Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গিবতের ভয়াবহতা ও প্রতিকার

মুহাম্মাদ রফীকুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গীবত হল ‘আমল খেকো’ বদ আমল। যা কিছু ভালো আমল বান্দার ঝুলিতে থাকে গীবতের পোকা সেগুলোকে খেয়ে ফেলে। একদম নি:স্ব করে ফেলে। সালাত খেয়ে ফেলে, সিয়াম খেয়ে ফেলে, হজ্ব খেয়ে ফেলে। বান্দার সকল আমল খেয়ে ফেলে। এমনকি বান্দার গীবত তাকে কবরেও ছাড় দেয় না। অবশেষে আস্তাকুঁড়ে জাহান্নামে ফেলে দেয়। গীবত একটি কবিরা গুনাহ। মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণের সমান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাাইয়ের গোশত ভক্ষন করবে? তোমরাতো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো। (সূরা হুজুরাত : ১২) ।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন , একদা আমরা নবী করিম (সা.) এর নিকটে ছিলাম, এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, তোমার দাঁত খিলাল কর। লোকটি বলল, কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করেছ অর্থাৎ গীবত করেছ। (ত্বাবারানী, ইবনে আবী শায়বা ৪২৮)। মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সা. এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি, তারা তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিড়ছিল। রাসুল সা. জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা হে জিবরীল? তিনি বললেন, এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত- আবরু বিনষ্ট করত, (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)।
গীবত করা ও শোনা দুটোই গুনাহের কাজ। কেউ কারো গীবত করলে তাঁর ভালোর জন্যই তাকে থামিয়ে দেওয়া উচিৎ। মন্দ কথার প্রচার ও প্রসারে কোন ফায়দা নেই। ইবনুল মুবারক রহ. এর মজলিশে এক লোক ইমাম আবু হানিফা রহ. এর গীবত করা শুরু করলেন। ইবনুল মুবারক রহ. তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আবু হানিফা রহ. এর গীবত করছো? অথচ আল্লাহ তা’আলার নিকটে তার শান ও মর্যাদা ছিল অনেকগুন বেশী। (আবু দুররুল মুখতার)। এক লোক হাসান বসরী রহ এর কাছে এসে বলল, একজন আপনার গীবত করেছে, তখন তিনি সেই গীবতকারীর জন্য থালা ভর্তি মিষ্টি খেজুর নিয়ে গিয়ে বললেন, শুনলাম আপনি আপনার ভালো আমলগুলি আমাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন। এই নিন,আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করতে এসেছি, ঋণ পরিশোধে কোথাও কোন ঘাটতি হলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। (তাম্বীহুল গাফেলীন)। মহান আল্লাহ বলেন, দুর্ভোগ তাদের যারা সামনে ও পিছনে পরনিন্দা করে বেড়ায়। (সূরা হুমাজাহ : ১)।
তাহলে গীবত থেকে বাচার উপায় কি? গীবতের জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া। অতঃপর যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এতে যদি ফিতনার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করা। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, গীবতের কাফফারা হল এই যে, তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দু’আ করবে। তুমি দু’্আ এভাবে করবে যে, হে আল্লহ তুমি আমার এবং তার গুনাহ মাফ করে দাও। (বায়হাকী)। আমরা মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করে অনেক কিছু চাই। উত্তম রিজিক চাই, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি চাই। দুনিয়াতে ভালো থাকার জন্য অনেক অনেক কিছু চাই।
আজ থেকে সেই চাওয়ার সাথে আখেরাতের ভালোগুলোও চেয়ে নিব ইনশাআল্লাহ। যে বদ-আমলে আখেরাত বরাদ্দ হয়। সেগুলো সহজে ছাড়তে না পারলে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নিব। চোখের পানি ঝরিয়ে আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলব, হে আল্লাহ! আমি যে আর পারছিনা! অনেক চেষ্টা করেও শাইত্বানকে হারাতে পারছিনা, বারবার চেষ্টা করেও তার কাছে হেরে যাচ্ছি, হে আল্লাহ! তোমার সাহায্য নিয়ে তাকে হারাতে চাই।আমাকে তুমি কবুল কওে নাও। আমাকে দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফীক দাও। আমীন।



 

Show all comments
  • মুহাম্মাদ রফীকুল্লাহ ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ৩:২০ পিএম says : 0
    মাশাআল্লাহ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গিবতের ভয়াবহতা ও প্রতিকার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ