Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিনটি সেতু দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:২৫ পিএম

পদ্মা সেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশ, কুয়েত, চীন, জাপান এবং ওপেক তহবিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায় নির্মিত তিনটি সেতু দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহ আর্থÑসামাজিক ব্যাবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-ফরিদপুরÑবরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ১,৪৭০ মিটার দীর্ঘ ৪ লেনের ‘পায়রা সেত’ু এবং চট্টগ্রামÑবরিশাল-খুলনা/মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেত’ু দুটি চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগমীকাল (সোমবার) বরিশালÑগোপালগঞ্জ-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে ‘কালনা সেতু’টিও উদ্বোধন করছেন । এসব সেতু নিকট অতীতের নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলকে ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করছে। এমনকি এ সেতু ৩টি নির্মানের ফলে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লের তিনটি বিভাগ প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসছে।
কালনা সেতুর মাধ্যমে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ গোপালগঞ্জ হয়ে যশোর ছাড়াও দেশের বৃহত স্থল বন্দর বেনাপোল ও ভোমড়ার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রায় ১,৪৯৫ মিটার দীর্ঘ বেগম ফজিলাতুননেসা সেতুটি সুদর চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা,মোংলা,বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজতর করেছে। ফলে দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের সড়ক যোগাযোগও অনেকটাই নির্বিঘœ হয়েছে। যা ঢাকাÑচট্টগ্রাম মহসড়কের ওপর যানবাহনের চাপও অনেকটাই হ্রাস করছে মনে করছে সড়ক অধিদপ্তর। এসব সেতু সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহ আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থায়ও নতুন মাইল ফলক হয়ে উঠছে।
পায়রা সেতুর জন্য ১৯৯৮ সালে প্রনীত ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ ২০১২ সালর মে মাসে প্রথমবারের মত একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। সেতুটির জন্য কুয়েতের ‘কেএফআইডি’ এবং ‘ ওপেক’ তহবিল সহজ শর্তে প্রায় এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা ঋন প্রদান করে। সেতুর মূল অংশের দুপ্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। সেতুটির ৩২টি স্প্যান দাড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ার-এর ওপর। এ সেতুটি নির্মানের ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মাত্র ৫ ঘন্টায় পায়রা বন্দর সহ সাগর পাড়ের কুয়াকাটায় পৌছান সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ, চীন ও কুয়েতের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান- ‘আইসিটি-কুনহুয়া-নারকো-ইপিসি-জেভি’র প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী’র প্রকৌশলীগন গত বছর ৩০ জুন সেতুটির নির্মান কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেন।
এদিকে প্রায় ১ হাজার ৪৯৪ মিটার দীর্ঘ ৮ম চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মানে চীনা প্রেসিডেন্ট-এর ঢাকা সফরকালে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী সে দেশের সরকার ৬৫৫ কোটি টাকা সম্পূর্ণ অনুদান প্রদান করে। এর দু বছর পরে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড’ ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিয়ার বিশিষ্ট এ সেতুটির নির্মান কাজ গত ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করে । গত ৭ আগষ্ট চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই’র উপস্থিতিতে ৮ম চীনÑবাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা উদ্বোধন করেন।
এদিকে বরিশালÑগোপালগঞ্জÑযশোরÑবেনাপোল মহাসড়কের কালনাতে মধুমতি নদীর ওপর জাপানী সহায়তায় ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের প্রথম ৬লেন ‘কালনা সেতু’র নির্র্মান কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ কালনা সেতু নির্মানে জাপান উন্নয়ন তহবিল-‘জাইকা’ সহজ শর্তে ৭৫৩ টাকা ঋন প্রদান করেছে। সেতুটি নির্মানে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেও ২০৬ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ কালনা সেতুটির মধ্যবর্তি অংশে ভিয়েতনামে প্রস্তুত ১৫০ মিটার অংশ ‘নিয়েলসান লোস আথর্’ টাইপ স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপন করা হয়েছে। এ অংশটি বিযুক্ত অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় নিয়ে এসে সংযুক্ত করা হয়েছে। জাপান ও বাংলাদেশের ‘টেককেন-এএমএল-ওয়াইডিসি জেভি’ নামের প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মান কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে। ১২টি পিয়ার-এ ১৩টি স্প্যানের ওপর নির্মিত এ সেতুটির এবাটমেন্ট ছাড়াও সংযোগ সড়কে একাধীক কালভার্ট ও আন্ডারপাস নির্মান করা হয়েছে।
এসব সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগকে শুধু নির্বিঘœ ও নিরবিচ্ছিন্নই করছে না, তা এ অঞ্চলেল উন্নয়নে সুদুরর প্রসারী ইতিবাচক ফঅল দেবে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদগন।
তবে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা, এবং খুলনা ও যশোর ছাড়াও বরিশাল থেকে পিরোজপুর হয়ে খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত না করায় এ অঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে আরো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। পাশাপাশি বরিশালÑখুলনা মহাসড়কের ‘বাসন্ডা বেলী সেতু’র পূণর্বাশন সহ পিরোজপুর বাইপাস নির্মিত না হওয়ায়ও যানবাহনের চাপা বৃদ্ধির সাথে জটিলতাও ক্রমশ বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যোগাযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ