Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে গৃহীত সংস্কার পদক্ষেপে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এই প্রতিবেদন সমর্থন করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনও। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চারমাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪৩৯ কোটি ডলার যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ একবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় প্রায় ৮ শতাংশ। বিপরীতে রফতানি ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম চারমাসে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৭৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের  একই সময়ে ছিল এক হাজার ১৩ কোটি ডলার। এই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেলেও বিলাসজাতপণ্য আমদানি বেড়েছে। একারণে আমদানি ব্যয় কমছে না। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতিতে। দেশের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন, ব্যবসা শুরু করতে এখনো লম্বা সময় ব্যয় করতে হয়। এমনকি শিল্পস্থাপনে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতেই সময় লাগে ৪২৮ দিন। বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের কারণে সহায়ক পরিবেশ থাকলেও বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বলা হচ্ছে, শিল্পে সংকটের বিদেশি পণ্যে বাজার সয়লাব হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বলা বাহুল্য, সংস্কার কার্যক্রমে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে নতুন বিনিয়োগ যেমনি নিরুৎসাহিত হচ্ছে তেমনি বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণেও অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন না।
ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতি দেশের প্রাণ। দেশের অর্থনীতিতে আমদানি-রফতানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে অর্থনীতি টিকে থাকা দায়। বাংলাদেশ এমনিতেই আমদানিনির্ভর দেশ। এই বাস্তবতা দূর করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। বিনিয়োগের নানাদিক রয়েছে। চীনের সাথে চুক্তিতে সেখানকার অনেকশিল্প হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। সেসব শিল্প বাংলাদেশে স্থাপন করা গেলে অর্থনীতিতে অনেকটা ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারত। এক্ষেত্রে এটাও বলা দরকার চীনের বাজারে আমাদের অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত হিসেবে প্রবেশাধিকার রয়েছে। সামর্থ্যরে অভাবে আমরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাধা নিয়ে কেবল জাতীয়ভাবেই কথা বলা হয়েছে তা নয় বরং বিশ্বব্যাংকও এ নিয়ে কথা বলেছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির কোন ইতিবাচক পরিবর্তন হবার পরিবর্তে নেতিবাচক দিকধাবিত। বলা হচ্ছে, ব্যাংকে নগদ অর্থ রয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য অর্থ থাকার পাশাপাশি সুদের হারও কমেছে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজালে আটকা পড়তে হয়। যতই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের কথা বলা হোক না কেন, ব্যবসা শুরু করতে প্রারম্ভিক প্রস্তুতিতেও দীর্ঘসময় ব্যয় করতে হয় উদ্যোক্তাদের। ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও অবস্থান আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার খরচ বেশি। চলতি বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করেও বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা এবং খরচ কমানোর বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপের কথা বাজেটে বলা হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোতে যেহারে সংস্কার গতি পেয়েছে বাংলাদেশে তা হয়নি। বহির্বিশ্ব দূরে থাক আফগানিস্তান বাদ দিলে সার্কদেশগুলোর মধ্যে সবার নিচে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাধা সম্পর্কে অনেক বনেদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত প্রতিবেশী ভারত এখানে অলিখিত ব্যারিয়ার সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের স্বার্থের বাইরে যায় এমন কোন উদ্যোগ কোন না কোনভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ দেখছে না বিধায় অনেকেই পুঁজি বিদেশে সরিয়ে নিতে আগ্রহী।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি ঠিক না থাকলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা দূর করতে হলে অবশ্যই দেশে একটি আস্থাশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলও এব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রকৃত বিনিয়োগ বাধা দূর করতে এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে শীর্ষমহল থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সকল মহলই মনে করছে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। হেলায় নষ্ট করলে আর ফিরে আসবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট এবং ব্যবসায়ীদের কথা মূলত একই বৃত্তে বাধা। তারা সকলেই অন্তরায় দূর করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহল যদি এসব সমস্যা আমলে নেন তাহলেই পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন