Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমাজ সংস্কারে নবীজি (সা.) এর ভূমিকা

নাজমুল হাসান সাকিব | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন মহান সমাজ সংস্কারক। প্রাক- ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। গোত্র কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি, সামাজিক বিশৃঙ্খলার নৈরাজ্য পূর্ণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিল গোটা সমাজ। সামাজিক সাম্য- শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ, নারীর মর্যাদা ইত্যাদির কোনো বালাই ছিল না। জঘন্য দাসত্ব প্রথা, সুদদ, ঘুষ, জুয়া মদ, লুন্ঠন, ব্যভিচার, পাপাচার, অন্যায়- অত্যাচারের চরম তাণ্ডবতায় সমাজ কাঠামো ধসে পড়েছিল, এমন এক দুর্যোগময় যুগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আবির্ভাব।

তিনি আরবের বুকে বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করে বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে নবুওতের আলোকে উদ্ভাসিত করেন। ঐতিহাসিক রেমন্ড লার্জ বলেন, The founder of islam is in fact the promoter to the first social and international revolution of which history gives mention. (প্রকৃতপক্ষে সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক এর নাম ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে)।
সমাজ সংস্কারে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কৃতিত্ব : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজের যাবতীয় অনাচার দূর করে যে এক জান্নাতী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করেন। নিম্নে তার সংস্কারের সামান্য নমুনা পেশ করা হল-
তাওহিদের আদর্শে সমাজের পত্তন : ধর্মীয় ক্ষেত্রে নানা অনাচার, পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করে সমগ্র সমাজ- সংগঠনকে এক আল্লাহে বিশ্বাসী তাওহিদের আদর্শে সমাজকে নবরূপে রূপায়িত করেন। সকল ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের উৎস একমাত্র আল্লাহকেই মেনে নিয়ে সমাজের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ব্যবস্থা করেন।
মানবতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন : সমগ্র আরবদেশ জঘন্য পাপ ও অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাম্য অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্বমানবতার ভিত্তিতে যে এক উন্নত ও আদর্শ সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করেন পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই। তাঁর প্রবর্তিত সমাজে গোত্রের বা রক্তের সম্পর্কের চেয়ে ঈমানের বন্ধনই ছিল মজবুত ঐক্যের প্রতীক। তিনি অন্ধ অভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদায় গর্বের মূল নির্মমভাবে কুঠারাঘাত হানেন এবং সাম্য ও ন্যায় এর ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ কাঠামো প্রস্তুত করেন। এ একটিমাত্র আঘাতেই আরবের একমাত্র বন্ধন গোত্রপ্রীতি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং ঈমান এই বন্ধনের স্থান দখল করল।
তিনি ঘোষণা করলেন, ‘সকল মানুষ সমান সমান’। মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর সবদিকে অনুগত ও মানব এর সর্বাধিক কল্যাণকামী। তার সমাজ ব্যবস্থায় উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র, কালো সাদার বৈষম্য রইল না। মানুষে মানুষে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানবতার অতুজ্জ্বল আদর্শে সমাজ বন্ধন সুদৃঢ় সুদৃঢ করেন। আরবের ইতিহাসে রক্তের পরিবর্তে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের এটাই প্রথম দৃষ্টান্ত।
দাসপ্রথার উচ্ছেদ : আরবে বহু যুগ ধরে গোলামীপ্রথা প্রচলিত ছিল। মনিববগণ গোলামদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করত। মানুষ হিসেবে তাদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। তারা পশুর মতো জীবন যাপন করত। তাদেরকে বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। হযরত মুহাম্মদ সাঃ মনিবদের নির্দেশ দিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি সদাচরণ করো। তোমরা যা খাও, পরিধান করো, তা তাদের খেতে এবং পরিধান করতে দাও। তিনি তাদের মুক্তির পথ নির্দেশ করে ঘোষণা দিলেন, গোলামকে আজাদীদানের কাজ আল্লাহর কাছে একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তিনি অনেক দাস কে মুক্তি করে দেন এবং অনেক সাহাবী তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তার উদারতার জন্য দাস বেলালকে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন এবং ক্রীতদাস জায়েদকে সেনাপতিত্বে বরণ করে দাসদের পূর্ণমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন।
নারীর মর্যাদা দান : তৎকালীন আরবে নারীদের ভোগ্য সামগ্রী মনে করত। তারা ছিল পুরুষদের দাসীমাত্র। কন্যা সন্তানদের জীবন্ত দাফনপ্রথা সিদ্ধ ছিল। পরিবারের কর্তা ইচ্ছে করলে নারীকে ক্রয়-বিক্রয় এবং হস্তান্তর করতে পারতো। পিতা এবং স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোন অংশ ছিল না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সমাজে অভূতপূর্ণ মর্যাদা দিলেন। তিনি নারী-পুরুষ সকলকে সমমর্যাদা দিলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘জননীর পদতলে সন্তানের বেহেশত’। তিনি আরো বলেন, ‘সেই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করে’। তিনি সর্বপ্রথম নারীগণকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করেন। এসবের জন্য নারী জাতি সমাজের অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ এ পরিণত হল।
সংঘাতমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন আরবের বিভিন্ন গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই থাকত। সামান্য অজুহাতে ভয়াবহ যুদ্ধের দামামা বাজত আর দীর্ঘকাল যাবত তা দাবানলের মতো জ্বলতে থাকত। রক্তপাত ও লুন্ঠন ছিল তাদের নিত্যদিনের পেশা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সমস্ত অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রাক-নবুওয়াত ‘হিলফুল ফুজুল’ এবং পরে ‘মদিনা সনদ’ এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি আনয়ন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমাজ সংস্কারে নবীজি (সা.) এর ভূমিকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->