পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ইউক্রেনের পক্ষাবলম্বন এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ বিশ্বে আগামী বছর দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোমালিয়া, ইউথোপিয়াসহ বিশ্বের কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। যতদিন না ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হবে, ততদিন পুরো বিশ্ব শোচনীয় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে। এ থেকে উন্নত বিশ্বও রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালিসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। অথচ যুদ্ধ বন্ধের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। গত জুলাই মাসে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেভারভের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছিল। এই আলাপে উভয় দেশ খাদ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে সম্মত হয়। তারপরও বিশ্বে খাদ্যসঙ্কট ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মূল্যস্ফীতি তো বৃদ্ধি পেয়েছেই, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে।
আশার কথা হচ্ছে, বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগো’র মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। মে মাসের পর গত শুক্রবার দুই দেশের এই শীর্ষ দুই মন্ত্রীর মধ্যে কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে বৈশ্বিক সার্বিক নিরাপত্তা ও ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পেন্টাগন বলেছে, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক চরম সঙ্কটের মধ্যে দুই চিরবৈরি দেশের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক ও সাধুবাদযোগ্য, যদিও এ ধরনের আলোচনা আরও আগেই হওয়া উচিৎ ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মহামারিতে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পর ইউক্রেন যুদ্ধ ভয়াবহ সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এতটাই মারাত্মক হয়ে উঠেছে যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাকে সর্বকালের সবচেয়ে শোচনীয় পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে মদদ দিচ্ছে, তারাই ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে গেছে। যুক্তরাজ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হচ্ছে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালির মতো দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর পরিস্থিতি কি, তা বলা বাহুল্য। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো শুধুমাত্র তাদের অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে এ যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছে। ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে, রাশিয়াও তার দাবিতে অটল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকে গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য রাশিয়া যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ সঙ্কটকে তীব্র করে তোলা হয়েছে। এবার রাশিয়ায় রেকর্ড ১৫ কোটি টন শস্য উৎপাদিত হয়েছে। এই শস্য দিয়ে বিশ্বে সৃষ্ট খাদ্য সঙ্কট অনেকটাই কেটে যেত। খাদ্য সরবরাহ লাইন স্বাভাবিক থাকলে, উৎপাদিত এ শস্য বিশ্বের চাহিদা মেটাতে পারে। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো তাদের পাপেট রাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে যুদ্ধ টিকিয়ে রাখায় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ মসৃণ করা যাচ্ছে না। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পুরো বিশ্বে পড়ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মধ্যস্থতায় খাদ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ সহায়ক হলেও তা যথেষ্ট নয়। ইতোমধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ সীমিত হয়ে যাওয়ায় ইউরোপজুড়ে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে এখন দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং তা নিরসনে জরুরি উদ্যোগ না নিলে এক ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দেবে। বিশ্ব শান্তি, শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে পারমাণবিক বোমা হামলার যে ঘোষণা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দিয়েছেন তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মনে করছে, পুতিন তা করবেন না। তাদের এই মনে করায় এখন কিছু যায় আসে না। বরং এমন আশা না করে, যাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না বাঁধে তার উদ্যোগ নেয়াই সমীচীন। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, তা নিরসন এবং যুদ্ধ বন্ধে গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিৎ। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হলেই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা মনে করি, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেভেরভ অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনও একজন মেধাবী ও পন্ডিত ব্যক্তি। তারা উদ্যোগ নিলে এবং তাদের উদ্যোগের সঙ্গে দুই দেশের দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগ সংযুক্ত হলে যুদ্ধ বন্ধ দ্রুতায়িত হতে পারে। সুতরং শুরু হওয়া আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ কোনো সমাধান এনে দেবে না। ধ্বংস ও ক্ষতিই যুদ্ধের পরিণতি। উভয় দেশকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে হবে। বুঝতে হবে, শুধু ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষার নামে নিজের জেদ বলবৎ রাখতে বিশ্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া তার উচিত হবে না। ইউক্রেনেরও সেটা অনুধাবন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।