পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নগরীর বর্জ্য সরাসরি নদ-নদীতে পড়া নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে দেশের নগরীর কঠিন ও তরল বর্জ্য নদ-নদীতে পড়ছে। এতে নদ-নদীগুলো যেমন ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার পানি এতটাই দূষিত যে তা কোনোভাবেই ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব নয়। ওয়াসার পক্ষে এ পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য স্থানের কঠিন ও তরল বর্জ্য এসব নদীতে সরাসরি পড়ছে। বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার প্রায় ৭ হাজার শিল্পকারখানা থেকে প্রতিদিন ৩৫০ মেট্রিক টন বিষাক্ত কেমিক্যাল বর্জ্য কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই নদীতে পড়ছে। এসব কেমিক্যালের পাশাপাশি গৃহস্থালী ও মেডিক্যাল বর্জ্যও পড়ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে এ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
রাজধানীসহ অন্যান্য নগরীতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদফতর থাকা সত্ত্বেও দূষণ রোধে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। কেউই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। রাজধানীতে বর্জ্য ও ওয়াটার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, সারা বিশ্বেই নগরীর যত ধরনের বর্জ্য রয়েছে, তা পরিশোধনের মাধ্যমে ফেলা হয়। আমাদের দেশে ঘটছে এর উল্টো ঘটনা। রাজধানীর সিংহভাগ কঠিন ও তরল বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছে। অথচ ড্রেনেজ সিস্টেমে যে তরল প্রবাহিত হয়, তা পরিশোধিত ও পরিস্কার করে নদীতে প্রবাহিত করতে হয়। উন্নত বিশ্বের ড্রেনের তরল বর্জ্য পরিশোধন করা হয়। পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গেও ড্রেনেজের বর্জ্য পরিশোধন করে তারপর ফেলা হয়। আমাদের দেশে ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থার তরল ভয়াবহ রকম দূষিত। পরিশোধনের কোনো ধরনের ব্যবস্থা করা হয় না। উল্টো এর সাথে বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানার তরল বর্জ্যরে অবৈধ লাইন সরাসরি যুক্ত। বাসাবাড়িতে সেফটিক ট্যাংক থাকার কথা থাকলেও অসংখ্য বাড়িতে তা নেই। এমনকি রাজউক যেসব নতুন বাড়ি করার অনুমোদন দিচ্ছে, সেগুলোতেও সেফটিক ট্যাংক থাকে না। এটি নকশাবর্হিভূত হলেও রাজউক কোনো ব্যবস্থা নেয় না। একইভাবে সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো ধরনের উন্নতি করতে পারেনি। ফলে রাজধানীর গৃহস্থালী, মেডিক্যাল ও শিল্পকারখানার বেশিরভাগ বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। অনেক শিল্পকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে লাইন সরাসরি নদীর সাথে যুক্ত রয়েছে। গার্মেন্ট কারখানার বিষাক্ত রং ও কেমিক্যাল পরিশোধন ছাড়াই নদীতে গিয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে যাচ্ছেতাইভাবে নদ-নদী ও জলাধার দূষণের এই অরাজকতা চললেও কোনো কর্তৃপক্ষই তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। এর ফলে নদ-নদীর পানি, মাছ ও কৃষিপণ্যের মাধ্যমে বিষাক্ত কেমিক্যাল মানুষের দেহে প্রবেশ করছে এবং মানুষ ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও রাজধানীতে আধুনিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বিশ্বের মধ্যে ঢাকা বরাবরই দূষিত নগরীর শীর্ষে রয়েছে। অথচ উন্নয়নের কথা অহরহ বলা হলেও অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন রয়েছে এই নগরী। এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও নগরীর পরিবেশ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত হবে না কেন? জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো চললেও ন্যূনতম সেবা কেন দিতে পারছে না? সরকারের এক্ষেত্রে কঠোর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তার নজির দেখাতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের উচিত, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া। দেশের নদ-নদী ও পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে কোনো ধরনের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ফেলা পুরোপুরি রহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে যৌথভাবে নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেম আধুনিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব বাসা-বাড়ি ও শিল্পকারখানার স্যুয়ারেজ লাইন সরাসরি ড্রেনেজ বা নদ-নদীর সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সব নগরীকে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও বাসোপযোগী করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।