পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন অভিযোগ করেছেন, কিছু শিক্ষাবিদ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা সব সময় ভারতের আদর্শের সরকার ক্ষমতায় থাকুক, এমনটা দেখতে চায়। তার এই পর্যবেক্ষণের সত্যতা সম্পর্কে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত সব সময় চেয়েছে, বাংলাদেশে যেন ভারতানুগত একটা সরকার সর্বদা ক্ষমতায় থাকে, যাতে পছন্দমত ফায়দা উঠিয়ে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়। এ জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে ‘ভারতপন্থী’দের উপস্থিতি ও অবস্থান নিশ্চিত করার কাজও সে করে গেছে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীকালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, মিডিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতপন্থীদের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ তারা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিক্ষা ও প্রশাসনে তাদের উপস্থিতি ও অবস্থান যথেষ্ট শক্তিশালী বলেই মনে করা হয়। আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন আরো অভিযোগ করেছেন, এদেশের জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে চলেছে ভয়াবহ ভারতীয় আগ্রাসন। ইসলামবিদ্বেষী অপসংস্কৃতির চেতনাধারীরা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঈমান-আকিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা উঠিয়ে দিতে চায়। তার এ অভিযোগের সত্যতাও প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। কী আশ্চর্য, ভারতে মোদি সরকার মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে যা করছে, বাংলাদেশেও তলে তলে সেটাই করা হচ্ছে। মোদি সরকার ভারতে মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী ধরন ও বৈশিষ্ট্য বদলে ফেলছে। সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে কোনো পার্থক্য রাখছে না। শুধু তাই নয়, ভারতে দেওবন্দসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত মাদরাসাসমূহ বন্ধ করার ঘোষণাও দিচ্ছে। আমাদের দেশেও মোদি অনুসারী ও বামধারার নিশান বরদাররা সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার চরিত্র বদল, এমন কি মাদরাসা বন্ধের নানা চক্রান্তও চলছে। ইতোমধ্যে পাঠ্যবইয়ে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে যায় না। ইসলাম পরিপন্থী বিষয়, মাদরাসাই শুধু নয়, এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো ডিসিপ্লিনেই যেতে পারে না। অথচ, এ ধরনের বিষয়, পাট্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে খ্যাত। একথা ভারতের অনেক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক ও অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ ও অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলে কথিত হলেও বরাবরই একটি হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হিন্দুত্ববাদ, মুসলিমবিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা- নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়ন ফ্রিডম’ গত তিন বছর ধরে ভারতকে ‘উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সকলের জন্য অভয় ক্ষেত্র। মানবিক, নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রশ্নে এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি কোনো পার্থক্য এখানে নেই। প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যাংক, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর উপস্থিত তাদের মোট সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি, যা ভারতে কল্পনাও করা যায় না। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ শত শত বছর ধরে এভাবেই শান্তিতে ও সৌহার্দ্যে বসবাস করে আসছে। এই সহনশীল ও প্রীতিময় সমাজ নির্মাণ ও সুরক্ষায় নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা। ইসলামে জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই। অতীতে কিছু বিপথগামী ও সাম্রাজ্যবাদীদের প্ররোচনায় সৃষ্ট উগ্রবাদী সন্ত্রাসে জড়িত হলে এদেশের মুসলমানরাই তাদের মুখোমুখী হয়েছে আগে। বিশেষ করে, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ প্রতিবাদ করেছেন, প্রতিরোধে সহযোগিতা করেছেন। ইসলামের সার্বজনীন শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসার বিশেষায়িত শিক্ষা এদেশের মুসলমানদের মনন ও মানস গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। সেই মাদরাসা শিক্ষাকে বিভিন্ন সময় টার্গেট করা হয়েছে। জঙ্গীবাদের উৎস মাদরাসা, এমন ডাহা মিথ্যাও প্রচার করা হয়েছে। অথচ, এদেশে সংঘটিত কোনো সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গেই মাদরাসাশিক্ষার্থীদের সংযোগ বের করা যায়নি। জঙ্গীবাদের ঘুটি ইদানিং আবারও খেলা শুরু হয়েছে। এটা যে বিশেষ মতলবে করা হচ্ছে, সেটা বলাই বাহুল্য। কাজেই সবাইকে সাবধান ও সচেতন থাকতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত চলছে, তা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর সময়েই বিশেষভাবে লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণা এক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এমতাবস্থায়, তারা মনে করেন, শিক্ষামন্ত্রীকে অবিলম্বে সরিয়ে দেয়া উচিত। নইলে এর দায় সরকারের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মভিরু। ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রশ্নাতীত। নামাজ-রোজা থেকে শুরু করে যাবতীয় ধর্মাচার তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এটা তার পারিবারিক ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তার সাশনকালে তিনি যা করেছেন, তার তুলনা নেই। তিনি মাদরাসা শিক্ষার একজন একনিষ্ঠ অনুরাগী। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানে তিনি লাগাতার ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তার একটি বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদদের শতবর্ষের আকাক্সক্ষা তিনি পূরণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি ও মর্যাদা দান তার মাদরাসা শিক্ষা প্রীতির আর একটা নজির। এমন একজন মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর আমলে মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র হবে, ইসলামী শিক্ষা উঠিয়ে দেয়া হবে, পাঠ্যবইয়ে ইসলাম বিমুখ ও ইসলাম বিদ্বেষী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বলতো, আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী দল। এ দল ক্ষমতায় গেলে ইসলাম থাকবে না, মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা উঠে যাবে। তাদের এ কথার যে কোনো ভিত্তি ছিল না, তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনকালই তার প্রমাণ। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই ইসলামের প্রসার ও মাদরাসা শিক্ষার বিকাশ তরান্বিত হয়েছে। এখন এই ঐতিহ্যে কালিমালেপনের অপচেষ্টা হচ্ছে। অবশ্যই এ অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। এই রুখার কাজটি করার উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকেই সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আশা করি, সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কালবিলম্ব করবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।