Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো: বদরুজ্জামান খান সবুজ, গৌরনদী থেকে : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক সৈকত গুহ পিকলুর বিরুদ্ধে স্থানীয় বন কর্মকর্তার যোগসাজশে আশোকাঠি-বিল্বগ্রাম ভেরিবাঁধ সড়কের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের ১৮টি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গত এক সপ্তাহে গাছ কাটা শ্রমিক দিয়ে বিল্বগ্রাম হাটের পশ্চিম ও উত্তর পাশের দেড় লক্ষাধিক টাকার সরকারি গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। শুধু গাছ কেটেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, সড়কের মাটি খুঁড়ে গাছের গোড়া তুলে নিয়ে শেকড় মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এতে প্রায় দু’শ ফুট সড়কই এখন ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
গৌরনদী উপজেলা বন বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে গৌরনদী উপজেলার পালরদী মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পশ্চিম পাশ থেকে-বিল্বগ্রাম এলাকার নুরু গোমস্তার বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ সড়কের দু’পাশে সামাজিক বনায়ন করার আবেদন করেন বিল্বগ্রাম সামাজিক বনায়ন সুবিধাভোগী সমিতি। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে উপজেলা বন বিভাগ আবেদনকারী সমিতির পরিচালনা কমিটির সাথে সামাজিক বনায়নের চুক্তি সম্পাদন করেন। চুক্তি সম্পাদনের পর এর আওতায় উপজেলা বন বিভাগের অর্থায়নে সমিতির উদ্যোগে ওই সড়কের দুই পাশে রেইনট্রি, মেহগনি, কড়ই, শিশু, রাজকড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুই সহস্রাধিক গাছের চারা রোপণ করেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওই সড়কের গাছ বিক্রির টাকা সুবিধাভোগী দ্বিতীয় পক্ষ শতকরা ৫৫ ভাগ, পাউবো (ভেড়িবাঁধের মালিক) শতকরা ২০ ভাগ, বন বিভাগ শতকরা ১০ ভাগ, পুনরায় সামাজিক বনায়নের জন্য শতকরা ১০ ভাগ, ইউপি পরিষদ শতকরা ৫ ভাগ পাবেন।
বিল্বগ্রাম সামাজিক বনায়ন সুবিধাভোগী সমিতির সভাপতি আলহাজ মো: হামিদ মিয়া জানান, এ সমিতির আওতায় ১৩৯ জন সদস্য রয়েছে। যারা এই সামাজিক বনায়নের বড় অংশের মালিক। আমাদের না জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু কয়েক দিন ধরে গাছ কাটা শ্রমিক দিয়ে বিল্বগ্রাম হাটের উত্তর ও পশ্চিম পাশ পর্যন্ত প্রায় ২’শ ফুট ভেড়িবাঁধ সড়কের ছোট-বড় ১৫-২০টি মেহগনি ও রেন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। এরপরও পল্লী বিদ্যুতের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ লাইনের পাশের ও নিচের গাছ শ্রমিক দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিল্বগ্রাম হাটের পশ্চিম পাশের সড়কের আটটি মেহগনি গাছ কেটে নেয়ার পর মাটি খুঁড়ে ওই গাছের গোড়া তুলে নিয়ে শেকড় মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। হাটের উত্তর পাশের সড়কের ১০টি গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। হাটের পশ্চিম ও উত্তর পাশ পর্যন্ত প্রায় ২শ’ ফুট সড়কের ছোট-বড় ১৮টি গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। বিল্বগ্রাম হাটের উত্তর পাশের সড়ক থেকে গাছ কাটা চার শ্রমিককে গাছ কাটতে দেখা যায় এবং পাশে দাড়িয়ে ইউপি সদস্য মো: মিজান সরদার তদারকি করে আসছিল। এ সময় গাছ কাটা শ্রমিক সোহেল মল্লিক, মঞ্জুু সরদার, আব্দুল আলিম মল্লিক, ছালাম তালুকদার বলেন, চেয়ারম্যান পিকলুর নির্দেশে আমরা এ গাছ কাটছি। আমাদের মজুজির (বদলার) টাকা চেয়ারম্যান দিচ্ছেন। এ বিদ্যুৎ খুঁটি থেকে ওই বিদ্যুৎ খুঁটি পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইনের নিচের আরো ২৫-৩০টি গাছ চেয়ারম্যান আমাদের কাটতে বলেছেন।
উপজেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিল্বগ্রাম এলাকার কয়েকজনে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে চেয়ারম্যান গাছ কাটা শ্রমিক দিয়ে নির্বিচারে গাছগুলো কাটছেন। এরপর ওই গাছগুলো মিজান মেম্বারকে দিয়ে গাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। গাছ ব্যবসায়ী মো: জামাল গাছের ১০-১৫টি বড় টুকরো মো: মানিকের স’মিলে নিয়ে রেখেছেন। উপজেলা বন কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তারা জানান।
উল্লিখিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সৈকত গুহ পিকলু সুঠোফোনে বলেন, গাছ কাটার বিষয় আমি কিছুই জানি না। তবে আমি শুনেছি, উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজান সরদার বিল্বগ্রাম হাটের উত্তর পাশে পল্লী বিদ্যুতের নির্মাণাধীণ লাইনের নিচে সড়কের পাশের তিন-চারটি গাছ কেটেছে।
যোগসাজশ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মনীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, সড়কের সামাজিক বনায়নে কয়েকটি গাছ পল্লী বিদ্যুতের নতুন লাইনের নিচে পড়েছে। তাই চেয়ারম্যান পিকলু শ্রমিক দিয়ে সড়কের চারটি গাছ কাটছিল। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটতে বাধা দেই এবং কাটা গাছ অফিসে পাঠানোর কথা বলে এলে চেয়ারম্যান গাছের কিছু টুকরো অফিসে পৌঁছে দিয়েছেন। এরপর যদি আর কোনো গাছ কাটে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মনীন্দ্রনাথ হালদার জানান।
উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহাবুব আলম বলেন, যে কোনো উন্নয়ন মূলক কাজেও কমিটির অনুমোদন ছাড়া সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা অবৈধ। এ ব্যাপারে উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মনীন্দ্রনাথ হালদারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়োজনে নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে ইউএনও জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সামাজিক

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ