Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটে জনজীবন বিপর্যস্ত, শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারের তরফে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। অচিরেই বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকবে না; সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। বাস্তবে এ আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন নেই। বরং বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এখন খোদ রাজধানী শহরে ঘণ্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। দিনরাতে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এই গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অশেষ কষ্ট ভোগ করছে নগরের অধিবাসীরা। গ্যাস সরবরাহের অবস্থাও তথৈবচ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাস না থাকায় রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া ঠিক সময়ে হচ্ছে না। রাজধানীশহরে কেবল নয়, দেশের সকল শহর এবং সেখান থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকা কিংবা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ট মানুষ। দেশের যেসব এলাকায় গ্যাস আছে, সেসব এলাকায় গ্যাস না থাকা কিংবা এর প্রবাহ কম থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ওদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পাঞ্চগুলোতে বিদ্যুতের লাগাতার লোডশেডিং তো আছেই, সেইসঙ্গে ১০-১২ ঘণ্টা গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকছে। ফলে উৎপাদন অব্যাহত রাখা কিংবা উৎপাদন ক্ষতি কমানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় শিল্পের মালিকরা তাদের গ্যাসচালিত নিজস্ব জেনারেটরে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কারখানা চালু রাখে। সেটাও গ্যাসের ঘাটতির কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তিতাস বা অন্যান্য সরবরাহ কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী ক্যাপটিভে গ্যাস দিতে পারছে না। ফলে শিল্পকারখানা চালু রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বহাল থাকলে শিল্পকারখানা ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটে যেসব শিল্পখাত সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়েছে, তাদের মধ্যে বস্ত্রখাত অন্যতম। বস্ত্রখাত এমন একটি খাত, যার ওপর মানুষের বস্ত্রের যোগান, গার্মেন্টসহ সম্পর্কিত অন্যান্য শিল্পের ভবিষ্যত অনেকাংশই নির্ভরশীল। এখাতে বড় অংকের বিনিয়োগ ছাড়াও লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। বস্ত্র-শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এই শিল্পের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী বলেছেন, গাজীপুর, নরসিংদী প্রভৃতি শিল্প এলাকায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না। এইসঙ্গে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন। মার্চে গ্যাস সঙ্কট শুরু হলেও এর সুরাহা হয়নি; উত্তরোত্তর সঙ্কট বেড়ে বর্তমান অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে। বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্ট শিল্পমালিকরা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ক্যাপটিভে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কারখানা চালু রাখা আর এখন সম্ভব হচ্ছে না। তার ভাষায়, কোনোরকমে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০-৪০ শতাংশ এখন ব্যবহার হচ্ছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে ১ কোটি ৬০ হাজার ডলারের বিনিয়োগ এবং অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক-কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বিটিএমএ’র মতে, শিল্পকারখানার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিকল্প নেই। এ বিষয়ে তার প্রথম প্রস্তাব: প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তার শিল্পমালিকরা গ্যাসের যুক্তিসঙ্গত মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে রাজি আছে। দ্বিতীয় প্রস্তাব: স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করতে হবে। তৃতীয় প্রস্তাব: কাতার ও ওমান থেকে প্রতিদিন ৫০০ এমএমসিএফ এলএনজি আসার কথা। কিন্তু আসছে ৩৬০ এমএমসিএফ। অবশিষ্ট ১৪০ এমএমসিএফ আনার ব্যবস্থা হলে গ্যাসের সংকট কিছুটা হলেও কাটবে। বিটিএমএ’র এসব প্রস্তাব বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য বলে আমরা মনে করি।

গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট স্বাভাবিক জীবনযাপন, উৎপাদন, কৃষি, পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্যমূল্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ফেলছে। জাতীয় অর্থনীতি, উন্নয়ন, আয়-উপার্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করে আনছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, উৎপাদন ব্যহত হবে, এটা কেমন কথা! কোনোভাবেই এটা মেনে নেয়া যায় না। বিদ্যুতের স্বয়ংভরতার গীত আমরা অনেক শুনেছি। এখন হঠাৎ করেই তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে বাগাড়ম্বর যতটা হয়েছে, কাজ ততটা হয়নি। এর পরিকল্পনা ও কার্যব্যবস্থায় যথেষ্ট ভুল-ত্রুটি ছিল। এখন সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত: গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনে চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে। এর বদলে এলএনজি আমদানিতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান আহরণ সম্ভব হলে বর্তমান পরিস্থিতি কখনোই সৃষ্টি হতো না। গ্যাস-বিদ্যুৎ কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে, দেশের মানুষ সেটা জানতে চায় না। তারা তাদের চাহিদামত গ্যাস চায়, বিদ্যুৎ চায়। সরকারের দায়িত্ব, এই জনচাহিদা পূরণ করা, নিশ্চিত করা। বস্ত্রখাতের মতো অন্যান্য শিল্পখাতও এখন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ক্ষতির শিকার। সুতরাং এই ক্ষতি থেকে তাদের উদ্ধার করতে হবে। নানা কারণে পণ্যের উৎপাদনব্যয় বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি সম্ভবনা কমার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় শিল্পের উদ্ধারের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা যেমন দরকার, তেমনি দরকার তার সুষ্ঠু ও ত্বরিত বাস্তবায়ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন