Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মামলায় মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন ট্রাম্প

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৫:৩৭ পিএম

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে এখন যেসব আইনি লড়াই রয়েছে সেগুলো বিস্তৃত এবং বেশ বৈচিত্র্যময়। তবে এর মধ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

গত বছরের ৬ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের কথিত ভূমিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি ফেডারেল সরকারি সংস্থার তদন্ত চলছে। ঐ দিন তার একদল উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী বিজয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। এই তদন্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে একটি কংগ্রেস কমিটির তদন্ত যেখানে ঐ ঘটনাকে ঘিরে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড তারা খুঁটিয়ে দেখছেন। এ তদন্তের শুনানি তারা টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচার করছে যেখানে দেখা হচ্ছে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে তার দাবির জেরেই ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো: ৬ জানুয়ারিতে মার্কিন বিচার বিভাগের ফৌজদারি তদন্ত এবং নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের প্রচেষ্টা। তবে এই তদন্তটি বেশ গোপনীয়ভাবে চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি বৃহত্তম পুলিশি তদন্ত। কিন্তু ট্রাম্প নিজে এই তদন্তের কতটা লক্ষ্যবস্তু, তা স্পষ্ট নয়। তিনি ঐ দাঙ্গার দায় অস্বীকার করেছেন এবং কংগ্রেশনাল কমিটির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন এটি একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বা প্রহসনের আদালত যেটি পরিচালিত হচ্ছে ‘অনির্বাচিত ছদ্ম-কমিটির’ মাধ্যমে।

নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতি হয়েছে বলে কোন প্রমাণ ছাড়াই তিনি আগে যে অভিযোগ করেছেন, সেটা তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। কংগ্রেশনাল কমিটিতে রয়েছেন সাতজন ডেমোক্র্যাট এবং দু'জন রিপাবলিকান। এই কমিটির বিচার করার ক্ষমতা নেই, তবে এটি ট্রাম্পকে সাপিনা করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর মানে হলো, তিনি আইনগতভাবে কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হবেন। তবে মনে করা হচ্ছে, তিনি এই সমনকে উপেক্ষা করবেন, এবং এটি একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে যাবে।

এই কমিটি আরও বিবেচনা করছে যে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার সুপারিশ করে একটি ফৌজদারি রেফারেল বিচার বিভাগে পাঠানো হবে কিনা। পদক্ষেপ হিসেবে এটা তেমন বড় কিছু না, তবে এতে তদন্তকারীদের উপর চাপ বাড়তে পারে। বিচার বিভাগের ফৌজদারি তদন্তের ফলে যারা ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিল এরকম শত শত লোকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই তদন্তে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়নি, তবে এটি একটি সম্ভাবনা হিসেবে রয়ে গেছে। তাত্ত্বিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে, যদি তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন তার অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

মার্কিন বিচার বিভাগ হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সরিয়ে নেয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর এগুলি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা এখন দেখছেন, এই নথিগুলি কীভাবে সেখানে সংরক্ষণ করা হয় এবং কে কে এগুলো দেখতে পেয়েছে। গত অগাস্ট মাসে ফ্লোরিডা সৈকতের পাশে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিশাল ভিলায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয় এবং সেখান থেকে ১১,০০০ নথি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি দলিল গোপন বলে চিহ্নিত করা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটিকে ‘টপ সিক্রেট’ বা অত্যন্ত গোপনীয় বলে লেবেল লাগানো ছিল। এটি মোটেও অবাক হওয়ার মত বিষয় নয় যে এই পর্যায়ে এসব নথিতে কী আছে সে সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। কিন্তু গোপনীয় বা অত্যন্ত গোপনীয় দলিলে সাধারণত এমন সব তথ্য থাকে যা প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।

এটি এমন একটি ফৌজদারি তদন্ত যার জেরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হতে পারে৷ অন্যান্য আইনের মধ্যে, মার্কিন বিচার বিভাগ মনে করছে যে ক্ষমতা ত্যাগের পরও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য, যা বেহাত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি পারে, এসব তথ্য নিজের হাতে রেখে ট্রাম্প মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘন করেছেন। গোপন দলিলপত্র সম্পর্কিত অভিযোগগুলির পাশাপাশি সরকারি কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেক অপরাধ বিবেচনা করছেন: বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা। এই তদন্তকে ঘিরে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এখন নিয়ে বিচার বিভাগের সাথে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

নিউইয়র্কের প্রসিকিউটররা সাবেক প্রেসিডেন্টের পারিবারিক সংস্থা ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ওপর তদন্ত করছেন। নিউইয়র্কে দুটি তদন্ত চলছে- একটি দেওয়ানি এবং অন্যটি ফৌজদারি। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস দেওয়ানি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন (যা পরে ফৌজদারি মোকদ্দমায় রূপ নিতে পারবে না) এবং কোম্পানিটি গত কয়েক দশক ধরে নানা ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত কিনা তা নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত চালাচ্ছেন।

এসবের মধ্যে রয়েছে গলফ কোর্স এবং হোটেলের মতো রিয়েল এস্টেটের মূল্য বাড়িয়ে দেখানোর কথিত অভিযোগ, যাতে আরও সুবিধাজনক ঋণ এবং আরও ভালো কর সুবিধা পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা ফৌজদারি তদন্ত চালানো হচ্ছে ম্যানহাটন ডিসট্রিক্টের অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের নেতৃত্বে, এবং নিউইয়র্ক সিটির তদন্তের সাথে সম্পর্কিত বলে তারা একই বিষয়ে তদন্ত করছে। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ