পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনে ২৫ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করে জানিয়ে ঢাকায় কর্মরত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীন মুসলিমবিরোধী কোনো দেশ নয়। মুসলমানদের নিয়ে চীনের কোনো ধরনের নেতিবাচক অবস্থানও নেই। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) ‘ডিকাব টক’ নামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে চীনের কোন ঋণের ফাঁদ নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা (চীন) নীরবে কাজ করছি।
উইগুর মুসলিমদের নিয়ে চীন সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনে ২৫ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করেন। এর মধ্যে ১২ মিলিয়ন মুসলিম রয়েছে উইগুরে। তাদের নিয়ে পশ্চিমারা প্রতিনিয়ত অপপ্রচার চালাচ্ছে। পশ্চিমা মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ যেমন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে, চীনও একই অবস্থানে। আমরাও যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে কুনমিং রেল স্টেশনে চার উইগুর মুসলিম সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে ৩১ জন নাগরিক নিহত হন। এটাকে আপনারা যদি সন্ত্রাসী হামলা না বলেন, তাহলে সন্ত্রাসী হামলা কোনটি?
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের উন্নয়নের সম্পর্ক প্রসঙ্গে লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো এবং বাংলাদেশে চীনের কোন ঋণের ফাঁদ নেই। মেগা প্রকল্পে দফায় দফায় ব্যয় বাড়ার পাশাপাশির চীনা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে বাংলাদেশও ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে কি-না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের কোথাও চীনা ঋণের কোনো ফাঁদ নেই। পশ্চিমা বাণিজ্যিক ঋণ এবং বহু-আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগ। সেই দেশের (শ্রীলঙ্কা) মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ ভাগেরও কম চীনা ঋণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিদেশি ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ চীনের ঋণ। সেই বিবেচনায় আমি বলবো যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের মাত্রাও অনেক কম।
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিশ্রুতিশীল জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। চীন ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের মতো একই মত পোষণ করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রসঙ্গে চীনের ভূমিকা নিয়ে লি জিমিং বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাসহ দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের নিপীড়ন ও হত্যা করার পরও মিয়ানমার ইস্যুতে চীন কেন তাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে জানতে চাইলে লি জিমিং বলেন, চীন মনে করে না যে পশ্চিমা চাপ মিয়ানমারের সমস্যা সমাধানে কোনোভাবেই সাহায্য করবে। সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে এশিয়ান উপায় আছে। ইউরোপীয়, আমেরিকান উপায় এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে না।
তাহলে কেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীন এ লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আমরা নীরবে কাজ করছি। অবশ্যই, এর প্রভাব দেখা যাবে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করবে এবং প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সমস্যা এখন রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই। তাই বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে।
লি জিমিং বলেন, চীন চায় না বঙ্গোপসাগরের যে অঞ্চলটি বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, সেখানে কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতা হোক। এমনকি ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো কৌশলগত শত্রুতা নেই। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে অনেক আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বহুবার ভারত সফর করেছেন এবং ভারত ও চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারা ও দর্শনের মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন লি জিমিং।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় চীন বাংলাদেশকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, চীন নিজেই একটি জ্বালানি আমদানিকারক দেশ এবং আমরা নিজেরাই সমস্যার সম্মুখীন। তবে বাংলাদেশ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়লে চীন নির্বিকার বসে থাকবে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ডিকাবের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আরো বলেন, বাংলাদেশে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চায় চীন। চীন ও বাংলাদেশ একে অন্যের ভালো প্রতিবেশী। দুই দেশই একে অপরের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার। বাংলাদেশ ও চীন সব সময় নিজেদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা সংক্রান্ত মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে একে অপরকে বুঝেছে এবং সমর্থন করেছে।
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈন উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।