Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণ-পশ্চিমের ১০ জেলায় ৫২৪ কোটি টাকা খুলনায় ৩১ শাখায় ১০ কোটি

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:০৭ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় অগ্রণী ব্যাংকের ১৩৫টি শাখায় খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৫২৪ কোটি টাকা। ঋণ আদায়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অর্থ ঋণ আদালতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ২০৭১টি মামলা দায়ের করেছে। ঋণখেলাপীর তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পেঙ্গুইন আইস এন্ড ফিস প্রসেজিং লিঃ ও জিয়া সরকারের মৎস্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: আফতাব উজ জামানের নাম। দ্বিতীয় পর্যায়ের ঋণখেলাপীরা হচ্ছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দৌলতপুরের কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ও নওয়াপাড়া এলাকার সার ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, অগ্রণী ব্যাংকে খুলনাঞ্চলে ৩১ শাখায় প্রতি মাসে লোকসান দশ কোটি টাকা।
ব্যাংকের সূত্রমতে, বিভাগের ১৩৫টি শাখার মধ্যে দৌলতপুর, যশোর শাখায় খেলাপীদের সংখ্যা বেশি। তিন বছর আগে আন্তজার্তিক বাজারে পাটের মূল্যে ধ্বস নামায় দৌলতপুরের পাট ব্যবসায়ীরা খেলাপি হয়ে পড়ে। পরবর্তী ব্যবসা চালুর জন্য চলতি মূলধন বলতে কিছুই ছিল না। যশোরের নওয়াপাড়ার সার ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। দৌলতপুরের উল্লেখ্যযোগ্য ঋণখেলাপিরা হচ্ছেন- সাত্তার জুট বেলিং, গোল্ডেন জুট, একতা জুট, এইচকে জুট, এসএ করিম জুট, পাঙ্গসা জুট, কুমিল্লা জুট, বটদিয়া জুট ও দৌলতপুর জুট। নওয়াপাড়ার ঋণ খেলাপী সার ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন- ব্রাদার্স করপারেশন, নিউ রোজ করপারেশন, নওয়াপাড়া এন্টারপ্রাইজ, এম রহমান ট্রেডার্স, এ হোসেন এন্ড সন্স, মিজানুর রহমান, লিজার্স ফার্ম ও ভূইঁয়া ব্রাদার্স। পাট রপ্তানিকারক ও সার ব্যবসায়ীদের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ একশ’ কোটি টাকা।
ব্যাংকের সূত্র জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের পেঙ্গুইন আইস এন্ড ফিস প্রোসেসিংয়ের কাছে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং একই স্থানে পেঙ্গুইন সাইন্টিফিক প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ লাখ টাকা। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জামানায় মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সাতক্ষীরা শহরের অধিবাসী ডা: আফতাব উজ জামানের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ কোটি ৮৮লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হলে হাইকোর্ট তার স্থগিত আদেশ দেয়।
ব্যাংকের খুলনা সার্কেলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: আনোয়ারুল ইসলাম জানান, খেলাপি ঋণ অর্থ ঋণ আদালতে ৭৮২টি এবং উপজেলা পর্যায়ে এক হাজার ২৯৮টি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একশ’ দিনের কর্মসূচির আওতায় ১২০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গেল মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরার জোনাল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম জানান, ব্যাংকের ১০টি শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, এখনকার দু’টি শাখা লোকসানের আছে। খেলাপি আদায়ের জন্য ৩৮২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে জেলার হায়বাদপুর এলাকার উত্তরণ আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজের মালিক এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ নেবার পর নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার জোনাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপল অফিসার হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী জানিয়েছেন, এখনকার ২১টি শাখায় ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বিপরীতে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তিন কোটি ৭৭ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা Ñ ব্যাংক বিভাগের ১৩৫টি শাখায় ২০১৬ সালে দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। গেল মাস পর্যন্ত এক হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। ব্যাণিজ্যিক গৃহ নির্মাণ, মৎস্য চাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি-পল্লী ইত্যাদি সেক্টরে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এবছর নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের লাভের পরিমাণ ২১ কোটি ৫৬ লাখ। বিভাগের ৩১টি শাখা লোকসানী বলে চিহিৃত হয়েছে।
খুলনাঞ্চলে ৩১ শাখায় লোকসান দশ কোটি টাকা ঃ খুলনা বিভাগের দশ জেলায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩১ শাখাকে লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রতিটি শাখায় মাসে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকা। শাখাগুলো বছরে দশ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের বাকি ১০১টি শাখায় বছরে লাভ হচ্ছে ২৬ কোটি টাকা। পাট ব্যবসায়ীরা ঋণের টাকা পরিশোধ ব্যর্থ, ঋণ দেয়ার সুযোগ কম, ব্যবসা কেন্দ্রে ব্যাংকের শাখা না হওয়ায় এবং হিমায়িত চিংড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের টাকা বকেয়া রাখায় এসব শাখা লোকসানের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। এ অঞ্চলে ব্যাংকের ১৩৫ শাখার মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ব্যাংক সূত্র জানায়, রাজনীতিকদের সুপারিশ ও তদবিরের কারণে অনেক স্থানে ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে। সেখানে বাণিজ্যিক মোকাম নেই। ঋণ গ্রহীতাদের পরিমাণ কম। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একটি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বড় অংকের টাকা ঋণ নিয়ে মালিকানা অন্যের কাছে হস্তান্তর করেছে। যশোরের নওয়াপাড়া বাণিজ্যক কেন্দ্রে সার ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না। খুলনার দৌলতপুরের কাঁচা পাট রফতানিকারকরা ২০১২-১৩ অর্থবছরে বড় অংকের লোকসান দিয়ে তারা মূলধন হারায়। তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণেই ব্যাংকের শাখাগুলোকে লোকসান গুণতে হচ্ছে। নওয়াপাড়ার সার ব্যবসায়ী ও খুলনার দৌলতপুর কাঁচা পাট রফতানিকারকদের কাছে ব্যাংকের ঋণ একশ’ কোটি টাকার ওপরে। লোকসানী ব্যাংকের শাখাগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে, খুলনার দৌলতপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, সাতক্ষীরা জেলা সদরের বড় বাজার, কুষ্টিয়ার জেলা সদর, এ জেলার এমসিডি রোড ও উজানগ্রাম, যশোরের বাঘারপাড়া, নড়াইল জেলার কলাবাড়িয়া, রতডাঙ্গা, আউইয়া ও নড়াইল জেলা সদর।
ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: আনোয়ারুল ইসলাম জানান, লোকসানী শাখাগুলোকে লাভে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক শাখাকে বছরে ৫টি করে প্রকল্পে নতুন ঋণ দিতে হবে। মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের খোঁজা হচ্ছে। দৌলতপুর শাখার ব্যবস্থাপক মোস্তাকিন বিলার অভিমত, তিন বছর আগের পাট রফতানিতে ধস নামায় লোকসান টানতে গিয়ে ঋণ গ্রহীতারা হিমশিম খাচ্ছে। এই শাখা মূলত, কাঁচাপাট রফতানিকারক কেন্দ্রিক। পাট রফতানিকারকরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই শাখায় মাসে গড়ে দুই লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা জোনাল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন জেলার দশটি শাখার মধ্যে তিনটি লোকসানী। এখানো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কুষ্টিয়া জোনাল অফিসের সিনিয়র জোনাল অফিসার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জানান, এ অঞ্চলে ঋণ গ্রহীতার পরিমাণ কম। আদায় পরিস্থিতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ।
নড়াইলের জোনাল অফিসার মৃণাল কান্তি ঘোষ জানান, ব্যবসা কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যাংকের শাখা দূরে হওয়ায় ঋণ গ্রহীতারা আসতে চান না। জেলার দশটি শাখার মধ্যে ৫টি লোকসানী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ