পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম শামসি জামে মসজিদ উত্তর প্রদেশে ৮শ’ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ১২২৩ সালে ভারতের মুসলিম সম্রাট শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু জুলাইতে এক স্থানীয় হিন্দু কৃষকের পক্ষে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা (এবিএইচএম) আদালতে এই অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে যে, মসজিদটি একটি অবৈধ স্থাপনা যা ১০ শতকের ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের ওপর নির্মিত। মামলার আবেদনে বলা হয়, শামসি জামে মসজিদের জমিতে হিন্দুদের ন্যায্য মালিকানা রয়েছে এবং সেখানে প্রার্থনা করতে দেয়া উচিত। ২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের ২০ কোটি সংখ্যালঘু মুসলমানরা বলছে যে, তারা নিপীড়ন, সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মোর্চার অধীনে মুসলিম নাগরিক, কর্মী এবং সাংবাদিকদের নিয়মিত নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, মুসলিমদের সাথে ব্যবসা বর্জন করা হচ্ছে এবং ব্যাপকহারে বিজেপি নেতাদের ইসলামবিদ্বেষী বক্তৃতা বেড়েছে।
হিন্দুত্ব মতাদর্শ অনুসারে ভারতের ইতিহাস পুনর্লিখনের জন্য বিজেপির অধীনে মসজিদগুলো একটি বিস্তৃত ষড়যন্ত্রের জালে আটকে যেতে শুরু করেছে। মে মাসে একজন প্রবীণ বিজেপি নেতা দাবি করেন যে, মুঘলরা ভারতে ৩৬ হাজার হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছে এবং তারা এক এক করে সমস্ত মন্দির পুনরুদ্ধার করবেন। কিন্তু অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ইতিহাসের অধ্যাপক রিচার্ড ইটন বলেছেন, এর কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই, মুঘলরা বড়জোর দুই ডজন মন্দির ভেঙে ফেলেছিল বলে ধারণা করা হয়। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হাজার হাজার দৃষ্টান্তের দাবি বিচিত্র, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভিত্তিহীন।’ ইতিহাসবিদরা বিজেপির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ভারতের ইতিহাস পুনর্লিখনই নয়, তাদের নিজস্ব কল্পনার মাধ্যমে ‘উদ্ভাবন’ করারও অভিযোগ করেছেন। আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির মুঘল ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ আলী নাদিম রেজাভি ভারতীয় ইতিহাসের বিজেপির প্রসূত সংস্করণটিকে ‘কাল্পনিক, বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই নয়’ বলে বর্ণনা করেছেন, যা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য।
ভারতীয় ইতিহাসবিদগণ, যাদের গবেষণাগুলো বিজেপির সংস্করণের সাথে বিরোধিতা করে, বা যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদেরকে সরকারি সংস্থা এবং সরকারি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং শাস্তি বা বহিষ্কার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় দৈনিক দ্য অবজারভার মতামত চাইলে অনেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের চাকরি বা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে। ভারতে বিদেশি ইতিহাসবিদদেরও টার্গেট করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রুটজার্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক অদ্রে ত্রুস্কে মুঘলদের নিয়ে কাজ করার কারণে হিন্দু ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। হিন্দুদের জন্য ভারতের ইতিহাসের প্রতিশোধের এবং পুনরুদ্ধারের অনুপ্রেরণা হিসাবে ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো সারা দেশে মসজিদগুলোর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন পিটিশন দাখিল করেছে। ভারতে একটি আইন রয়েছে যা ১৯৪৭ সাল থেকে উপাসনালয়গুলোকে বিতর্কিত হওয়া থেকে স্পষ্টভাবে রক্ষা করে। কিন্তু বিচারকরা মসজিদগুলোর বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিচ্ছেন।
এমনকি, ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ তাজমহল, যা মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন, মামলা থেকে রেহাই পায়নি। একটি মামলায় বলা হয়েছে যে, এটি মূলত তালাবদ্ধ কক্ষসহ হিন্দু মন্দির ছিল। বিজেপির একজন প্রবীণ নেতা অলোক ভাট্স বলেছেন যে, মামলাগুলোতে তার দলের কোনো ভূমিকা নেই, তবে এসব গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায় যা চায়, ঠিক তাই করতে চাইছে।’ এ ধরনের মামলাগুলোকে ২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে আরো পোক্ত করা হয়েছে, যা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ১৬ শতকের বাবরি মসজিদকে হিন্দুদের কাছে হস্তান্তর করে, যখন তারা দাবি করেছিল যে, এটি তাদের ভগবান রামের জন্মস্থান। ১৯৯২ সালে ডানপন্থী হিন্দুরা মসজিদটি ভেঙে ফেলে। যার ফলে, অনেকের আশঙ্কা যে, এখন বিতর্কিত মসজিদগুলোর ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সাথে ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এ মাসে গুরগাঁও শহরের একটি মসজিদে প্রায় ২শ’ লোক সহিংস আক্রমণ চালায়, একই সময়ে কর্ণাটক রাজ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা একটি মাদরাসায় ঢুকে হিন্দু মূর্তি স্থাপন এবং পূজা-অর্চনা করে।
বারাণসীতে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্মিত ১৭ শতকের জ্ঞানবাপী মসজিদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি ভারত জুড়ে অন্য মসজিদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। মামলাটি ২০২১ সালে পাঁচ হিন্দু মহিলার দাখিল করা একটি পিটিশনের মাধ্যমে শুরু হয়, যেটিতে তারা মসজিদের ভেতরে প্রার্থনার অনুমতি চেয়ে যা তারা দাবি করে যে, একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন শিব মন্দিরের ওপর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। ১৫টি পৃথক পিটিশনের অনেকগুলোতে মসজিদকে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে। মে মাস থেকে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে ওঠে, যখন হিন্দু পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের নির্দেশিত সমীক্ষার সময় মসজিদের ভেতরে শিবলিঙ্গ আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেন।
যদিও মসজিদের কয়েক ডজন নিয়মিত প্রার্থনাকারী বলেছেন যে, কথিত শিবলিঙ্গটি আসলে একটি ভাঙা ফোয়ারার অংশ যা প্রায় ৭০ বছর ধরে মসজিদে স্থাপিত ছিল এবং নির্দেশ করে যে, এটির মাঝখানে পানির জন্য একটি গর্ত রয়েছে, যা শিবলিঙ্গের মূর্তিতে কখনও দেখা যায়নি, এটি এখনও বিচারক বা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে। বিজেপি বলেছে যে, মামলার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তবে কথিত শিবলিঙ্গের সন্ধান পাবার পর, উত্তর প্রদেশের বিজেপি উপ-মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘ভগবান শিব সেখানে হাজির হয়েছেন যেখানে আমরা তাকে খুঁজছিলাম।’ বারাণসীর পেশ ইমাম আব্দুল বাতিন নোমানি, যিনি শহরের সমস্ত মসজিদের তত্ত্বাবধান করেন, বলেন, ‘আমরা জানি এ মসজিদটি কেবল শুরু। কিন্তু যদি তারা এটি হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়, তবে রক্তপাত ঘটবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।