মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইউক্রেন জুড়ে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। কিয়েভসহ বড় শহরে গত দুইদিনে প্রায় একশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। পানি সরবরাহ ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। এই সংক্রান্ত বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনটি দৈনিক ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো_
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার দখল করা অনেক এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। এমন অবস্থায় তিন লাখ সৈন্যের রিজার্ভ তলব করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেন যুদ্ধে কি কৌশল নিচ্ছে রাশিয়া?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন জুড়ে এভাবে ব্যাপক হামলার ঘটনা গত কয়েক মাসে দেখা যায়নি। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যখন রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন এরকম কিয়েভের আশেপাশের এলাকায় হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া।
কিন্তু পরবর্তীতে কিয়েভ থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হওয়ার পর মূলত পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো দখলে রাখতেই রাশিয়া মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু ক্রিইমিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাশিয়া আবার হামলা শুরু করেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তিনিই এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার তৈরি একটি সেতুর বিস্ফোরণের জন্য তিনি ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও রাশিয়া ইউক্রেনে পুরাদস্তুর সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে না। তিনি মনে করেন, আসলে তারা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে একটা বার্তা দিতে চাইছে।
তিনি বলেন, 'রাশিয়া প্রথমে কিয়েভে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনে সরকার পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকাগুলো দখল করে নেয়া এবং দক্ষিণের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়া। তারা কিয়েভ বা উত্তরের এলাকায় সাফল্য পায়নি কিন্তু পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ এলাকায় কিছুটা সফলতা পেয়েছিল।'
কিন্তু গত ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে নেটোর ব্যাপক সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে রুশ বাহিনীকে অনেকটা হটিয়ে দিতে পেরেছে। রাশিয়ার দখলে ছিল, এমন প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা ইউক্রেনের বাহিনী আবার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো তারা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে গাড়ি বোমা হামলা করে রুশ ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে।
অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, 'আমার ধারণা, সেজন্য সৈন্য না পাঠিয়ে, ভূমি যুদ্ধ না করে, ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনীয়দের বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে যুদ্ধ এখানেই আপাতত তোমরা ঠেকিয়ে রাখো। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পাল্টা আক্রমণ করার সম্ভাবনা ও সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে। ইউক্রেন ও নেটোকে সেটা রাশিয়া পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে চাইছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। ইউক্রেনীয়রা সাফল্য পেতে থাকলে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণে যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারবে।
ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক মুরাত আসলান বলেন, 'এসব হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জনগণের কাছেও প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করতে সক্ষম। ক্রিমিয়ার ব্রিজে হামলায় এটা প্রমাণ হয়েছে যে, রাশিয়ার সৈন্যরা দেশকে বাইরের হামলা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছে না। ফলে তিনি নিজের দেশের জনগণকে জানাতে চান যে, রাশিয়ার ওপর হামলা হলে তারা শক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই সঙ্গে রাশিয়া ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই বার্তাও দিতে চায়, তারা কোনভাবেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা মেনে নেবে না।'
রিজার্ভ সৈন্য কতটা কাজে আসবে রাশিয়ার
ধারণা করা হয়, রাশিয়া তাদের প্রায় ১৯০,০০০ নিয়মিত সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য মোতায়েন করেছে। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্য তলব করেছে রাশিয়া।
সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিজার্ভ সৈন্য ডাকার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।
সামরিক বিশ্লেষক মুরাত আসলান বলেন, একটি যুদ্ধে নিয়মিত সেনাবাহিনী সফল হলে রিজার্ভ সৈন্য তলব করার দরকার হয় না। রিজার্ভ সৈন্য তখনই ডাকা হয় যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিয়মিত সৈন্যদের ক্ষতি সাধন হয়।
ইউক্রেনের বাহিনীর কাছে হেরে এর মধ্যেই রাশিয়াকে বেশ কিছু এলাকার দখল হারাতে হয়েছে। দখল করা এলাকাগুলোয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য রাশিয়াকে লড়াই করতে হচ্ছে।
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, 'কিন্তু রিজার্ভ সৈন্যদের কাছ থেকে যুদ্ধের সফলতা আশা করা হয়না। আমার ধারণা, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলো রক্ষায় তারা প্রতিরক্ষার বা দখল ধরে রাখতে ব্যবহার করা হবে। আর নিয়মিত যে বাহিনী রয়েছে, তাদের পাঠানো হবে যুদ্ধ করার জন্য বা ইউক্রেনের বাহিনীকে হটিয়ে দেয়ার জন্য।'
কিন্তু আলী বলছেন, রিজার্ভ সৈন্যদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং মোতায়েন করতে বেশ সময় লাগবে।
রাশিয়া কি আবার পুরাদস্তুর হামলা চালাবে?
ইউক্রেনে গত বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর সময় সেটিকে সীমিত সামরিক অভিযান বলে বর্ণনা করেছিল রাশিয়া। তখন তারা একে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' আখ্যা দিয়েছিল।
কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে, সেটা আর সীমিত সামরিক অভিযানের মধ্যে নেই। কারণ যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে কোটি কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে ন্যাটো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে।
সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর বেশ বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। রাশিয়ার সেনাদলও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর অর্থ রাশিয়া যেসব লক্ষ্য নিয়ে ইউক্রেনে সমরাভিযান শুরু করেছিল, তার অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা চালালেও রাশিয়া গত বছরের মতো আর ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা শুরু করবে বলে মনে করেন না ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুরাত আসলান।
তিনি বলছেন, 'রাশিয়া এর মধ্যেই তাদের দখল করা এলাকা ধরে রাখা নিয়ে সংকটে রয়েছে। নতুন করে যুদ্ধ করতে গেলে তাদের বিশাল সৈন্য বাহিনী, সরঞ্জাম লাগবে। বরং তাদের কিছু কিছু এলাকা থেকে হটে যেতে হয়েছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে তারা নতুন করে বড় ধরনের অভিযান চালানোর চেষ্টা করবে বলে আমার মনে হয় না।'
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তবে ইউক্রেনে গত এক বছর ধরে রাশিয়া হামলা চালিয়ে গেলেও এখনো তারা নিজেদের পুরোপুরি ক্ষমতা ব্যবহার করেনি। ধারণা করা হয়, রাশিয়া তাদের প্রায় ১৯০,০০০ নিয়মিত সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য মোতায়েন করেছে। কিন্তু রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডারের ব্যবহার দেখা যায়নি।
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে, কিন্তু এরপরেও এখনো রাশিয়া ইউক্রেনে তার বিমান বহর, নৌ বহর, ক্ষেপণাস্ত্র বহর, আধুনিক সামরিক অস্ত্র পুরোপুরি ব্যবহার করেনি।
তিনি বলেন, 'রাশিয়া কখনোই ইউক্রেন যুদ্ধকে একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ বলেনি। সেজন্য যে পরিমাণ সমর সামগ্রী, জনবল মোতায়েন করা দরকার, সেটাও তারা করেনি। বিমান ও নৌ হামলার ক্ষেত্রেও সীমিত শক্তি প্রয়োগ করেছে।'
আলী বলেন, 'রুশ বাহিনীর মূল কিছু ইউনিট এবং যে বিশাল বিমান বহর, নৌ বহর বা ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা রয়েছে, সেগুলো তারা ধরে রেখেছে যদি নেটোর সঙ্গে তাদের কোন রকম সংঘাত বাধে, তখন সেগুলো ব্যবহার করার জন্য।'
আলী বলছেন, 'নেটোর সঙ্গে রাশিয়া সরাসরি এখনো লড়াই করছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে যে করবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা সামরিক শক্তির সামান্য অংশ ব্যবহার করেছে ইউক্রেনের যুদ্ধে। বাকি অংশ তারা ধরে রেখেছে নেটোর সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবেলা করার জন্য।'
তিনি বলেন, 'প্রয়োজন হলে রাশিয়া সেটা ব্যবহার করতে পারে। আমার মনে হয় তার একটা ইংগিত আমরা দেখতে পাচ্ছি।'
ইউক্রেন কতটা সামনে এগোতে পারে?
ক্রিমিয়া সেতুতে হামলা ইউক্রেনের জন্য বড় এক সাফল্য। তারা রাশিয়া ভূখণ্ড থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
অধ্যাপক মুরাত আসলান বলছেন, 'কীভাবে এই হামলা হয়েছে আমি জানি না, কিন্তু এটা ইউক্রেনের বাহিনীর জন্য একটা বিশাল কৌশলগত বিজয়। কারণ এতে রাশিয়ার বাহিনীর সরবরাহ লাইন ব্যাহত হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনও রাশিয়া এবং তাদের নিজেদের জনগণের কাছে এই বার্তা দিয়েছে যে, তারা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে সক্ষম এবং যেকোনো স্থানেই হামলা করতে পারে।'
তিনি বলেন, 'তারা যদি ক্রাইমিয়ার ভেতরে হামলা করতে পারে, তারা অন্য শহরগুলোতেও হামলা করতে পারবে। এর মাধ্যমে তারাও বুঝতে পারছে, কখনো যদি ক্রিমিয়ায় হামলা করতে চায়, এখন পরিষ্কারভাবে জানে কোথায় কীভাবে হামলা করে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়া থেকে আলাদা করা যাবে।'
যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো দেশগুলোর কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, পরামর্শ ও গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে ইউক্রেন। এসব অস্ত্র ও তথ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেকটাই সাফল্য পেয়েছে ইউক্রেনীয়রা। এখন তারা রুশ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণান্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছে।
কিন্তু যেভাবে রাশিয়ার দখল থেকে বেশ কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন, সেভাবে কি ক্রাইমিয়া, দোনেৎস্ক বা লুহানস্ক উদ্ধার করতে পারবে তারা?
অধ্যাপক মুরাত আসলান বলছেন, 'সেটা নির্ভর করবে ইউক্রেন নেটো এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে কতটা সমর্থন বা সহায়তা পাবে, তার ওপরে। কারণ এজন্য তাদের কূটনৈতিক এবং সামরিক- উভয় সহায়তা দরকার হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যদি এটাকে সমর্থন করে, তাহলে হয়তো কোন একসময় ইউক্রেন ধারণার চেয়েও বেশি এগিয়ে যেতে পারে।'
বেলারুশের সেনা মোতায়েন
সোমবার বেলারুসের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বেলারুশের বাহিনী মোতায়েন করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির প্রধান আন্দ্রেই কার্তাপোলভকে উদ্ধৃত করে বেলারুসের রাষ্ট্রীয় বেলতা সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, পোল্যান্ডসহ অন্যসব দেশের সামরিক হুমকি মোকাবেলা করার জন্যই এই আঞ্চলিক বাহিনীকে সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ইউক্রেনের বাহিনীর অগ্রাভিযান এবং ক্রাইমিয়ার সেতুতে হামলার কারণে ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ এই দেশটি। যৌথ বাহিনীতে অন্তত একলক্ষ সেনা থাকবে, যাদের বেশিরভাগ বেলারুসের হবে বলে জানিয়েছেন লুকাশেঙ্কো।
যুদ্ধের গতি কোন দিকে যাচ্ছে?
ইউক্রেন সরকার কয়েকবার বলেছে, তারা শান্তি আলোচনায় আগ্রহী, তবে তার আগে দখল করা সব এলাকা রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে।
অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে দখল করা সব এলাকা ছাড়তে কখনো রাজি হবে বলে তিনি মনে করেননা। বিশেষ করে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এবং ক্রাইমিয়া, তারা কখনোই ছাড়বে বলে আমি ভাবি না।
কিন্তু ইউক্রেনের বাহিনীর পাল্টা হামলার মুখে পূর্বাঞ্চলে বেশ বিপদে পড়েছে রুশ বাহিনী। তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইউক্রেন ও রাশিয়া জুড়ে শীত থাকবে। তীব্র শীত ও বরফ জমে থাকার কারণে তাপমাত্রা ব্যাপক মাত্রায় কমে যায়। তখন কে কতটা যুদ্ধ করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সেই সঙ্গে এই সময় পুরো ইউরোপে জ্বালানির একটা সংকট দেখা দেবে। ইউরোপের দেশগুলোতে একটা অর্থনৈতিক সংকটও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আলী বলছেন, 'আমার ধারণা রাশিয়া চেষ্টা করবে এই সংকটের সুযোগ নিয়ে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে। বর্তমানে সেই উদ্দেশ্যেই রাশিয়া এগোচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে।'
রাশিয়া সম্প্রতি আইন করে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কসহ আরও দুটি এলাকাকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করছে। ওই আইনে রুশরা নিজেদের সময় দিয়েছে যে, ২০২৬ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত তারা এই এলাকাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে বলেছেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, 'এর মধ্যে তারা যুদ্ধে হোক আর আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই হোক, তারা একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। তার আগ পর্যন্ত এই এলাকাগুলোর মালিকানা তারা ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। তারা যুদ্ধ করে যাবে।'
ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন নেটো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনেক সামরিক সহায়তা পাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তারা অনেক গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে। কোন এলাকায় আক্রমণ করলে রাশিয়ার সর্বাত্মক ক্ষতি হবে, সেই পরামর্শ দিচ্ছে। নেটোর দেয়া দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে শুধু ক্রাইমিয়া নয়, রাশিয়ার ভেতরেও হামলা চালিয়েছে।
অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, 'রাশিয়া কতদূর পর্যন্ত এই হামলা মেনে নেবে, এটা বলা কঠিন। সামনে শীতকাল আসছে, সেটা মার্চ মাস নাগাদ শেষ হয়ে যাবে। আমার ধারণা এরমধ্যেই রাশিয়া একটা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে চাইবে। সেই নিষ্পত্তি হয়তো আলোচনার মাধ্যমে হবে, কিন্তু সেই আলোচনার ভিত্তি হবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কার কি অবস্থান, তার ওপরে।' সূত্র: বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।