Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫৫ পিএম

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তারা (সরকার) নির্বাচন করতে চায়। সেদিন আবার বলেছেন যে, আসেন না নির্বাচন করেন। কোন নির্বাচন করবে? আপনারা সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করবেন? নির্বাচন এখানে কখনোই হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এখানে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।

জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, তাদেরকেও আমরা এই কাতারে আনার চেষ্টা করছি। সবার আগে যে কাজটা করতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে সেই সরকার একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে তারা একটি নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নতুন করে একটা পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা অন্যায় কিছু বলি না। আমরা বলি যে, সঠিক পথে চলুন। আমরা বলছি না যে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। না। আমরা বলি যে, জনগণ যাকে চায়, তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। তারা দেশ চালাবে।

সরকার সরানো ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা আছে, পথ একটাই। সেই পথ হচ্ছে যে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে দেবো। কারণ তারা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, সে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।

উলামা দলের নেত্বৃৃন্দকে মাঠ পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন ছাত্রদেরকে পড়ান, তাদেরকে শিক্ষা দেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে- জনমতকে সংগঠিত করা, মানুষকে সংগঠিত করা, সত্যের পথে ন্যায়ের পথে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাই সংগঠিত হবেন। নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে এক হোন। পদের জন্য, কমিটির জন্য লড়াই করবেন না। এখন লড়াই করতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য। এটা সবচেয়ে বড় লড়াই। সেই দিকে আমাদের যেতে হবে।

দেশে এক অসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে মসজিদে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমি কিছুদিন আগে দেখেছিলাম এখন আছে কিনা জানি না যে, খুতবা যে হবে এই খুতবাও তারা (সরকার) নির্ধারণ করে দেবে। এর চেয়ে খারাপ কথা আর কী হতে পারে। সেই কাজগুলো তারা করতে এতোটুকু দ্বিধাবোধ করে না। আর কিছুদিন আগে দেখেছি, মসজিদে মসজিদে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে পোষাকে এবং সাদা পোষাকে। কেনো? আমি আমার ধর্ম পালন করবো-এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবো। সেই খানে নিয়ন্ত্রণ মানেই হচ্ছে তারা সেখানেও নিয়ন্ত্রণ করছে।

তিনি বলেন, আমরা যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, আমাদের এখানে মানুষজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বাস করে। এখানে আমরা মুসলমানরা আমাদের মতো ধর্ম পালন করেছি, হিন্দু সম্প্রদায় তাদের মতো ধর্ম পালন করেছে, বৌদ্ধরা তাদের মতো করেছে, খ্রীষ্টানরা তাদের মতো করেছে।

কিন্তু আজকে তারা বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এরা সকলের ওপর নির্যাতন করছে। একদিকে শুধু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করছে তা নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করে তাদের উপাসনালয় ভেঙে দেয়, পূজামন্ডপ ভেঙে দেয়, তাদের সম্পত্তি দখল করে, বৌদ্ধদের .. রামুতে দেখেছে সেখানে কি হয়েছে? রামুর প্যাগোডা তচনচ করে দিয়েছিলো- এর সব নেতৃত্ব দিয়েছিলো ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের লোকরা। বৌদ্ধরা সংবাদ সম্মেলন করেও এসব বলেছে। সরকার তার ‘নতজানু পররাষ্ট্র নীতি’র কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা।

দেশে বর্গীদের রাজত্ব চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ প্রতি পদে পদে, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতি খাতে এই সরকার দেশটাকে লুট করে এটাকে একটা বর্গীদের যে রাজত্ব সেই রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। বর্গীরা আগে আসতো, দখল করতো, লুট করে নিয়ে আবার চলে যেতো। আজকে একইভাবে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, তাদের নেতা, তাদের বংশবদরা তারা এদেশে লুট করছে, লুট করে নিয়ে তারা বাইরে চলে যাচ্ছে। আজকে আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এই সময়ে আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ না হই তাহলে কিন্তু এদেরকে পরাজিত করা যাবে না। এরা ফ্যাসিস্ট শক্তি। আপনারা জানেন যে, এই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করা একটা গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে খুবই কঠিন।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের দেশনেত্রী যিনি গণতন্ত্রের মাতা যিনি আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে, ৩৫ লক্ষের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।এখন আরো ২০/২৫ হাজার মামলা যুক্ত হয়েছে এই কয়েকদিনের মধ্যে। এই মিথ্যা মামলা দিয়ে এখানে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে দমন করবার জন্য তারা এই পু্লশি লেলিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেকে কিছু পুলিশকে দোষারোপ করে। পুলিশ তো যদি সরকার হুকুম না করে পুলিশ কি কিছু কাজ করতে পারে। সম্পূর্ণ দায় শেখ হাসিনার, সম্পূর্ণ দায় সরকারের যারা আজকে বেআইনি হুকুম দিয়ে তাদেরকে দিয়ে কাজগুলো করাচ্ছে। আর তাদের (পুলিশ) অপরাধ হচ্ছে যে, সেই বেআইনি যে সমস্ত হুকুম বা নির্দেশ তারা মেনে চলছে। বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের তথ্য সংগ্রহ করার পুলিশের বিশেষ বিভাগের কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। দেশের শীর্ষ আলেম-উলামাদের কারাবন্দি করে রাখার কঠোর সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।

উলামা দলের আহ্বাবায়ক অধ্যক্ষ শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজা‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়কসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ