বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আশ্রিত ও তাদের ঔরসে জন্ম নেয়া এবং এরও আগে থেকে আশ্রিত প্রায় ১২ লক্ষাধিক মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গার অবস্থান বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। এসব রোহিঙ্গারা ক্রমশঃ পড়েছে চরম সংকটের ঘূর্ণাবর্তে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অভিমত এখানকার (আশ্রয় ক্যাম্পে) চেয়ে মিয়ানমারে অনেক নিরাপদ ও ভাল ছিলাম।
রোহিঙ্গাদের একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সহিংসতা প্রতিনিয়ত তাড়া করছে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের। গত কয়েক বছরে তারা অনেক রোহিঙ্গাকে অপহরণ করেছে, একই সময়ে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডও বেড়েই চলেছে। একটা বিদেশি সেবা সংস্থায় কর্মরত রোহিঙ্গা সেবাকর্মী আসুমা খাতুন বলেন, আমরা কোথাও নিরাপদ নই। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ওই সংগঠনটি।
সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর রাতে উখিয়ার ১৭ নং ক্যাম্পে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৮ অক্টোবর একজন, ২৫ অক্টোবর একজন ও ১৫ অক্টোবর ১৯ নং ক্যাম্পে একইসাথে সন্ত্রাসীরা দুইজন রোহিঙ্গা মাঝিকে (কমিউনিটি নেতা) কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। মূলতঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব খুনাখুনির সাথে ওই সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে সাধারণ রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্টরা জানান। এ অবস্থায় “রাত যতই গভীর হয় ততই ক্যাম্পে থাকা প্রতিটি রোহিঙ্গার মনে প্রশ্ন জাগে, “আজ রাতে কাকে হত্যা করা হচ্ছে?” জানালেন রোহিঙ্গারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সহিংসতার বিষয়ে সতর্ক করছে। ফরটিফাই রাইটস্ এর প্রধান জন কুইনলি তৃতীয় বলেছেন, বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনি বলেছেন, ক্যাম্পগুলোতে সেবাকর্মী হিসাবে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তারাও ভয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা কর্মী ও নারীদের জন্য এটা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। কিছু কিছু গ্রুপ রোহিঙ্গা কর্মীদের টার্গেট করার সত্যতা স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গারাও। মানব পাচার, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আরও সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
শুধু রোহিঙ্গা নারীরাই নয়, অন্য ধর্মে বিশ্বাসী রোহিঙ্গা পরিবারও তাদের ভিন্ন বিশ্বাসের কারণে হত্যা ও অপহরণ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন যে ২১ টি রোহিঙ্গা খ্রিস্টান পরিবার ক্যাম্পে বসবাস করছিল, তাদের ১৭ টি পরিবার নিরাপত্তার কারণে এখন অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তিনি জানান, তারা কুতুপালাং-এ রোহিঙ্গা খ্রিস্টানদের একমাত্র গির্জাটি ভেঙে দিয়েছে। এটি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। তাদের কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই।"
একাধিক নির্ভরযোগ্য ও রোহিঙ্গা সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই চলছে। কৌশলগত দূর্বল ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি সেই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টিকতে না পেরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনপ্রিয় নেতা মাষ্টার মুহিবুল্লাহ ও একটি মাদরাসায় ৬ জন খুনের পর নানামুখী প্রতিরোধের মুখে আরসা কিছুটা ঘাপটি মেরে ছিল।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, উখিয়ার আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে নানা সমস্যায় তাদের সদস্যরা সীমান্তের তুমব্রু নো-ম্যানস-ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছিল। গত জুলাইয়ে মাঝামাঝিতে রাখাইনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত এএ তাদেরকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরে যেতে বলে দেয়। কারণ এএ মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে একা লড়াই করতে প্রস্তুত,তাই সেখানে অন্য কোন সশস্ত্র গ্রুপের অবস্থান মেনে নিতে রাজি নয় বলে জানা যায়। গত দুই মাস ধরে সীমান্তে সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্যে নো-ম্যানস-ল্যান্ডে অবস্হানকারী গ্যাং সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং শরণার্থী শিবিরে খুনসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে বলে রোহিঙ্গা, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান।
এ পরিস্থিতিতে নিজেদের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে গ্রুপটির সদস্যরা আবারো ক্যাম্পে ফিরে আসে। ক্যাম্পেগুলোতে তাদের তৎপরতা ও বিচরণ বেড়ে গেছে বলে জানা যায়।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এএসপি ফারুক আহমেদ জানান, তারা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তিনি জানান, গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অপরাধ নির্মূলে 'অপারেশন রুট আউট' চলমান রয়েছে। শুক্রবার- শনিবার ৪১ জন, রোববার ১৯ জন ও সোমবার রাতে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের ২৮ জনকে মোবাইল কোর্টে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। অন্যরা হত্যা,ডাকাতি,অপহরণসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি।
এপিবিএন-৮ এর কমান্ডিং অফিসার আমির জাফর জানান, সম্মিলিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক জাফর বলেন, "নো-ম্যানস-ল্যান্ডে কিছু অপরাধী চক্র বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।" সন্দেহভাজনরা সম্ভবত এআরএসএ, আরএসও এবং ইসলামিক মাহাজের মতো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। "কিন্তু আমরা বেশিরভাগই অপরাধের সাথে জড়িত বলে এআরএসএর নাম শুনছি। এই অপরাধীরা রাতে ক্যাম্পে ঘোরাফেরা করে।"
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।