পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা সেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশ, কুয়েত, চীন, জাপান এবং ওপেক তহবিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সাথে যোগাযোগ সহ আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থায় আগামীতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৪৭০ মিটার দীর্ঘ ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’ এবং চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা-মোংলা মহা সড়কের বেকুঠিয়াতে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু’ দুটি চালু হয়েছে। কাল বরিশাল-গোপালগঞ্জ-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে ‘কালনা সেতু’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ফেরিবিহীন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেতুটি ৩টি নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলের তিনটি বিভাগ প্রায় নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসছে। কালনা সেতুর মাধ্যমে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ গোপালগঞ্জ হয়ে যশোর ছাড়াও দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর বেনাপোল ও ভোমড়ার সাথে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রায় ১,৪৯৫ মিটার দীর্ঘ বেগম ফজিলাতুন নেসা সেতুটি চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা, মোংলা, বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের উপর যানবাহনের চাপ অনেকটা হ্রাস পাবে মনে করছে সড়ক অধিদফতর। এসব সেতু সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহ আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থায় নতুন মাইলফলক উন্মোচন হবে।
পায়রা সেতুর জন্য ১৯৯৮ সালে প্রনীত ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ ২০১২ সালের মে মাসে প্রথমবারের মত একনেক অনুমোদন পায়। সেতুটির জন্য কুয়েতের কেএফআইডি এবং ওপেক তহবিল সহজ শর্তে প্রায় এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। সেতুর মূল অংশের দু’পাশে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। সেতুটির ৩২টি স্প্যান দাঁড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ারের উপর। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় পায়রা বন্দর দিয়ে কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশ, চীন ও কুয়েতের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইসিটি-কুনহুয়া-নারকো-ইপিসি-জেভি’র প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’র প্রকৌশলীরা গত বছর ৩০ জুন সেতুটির নির্মাণ কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করেন।
এদিকে প্রায় ১ হাজার ৪৯৪ মিটার দীর্ঘ ৮ম চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মাণে চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরকালে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী সে দেশের সরকার ৬৫৫ কোটি টাকা সম্পূর্ণ অনুদান প্রদান করে। এর দু’বছর পরে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিয়ার বিশিষ্ট এ সেতুটির নির্মাণ কাজ গত ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করেন। গত ৭ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই’র উপস্থিতিতে ৮ম চীনÑবাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
এদিকে বরিশাল-গোপালগঞ্জ-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কালনাতে মধুমতি নদীর ওপর জাপানের সহায়তায় ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ৬ লেন ‘কালনা সেতু’র নির্র্মাণ কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ কালনা সেতু নির্মাণে জাপান উন্নয়ন তহবিল-‘জাইকা’ সহজ শর্তে ৭৫৩ টাকা ঋণ প্রদান করেন। সেতুটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ কালনা সেতুটির মধ্যবর্তি অংশে ভিয়েতনামে প্রস্তুত ১৫০ মিটার অংশ ‘নিয়েলসান লোস আর্থ’ টাইপ স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপন করা হয়েছে। এ অংশটি বিযুক্ত অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় নিয়ে এসে সংযুক্ত করা হয়েছে। জাপান ও বাংলাদেশের ‘টেককেন-এএমএল-ওয়াইডিসি জেভি’ নামের প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করেন। ১২টি পিয়ার-এ ১৩টি স্প্যানের উপর নির্মিত সেতুটি অ্যাবটমেন্ট ছাড়া একাধিক কালভার্ট ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা, এবং খুলনা ও যশোর ছাড়া বরিশাল থেকে পিরোজপুর হয়ে খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত না হওয়ায় এ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। পাশাপাশি বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ‘বাসন্ডা বেলী সেতু’র পুনর্বাসন সহ পিরোজপুর বাইপাস নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত যানবাহনের জটিলতা ক্রমশেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।