পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চরম নৈতিক অবক্ষয়, আকাশ সংস্কৃতি, মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা
একের পর এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশেষ করে রাজধানীতে বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুরা এখন তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘরের বাইরে বেরিয়েও নিরাপদ নয়। নারী ও মেয়েরা একদিকে শিকার হচ্ছে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের। অন্যদিকে তার সঙ্গে থাকা আপনজনটিও বিপদমুক্ত নয়। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধর্ষকরা প্রতিশোধ নিতে সংঘবদ্ধভাবে ভুক্তভোগীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। জনবহুল এলাকা বা ডেকে নিয়েও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, আকাশ সংস্কৃতি, মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। ধর্ষণের মামলা চলাকালীন বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, জামিন অযোগ্য অপরাধ হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা। অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণের ব্যাপারে যদি আলাদা সেল, মামলার গতি তদারকি করা হয় তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমতে পারে।
ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী নুরুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় প্রায় প্রতিদিনই আদালত অঙ্গনে আসছেন ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা। কিন্তু অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের সাজাও হচ্ছে না। নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে বিচারের বাণী। অনেক ধর্ষণের মামলায় তদন্তে অবহেলা, গাফিলতি আর অদক্ষতার কারণে পার পেয়ে যায় জড়িতরা। অনেক সময় আদালতে সাক্ষী আনা আর সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে পুলিশ আর পিপিদের অযতœ ও গাফিলতিও থাকে।
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, গত আট মাসে দেশে মোট ১হাজার ৩শ’৮৭জন ধর্ষনে শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৮১৩ নারী ও ৫৭৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষনে শিকার হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে কন্যা ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৬ জন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট এক হাজার ৬২৭ নারী এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩ জন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর শুক্রাবাদে এক বিউটিশিয়ানকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত ১১ অক্টোবর। দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বখে যাওয়া দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ। এরা হলেন- মো. রিয়াদ (২৪) ও ইয়াছিন হোসেন ওরফে সিয়াম (২৩)। পরিবারের সাথে রাগ করে গত শুক্রবার ৭ অক্টোবর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ১৬ বছরের এক তরুণী। নেত্রকোন জেলার রেল ষ্টেশন থেকে তিনি ওইদিন বিকেলে ৩টার দিকে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে রাত ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসে। পরে ট্রেনের বগির ভেতরে নিয়ে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে তাকে গণধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ৫জনকে গ্রেফতার করলেও মূলহোতা এখনও পলাতক। ডেমরায় ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চার দিনেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৬ অক্টোবর বিকেলের দিকে ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় কাশবনে এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক অপরাধ। এ জন্য সামাজিকভাবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় দ্রæত জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হলেও নানা কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। দ্রæত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেও ধর্ষণের ঘটনা কিছুটা কমবে বলে তিনি মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন নারী আমার মা বা বোনের মতো। এ বিষয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে শেখানো জরুরি। শুধু আইন প্রয়োগ করে কোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা একটি মুসলিম দেশে বসবাস করছি। আল-কোরআর ও হাদিসের ভিত্তিতে ধর্ষণের কুফল সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ইনকিলাবকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনা এখন অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে শতকরা এক ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় বিচার হয়। বাকী সব ধর্ষণের ঘটনায় কোন না কোন ভাবে রক্ষা পেয়ে যায় জড়িতরা।
তিনি বলেন, ধর্ষণ বন্ধ বা কমিয়ে আনতে গণসচেতনা প্রয়োজন। একই সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালী লোকজন জড়িত থাকায় ভিকটিমের পরিবার ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। অনেকে আবার এমন নির্যাতনের শিকার হয়েও সামাজিক মর্যাদা হানির আশঙ্কায় আদালত বা পুলিশের দোরগোড়ায় পৌঁছাচ্ছেন না। ফলে এসব অপরাধ দিন দিন বাড়ছেই। ধর্ষণের বিরুদ্ধে এখনই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; না হলে সামনে এমন অপরাধের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে।
এ ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান এলিনা খান ইনকিলাবকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনে সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা যা দরকার সেগুলোর কোনটাই সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। একজন ধর্ষিতার জন্য দরকার মেডিকেল টেষ্ট, মামলার প্রয়োজনে সাক্ষী, সুষ্ঠু তদন্ত। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে না। মামলা জটের কারনে দীর্ঘ সময় বিচার প্রক্রিয়া থেমে থাকে। একদিকে ভুক্তভাগী থাকেন অসুস্থ ও অসহায়। অপরদিকে রেপিষ্টগণ থাকে সমাজের প্রভাবশালী ও শক্তিধর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এখন বাসে, ট্রেনে পথে-ঘাটে রেপের মতো ঘটনা ঘটছে। এর প্রধান কারন হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার শিথিলতা।
তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা আদালত থাকা দরকার। যাদের কাজ থাকবে, এ ধরনের মামলার আলামত সংগ্রহ, তদন্ত, সাক্ষীদের আদালতে হাজির করাসহ আনুষঙ্গিক সব কিছু। এক কথায় আগে নারী নিরাপত্তার দিকটি রাষ্ট্র ও সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।