পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদেশীদের কাছে ধরনা দেয়ার অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের পরামর্শ সরকারের দরকার নেই। একইসঙ্গে সাংবাদিকদেরও বিদেশিদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে প্রশ্ন না করার অনুরোধ করছি। গতকাল মঙ্গলবার সেগুনবাগিচাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পরামর্শ দেন। ব্রুনাই’র সুলতানের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। সেখানে নির্ধারিত প্রসঙ্গ ছাড়াও তিনি সমসাময়িক নানা বিষয়ে উত্থাপিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। এক সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন সরকার তা যৌক্তিক মনে করে কি-না, যদি তা মনে না করে তবে কোনো প্রতিবাদ জানাবে কি-না?
জবাবে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আপনারা (মিডিয়া) উনাকে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) প্রশ্ন করেন বলেই বেচারা বলে। আপনারা উনাদের কাছে না গেলেই হয়। আপনারা যখন যাবেন তখন অবশ্যই তার দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তাদের কাছে কি প্রশ্ন করতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকায় কেন এত অল্প সংখ্যক লোক ভোট দেয় সেটা পিটার হাসকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে তো ২৫ থেকে ৩০ ভাগের বেশি ভোট দেয় না। বাংলাদেশে শতকরা ৭৮ ভোট কাস্ট হয়। তাদের উপ-নির্বাচনে দেড় থেকে দুই পারসেন্ট লোক ভোট দেয় কেন? তাদের দেশের তরুণরা রাজনীতিতে উৎসাহী নয় কেন? বাংলাদেশে যে একাত্তরে জেনোসাইড হলো, এখন মিয়ানমারে হচ্ছে, তা বন্ধে তাদের ভূমিকা ছিল কি? এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে। সুতরাং বাংলাদেশকে কারো এ নিয়ে শেখাবার দরকার নেই। অবাধ, সুষ্ঠু এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সব সময় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। ২০০১ সালে হেরে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা স্মুথ পাওয়ার ট্রানফারের নজির তৈরি করেছেন। সমাপনী প্রশ্নে বলা হয়, মার্কিন দূত তো নির্বাচন নিয়ে অব্যাহতভাবে বলেই যাচ্ছেন, তার বক্তব্যের প্রতিবাদ তো সরকারের করা উচিত। জবাবে মন্ত্রী প্রশ্নকর্তার সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মার্কিন দূত ম্যাচিউর এনাফ। কূটনৈতিক শিষ্টাচার ফলো করেই তার বক্তব্য রাখা উচিত বলে মনে করে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব নীতি আছে এবং আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো। আমরা জাতিসংঘ সনদে বিশ্বাস করি এবং জাতিসংঘের সমর্থক। আমাদের দেশের স্বার্থের জন্য মঙ্গলকর, আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে উত্থাপিত রেজুলেশনের ওপর মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই ভোটে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পক্ষে, বিপক্ষে বা ভোটে বিরত থাকবো কি-না? সেটি আমি বলবো না। নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা ভোটগুলো অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দিয়েছি। যদি ভোট হয় তাহলে আমরা বিচক্ষণতার সঙ্গে দেবো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা চাই এই যুদ্ধ বন্ধ হোক এবং একটি সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধান হয়। যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাপ্লাই চেইনে সংকট তৈরি হয়েছে। এজন্য আমাদের বক্তব্য হচ্ছে আমরা যুদ্ধ চাই না। তিনি বলেন, যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হোক, সেগুলোতে যদি যুদ্ধ বন্ধ করার ঈঙ্গিত দিতে পারে, আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে, তাহলে আমরা খুব খুশি হবো। কারণ যুদ্ধ অনেকদিন চলমান থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে।
ব্রুনাই’র সুলতানের সফরে ৫ চুক্তি-সমঝোতা সই হতে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ ৩ দিনের সফরে ১৫ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন। এটা হবে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। ব্রুনাই’র সুলতানের সফরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ, সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সনদ দেওয়াসহ পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, জ্বালানি আমদানির বিষয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। এই আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বর্তমানে ব্রুনাইয়ে কাজ করছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দেশটির সুলতানের আসন্ন সফরে প্রাধান্য পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তার সম্মানে বঙ্গবভনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ব্রুনাই সফর করে। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ৬টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফরে এই সমঝোতা স্মারকগুলো কার্যকরের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।