Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য থামাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গত রোববার ধানমন্ডি লেকের পাড় থেকে এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইকারীর হাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। শুধু ওই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারই নয়, প্রায়ই রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের হাতে মানুষ খুন হতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গত ২৭ মার্চ ভোরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক দন্ত চিকিৎসক প্রাণ হারায়। পরে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ছিনতাইকারীদের সবাইকে গ্রেফতার করে। মিরপুর বাউনিয়া বাঁধে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক পোশাকশ্রমিক, দয়াগঞ্জ এলাকায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে অন্তত ৮ জন খুন হয়েছে ছিনতাইকারীদের হাতে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গত বছরের শেষ ৫ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে রাজধানীতে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ বেশি হয়েছে। ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে দিনরাত নেই। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে ছিনতাইকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে মানুষের ওপর। তারা কতটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে, আসাদগেট এলাকায় তাদের ছুরি হাতে তেড়ে আসার ছবি ও ভিডিওতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য থাকে টাকা-পয়সা, গহনা, মোবাইল ও সহজে বহনযোগ্য মূল্যবান সামগ্রীর ওপর। অথচ, এখন তারা ছিনতাই করতে গিয়ে অবলীলায় খুন করতেও দ্বিধা করছে না। এ অবস্থাকে উদ্বেগজনক বললেও বেশি বলা হয় না। কয়েকদিন আগে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বিভিন্ন পেশার আড়ালে এক শ্রেণির অপরাধী নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তারা এমনকি পুলিশের ছদ্মবেশেও অপরাধ করছে। খবর মতে, রাজধানী ও তার আশেপাশে অন্তত ৮০টি গ্রুপ বা সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।


ডিএমপির সূত্রমতে, রাজধানীতে প্রতি মাসে ৩০টির বেশি বড় ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে রাজধানীতে ৭০৫টি মামলা হয়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে। রাজধানীতে প্রশাসন, আইনশৃংখলা ইত্যাদির কেন্দ্র অবস্থিত। সেখানেই যদি মানুষের নিরাপত্তা না থাকে, যখন-তখন তাদের ওপর অপরাধীচক্র হামলে পড়ে, তখন দেশের অন্যত্র পরিস্থিত কতটা অবনত হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। দেশের কোথাও নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। পথে-ঘাটে, বাসা-বাড়িতে কোথাও কেউ নিরাপদ বোধ করতে পারছে না। রাজধানীর প্রান্তিক এলাকাতেই নয়, গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি এলাকাতেও মানুষ শংকা-উৎকণ্ঠায় পথ চলতে বাধ্য হচ্ছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী পুলিশ দেশের আইনশৃংখলা সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কমই সময় পাচ্ছে। অথচ, এটাই তার প্রধান দায়িত্ব। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বিরোধীদল দমন-পীড়নে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তার গথবাঁধা উত্তর হলো: আইনশৃংখলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ছিনতাইকারী, রাহাজানি, চোর-ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে ইত্যাদি। বাস্তবে মানুষের জানমালের অনিরাপত্তা অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখলে এবং মূল দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে স্বাভাবিকভাবেই। কী কারণে অপরাধ বাড়ছে, সঙ্গতকারণেই সে প্রশ্ন উঠতে পারে। মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে অভাব, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থানের অভাব, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা, হতাশা ইত্যাদি দায়ী। কিশোরগ্যাং নামে এক নব্যগ্যাং সারাদেশেই বিস্তার লাভ করেছে। এরা সন্ত্রাস, খুন, ছিনতাই রাহাজানিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা করছে না। তাছাড়া নতুন নতুন অপরাধীও তৈরি হচ্ছে। এরা তেমন চি‎ি‎‎হ্নত নয়। এই অচি‎ি‎হ্নত অপরাধীদের দমন ও গ্রেফতার পুলিশের পক্ষে অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

কারণ যাই হোক, আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তার এই নাজুক হাল বহাল থাকতে পারে না। যে কোনো মূল্যে ও ব্যবস্থায় দেশকে অপরাধমুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের খুব বেশি চাহিদা নেই। তারা অল্পেতুষ্ট। দু’ বেলা, দু’মুঠো ভাত, মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত হলেই তারা সন্তুষ্ট। অনেকেরই মনে থাকার কথা, এক ব্যক্তি গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে রাতে ছিনতাই করতে যেয়ে একজনকে ছুরিকাঘাত করে। পরে সে জানায়, তার সন্তানদের আহার যোগানের জন্যই বাধ্য হয়ে সে এসব করেছে। এমতাবস্থায়, সরকারকে দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং বিভিন্নভাবে দরিদ্রদের সহায়তার পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধের কারণ শনাক্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। এইসঙ্গে আইনের বাস্তবায়ন কঠোর করতে হবে। তদন্ত, বিচার, শাস্তিপ্রদান দ্রুতায়িত করতে হবে।



 

Show all comments
  • hassan ২৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ পিএম says : 0
    এসবের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের দেশ আল্লাহর আইন দিয়ে শাসিত হয় না যারা দেশ শাসন করে তারাইতো ছিনতাইকারী বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক বেকার কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে কোন দিক থেকে শিক্ষিত করতে পারেনা নৈতিক শিক্ষা ও নাই কারিগরি শিক্ষা ও নয় সরকার যেভাবে প্রতিনিয়ত অন্যায় কাজ করে যাচ্ছে এর কারণ এই দেশে অপরাধ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে আমরা যারা সাধারন মানুষ তারাই আজকে সরকারের কাছে অত্যাচারিত এবং ছিনতাইকারী ডাকাত গুন্ডা চাঁদাবাজ তাদের কাছেও অত্যাচারিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন