Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচ্য। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়ে সঞ্চালন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সঞ্চালন লাইনে লোড ম্যানেজমেন্টে ব্যর্থতার কারণে ২০১৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুত বিপর্যয়ে সারাদেশে ব্ল্যাক-আউট পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল। সম্প্রতি জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল ৮-১০ ঘন্টার বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এরপরই জাতীয় গ্রিডের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ও টাওয়ার নির্মাণে ভারতীয় কোম্পানির দুর্নীতি-ফাঁকিবাজির বিষয়টিও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে মেঘনার ভাঙ্গনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ারে হুমকির বিষয়টি উঠে এসেছে। মেঘনার প্রবল স্রোতে চরম ভাঙ্গন-প্রবণতায় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জের রিভার ক্রসিং টাওয়ারগুলোর বেশ কয়েকটি হুমকির মুখে রয়েছে বলে রিপোর্টে জানা যায়। সেখানকার চরসোনারামপুর গ্রামের একটি টাওয়ারের নিরাপত্তায় সিমেন্টের ব্লক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদারকি করে আসলেও টাওয়ার রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ এখনো শুরু হয়নি।

একদিকে বিদ্যুতের টাওয়ার রক্ষা, অন্যদিকে জনপদ, অবকাঠামো এবং ফসলি জমি রক্ষার প্রয়োজনে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরি এবং স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পানি উন্নয়নের বোর্ডের উদাসীনতা, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের অভিযোগ বড়াবড়ই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার রক্ষায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত ও ত্বরিৎ উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রতিবেদনে ঘূর্ণীঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশার চিত্রও উঠে এসেছে। সিত্রাংয়ে ফসলহানি, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভাঙ্গনের কবলে পড়া মেঘনার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ টাওয়ারগুলোর প্রতিরক্ষায় কালক্ষেপণ না করে বিশেষ জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। নদী সন্নিহিত এলাকা এবং রিভারক্রসিং টাওয়ার নির্মাণে নদীর সম্ভাব্য গতিধারা এবং ভাঙ্গনের চিত্র মাথায় রেখেই এর অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এবং শহরগুলোতে ভাসমান মানুষের বাস্তু সংকটের ক্ষেত্রে নদীভাঙ্গন অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে। স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে নদীভাঙ্গন রোধে সারাদেশে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সেই সাথে যৌথ নদীর পানিব্যবস্থাপনায় সমস্যাগুলো দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এখন চরম সংকট অতিক্রম করছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খুব শীঘ্রই এ সংকট থেকে মুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ দুর্দিনেও জাতীয় বিদ্যুত গ্রিড বারবার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায়, অব্যবস্থাপনা ও অপ্রত্যাশিত দুর্ঘট থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। নদীভাঙ্গনে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকা রিভারক্রসিং সঞ্চালন টাওয়ারগুলোর প্রতিরক্ষায় কোনো ঘাটতি বা গাফিলতির কারণে যেন গ্রিড বিপর্যয় না ঘটে সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কোথাও বিদ্যুৎ টাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পিজিসিবি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মত জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর জাতীয় উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিদ্যুত ও গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্পোৎপাদন যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাবের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন। এ প্রেক্ষিতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার মত ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা দূর করতে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতি ঘরে এবং কলকারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনের নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • মোহাং আবদুল মামুন ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৭ এএম says : 0
    আনাড়িপনা। সর্বক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ দলীয় লোক নিয়োগের ফলে এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে জাতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shafiq ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৯ এএম says : 0
    অপরিকল্পিত ভাবে চলছে বিদ্যুৎ ব্যাবস্হা ও অনভিজ্ঞ লোকবল, দুর্নিতিবাজ প্রশাসন ই হচ্ছে বিদ্যুৎ দুর্ভোগের প্রধান কারণ, আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Rubel Ahmed ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৭ এএম says : 0
    দেশের টাকা লোটে বিদেশের ব্যাংক লোড করা যায়,,অথচ বিদ্যুত জমিয়ে রাখার মতো আধুনিক এই সিস্টেমটা কানেক্ট করার প্রয়োজনীয়তা সরকার অনুভব করতে পারে না?
    Total Reply(0) Reply
  • Krishnendu Mohanty ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে ভালো ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার নেই তার জন্য এই অবস্থা । 90% ইলেকট্রিক জিনিস গুলো হলো চাইনিজ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ripon Khan ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৩৮ এএম says : 0
    যোগ্য লোক কে যোগ্য জায়গায় বসাতে হয়,অযোগ্য লোক কে যোগ্য জায়গায় বসালে এমন তো হবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন