Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশুশ্রম বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মো. আতিকুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আমাদের দেশে শিশুশ্রম প্রধানত দারিদ্র্যের ফসল। অনেক ক্ষেত্রে প্রথাগত ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়া এর পশ্চাতে ক্রিয়াশীল। বস্তুত পরিবারের আর্থিক সংকট, হতদরিদ্রতাই শিশুদের শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নিয়োজিত হতে একপ্রকার বাধ্য করে। বর্তমানে অনেক শিশু পারিবারিক চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে শহরে এসে কর্মের আশায় শ্রমিক হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশে শিশুশ্রম বৃদ্ধির মুখ্য কারণ। পাশাপাশি এদেশে শিশুশ্রম বৃদ্ধির জন্য আরো অনেক কারণকে বিবেচনায় আনা যায়। যেমন, দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারের শিশুরাই নিজের এবং পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে কর্মে নিযুক্ত হয়; চরম দারিদ্র্যের ছোবলে অভিভাবকরা শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কর্মক্ষেত্রে পাঠাতে একপ্রকার বাধ্য হয়; অভিভাবকদের উপার্জিত অর্থে শিশুদের শিক্ষার জন্য আলাদা ব্যয়ভার বহন করার অক্ষমতা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা ও শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা; শিশুশ্রমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অজ্ঞতা; শিশু অধিকার সংরক্ষণে আইনগত দুর্বলতা; প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সহায়-সম্বলহীন হওয়া; অতিরিক্ত জনসংখ্যা; পরিবার-পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে সম্যক ধারণার অভাব; অনেক অভিভাবকের অন্ধ ধারণা, অধিক সন্তান আয়রোজগারের হাতিয়ার; ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি; বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে শিল্পকারখানা কেন্দ্রীভূত হওয়া; বয়স্ক শ্রমিকের বেকারত্ব বৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ; বৈষম্যমূলক আচরণ এবং গৃহহীন ও ভাসমান পরিবার বৃদ্ধির কারণেই মূলত এদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এদেশের ৫৭% এর বেশি মানুষই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। ফলে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাতো দূরের কথা, পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই চরম হিমশিম খেতে হয়। আমাদের দেশে এখন এমনও অনেক পরিবার আছে, যারা এক বেলা পেটপুরে খেতে পায় না। এ সমাজে একজন খেটেখাওয়া দরিদ্র মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে দুই কেজি চাল কিনলে অন্যকিছু কেনার জন্য হাতে আর পয়সা অবশিষ্ট থাকে না। এ ধরনের অভিভাবক বা বাবা-মার পক্ষে তাদের সন্তানের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাতের যোগান দিতে এক প্রকার বাধ্য হয় তাদের কাজে পাঠাতে। কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মা-ই চায়, তার সন্তান অন্য সবার মতো লেখাপড়া শিখে বড় হোক এবং মানুষের মতো মানুষ হোক।

প্রত্যেক বাবা-মার মনে, আশা ও বাসনা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, সম্প্রতি প্রকাশিত ও প্রচারিত একটি সংবাদে দেখা যায়, ফুটপাতে বসবাসরত একজন মা তার সন্তানকে বই পড়াচ্ছে। সেই মারও আশা তার সন্তান অন্য সবার সন্তানের মতো লেখাপড়া শিখে একদিন অনেক বড় হবে। এই দৃশ্য দেখে অন্তত একটি বিষয়ে আমাদের সকলের উপলব্ধি হওয়া উচিত, কত কষ্টে এবং কত ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে একজন বাবা-মা তাদের সন্তানকে বাঁচানোর তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতেও দ্বিধা করে না। সেইসব বাবা-মার জন্য যদি আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা যায়, সমাজের বিত্তবানরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যদি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে, তবে এমনিই শিশুশ্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এই সমাজ থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের বাঁচাতে বাস্তবোচিত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে শিশুশ্রম বন্ধে আমরা যতই আইন করি না কেন, তা কোনই কাজে আসবে না, যতদিন না আমরা দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারি। বর্তমানে এদেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় সংস্থাগুলি দিনদিন সোচ্চার হচ্ছে, অথচ শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছেই। এই পেক্ষাপটে এই ভয়াবহ সমস্যা সমাধানে এখনই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে, সচেতন যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রতিটি সচেতন যুবক যদি নিজ নিজ এলাকায় সমবয়সী আরো কিছু যুবককে নিয়ে এমন একটি দল গঠন করতে পারে যে, দল সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সাধ্যের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা এনে ঐ এলাকার দরিদ্র অভিভাবকদের উপার্জনমুখী কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে পারে, তবে এমনিই শিশুশ্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এই কাজের জন্য প্রতিটি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। এই ক্ষেত্রে বিত্তবানদের মনে রাখতে হবে, ঐসব দরিদ্র অভিভাবক আপনাদের পরিবারেরই অংশ এবং তাদেরকে যেকোন প্রকার সহযোগিতা করাই আপনার কর্তব্য। অনুরূপভাবে সরকারকে শিশুশ্রম রোধে আইন প্রণয়নের চাইতে সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যতটুকু সম্ভব অভিভাবকদের উপার্জনমুখী কর্মের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


লেখক: সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিইউএফটি।



 

Show all comments
  • hassan ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ৫:১১ পিএম says : 0
    আল্লাহর আইন ছাড়া এদেশ কোনোভাবেই উন্নত করা যাবে না পথশিশু থাকবে শিশুশ্রম থাকবে মানুষ কোটি কোটি না খেয়ে থাকবে বস্তির মধ্যে থাকবে দেশটাকে ভাগাড়ের মত তৈরী করে ফেলেছে দেশটাকে একদম ধংস করে ফেলেছে সব টাকা-পয়সা লুট করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে আর আমরা এখন ধুকে ধুকে মরছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন