেট কাটার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কোন আলাপ-আলোচনা না করেই এর আগে গোপনে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে গণশুনানির মতামতের তোয়াক্কা না করেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের সাথে তামাশা ছাড়া কিছু নয়। যেহেতু পেট্রোবাংলা ও এর অধীন কোম্পানীগুলো প্রায় প্রতিটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে, সেহেতু সাধারণ মানুষের উপর আরো বোঝা বাড়াবার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের উপর বোঝা না বাড়িয়ে সংকট মোচনের দিকে আগে নজর দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।