Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন

কেয়ামতের অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

যারা মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক অস্ত্র সজ্জিত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ঘটেছে, তাদের আবার নতুন করে ভাবতে হবে। তারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মানসিকতা, তার উচ্চ-ঝুঁকি সহনশীলতা এবং শত্রু পক্ষকে তছনছ করে দিয়ে কঠিন লড়াইয়ে জয়লাভ করার জেদটা বুঝে উঠতে পারেনি। পুতিন একবার বলেছিলেন, ‘আপনি যদি জিততে চান, তাহলে আপনাকে প্রতিটি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে, যেন এটিই শেষ এবং নির্র্ধারনী যুদ্ধ। আপনাকে ধরে নিতে হবে যে, এতে কোন পশ্চাদপসরণ নেই।’ এভাবেই তিনি সর্বদা লড়াই করেছেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাতের শুরু থেকেই এটি তার কৌশল।

পুতিন এই যুদ্ধে হেরে যাননি, বা পশ্চাদপসরণও করেননি। তিনি নিছক কৌশল পরিবর্তন করছেন। পুতিন আসলে চুড়ান্ত জয়ের জন্য নতুনভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন। ইউক্রেনকে রাশিয়া তার অত্যাবশ্যক নিরাপত্তা সীমা হিসেবে বিবেচনা করে, যার অর্থ এই লড়াইটিতে মস্কো এবং ব্যক্তিগতভাবে পুতিনের জন্য অস্তিত্ব ঝুঁকি রয়েছে। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের জয়ের ফলে পুতিন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন না বরং প্রচলিত যুদ্ধ থেকে সরে এসে কৌশলগত যুদ্ধে নামবেন। ওপেক প্লাস ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ২০২০ সালের পর থেকে তেল সরবরাহে সবচেয়ে বড় হ্রাসের ঘোষণা করে রাশিয়াকে একটি বিশাল জয় এনে দিয়েছে। কারণ জ¦ালানী শক্তি সর্বদাই পুতিনের সেরা অস্ত্র।

ইউনাইটেড রিফাইনিং কোম্পানির সিইও জন ক্যাটসিমাটিডিসের মতে, ‘যদি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১শ’ ডলারে পৌঁছায়, তাহলে রাশিয়া প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করবে। এটি পুতিনের যুদ্ধে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে এবং তাকে ইউরোপের বিরুদ্ধে তার জ¦ালানী অস্ত্র মোতায়েন করতে সক্ষম করবে, কারণ শীত দ্রুত এগিয়ে আসছে। এছাড়াও, রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধ-কৌশল নিয়ে কাজ করছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘স্ট্র্যাটেজিক অপারেশন টু ডিফিট ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অফ দ্য অ্যাডভার্সারি (সপ্কভোপ)’ বা শত্রুদের মূল অবকাঠামোকে পরাজিত করার জন্য কৌশলগত অভিযান।

এসপ্কভোপ সামরিক লক্ষ্যবস্তুর পরিবর্তে বেসামরিক স্থাপনাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরনের আঘাত করে থাকে। একে যুদ্ধের বাইরে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে ব্যবহার করা হবে। এর লক্ষ্য হ’ল, একটি দেশের জনসাধারণের যুদ্ধের মানসিকতাকে পরাস্ত করা, তার সমাজকে ভারসাম্যহীন করে দেওয়া এবং সুবিধাগুলিকে অবনমিত করে দেয়া, যা এর কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, পশ্চিমা সমাজে অস্বস্তি এবং কষ্ট সহিষ্ণুতার মাত্রা কম এবং লোকেরা ঝামেলা বন্ধ করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ত্যাগে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করার জন্য মস্কো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুতর অবকাঠামোতে সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পুতিনের মন-মানসিকতা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন সরকার নির্বোধভাবে সপ্কভোপকে সক্ষম করে তুলেছে। কয়েক বছর আগে, দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তার ওয়েবসাইটে ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাতের একটি তালিকা পোস্ট করেছিল, যা রাশিয়ানরা দ্রুততার সাথে টুকে নিয়েছিল। এই খাতগুলির মধ্যে রয়েছে শক্তি, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি, রাসায়নিক, পারমাণবিক, যোগাযোগ, সরকার, প্রতিরক্ষা, খাদ্য, বাণিজ্যিক সুবিধা, আইটি, পরিবহন, বাঁধ, উৎপাদন এবং আর্থিক পরিষেবা। এবং ২০২১ সালের জুনে কলোনিয়াল পাইপলাইন এবং জেবিএস মাংস প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনার উপর বড় মাপের রাশিয়ান সাইবার আক্রমণের পর, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোগুলির একটি তালিকা হস্তান্তর করে, সেগুলিতে সাইবার আক্রমণের বাইরে রাখার আহ্বান করেন।

২০১৫ সালের ক্রিসমাসের সময় হিমাঙ্কের তাপমাত্রায় মধ্যে ইউক্রেনের ২ লাখ ৫০ হাজার লোকের জন্য বিদ্যুত সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। সামরিক সংঘর্ষের বাইরে ইউক্রেনের বিদ্যুত গ্রিডে এটিই প্রথম রেকর্ডকৃত রাশিয়ার সাইবার আক্রমণ। পুতিন রাশিয়ার অস্ত্রাগারে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক পদ্ধতি সহ সকল উপায় ব্যবহার করতে প্রস্তুত, এই সতর্কতা জারির পর গত সপ্তাহে রাশিয়া বিশ্বকে সপ্কভোপ এবং নতুন প্রজন্মের যুদ্ধের আরেকটি প্রদর্শনী দেখিয়েছে। তারপর নর্ড স্ট্রীম পাইপলাইনের গ্যাস লিক করতে শুরু করেছে, যা বাল্টিক সাগরে একটি পরিবেশগত বিপর্যয় তৈরি করেছে।
সোমবার, ন্যাটো তার সদস্যদের সতর্ক করে বলেছে যে, রাশিয়ার বিশেষ মিশনের পারমাণবিক সাবমেরিন বেলগোরোদ পসাইডন নামক একটি বাস-আকৃতির ‘ডুমসডে’ বা কেয়ামতের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার আর্কটিক বন্দর ছেড়ে গেছে। আশঙ্কা রয়েছে যে, পুতিন পসাইডন পরীক্ষা করার জন্য সাবমেরিনটি মোতায়েন করতে পারেন, যা ১৬শ’ ফুট তেজস্ক্রিয় সুনামি তৈরি করতে সক্ষম, যা উপকূলীয় শহরগুলি ধ্বংস করে দিতে পারে এবং পানিতে ডুবিয়ে দিতে পারে।

যদিও সম্ভবত পসাইডন ২০২৭ সাল পর্যন্ত কার্যকর হবে না, তবে পরীক্ষাটি পুতিনের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট সঙ্কেত হবে যে, তিনি এমন একটি যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার থেকে ইউক্রেন এবং পশ্চিমকে মোকাবেলার জন্য সঙ্ঘাতের ক্রমবর্ধমান সিঁড়িতে বেশ উঁচুতে আরোহণ করতে প্রস্তুত। তিনি এবং রাশিয়া পরাজয়ে বিশ্বাস করেন না। সূত্র : নিউজউইক।



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ৮ অক্টোবর, ২০২২, ২:৩৩ এএম says : 0
    Mr.putin YOU very nice and good you all world kingdom pasedent,world war destination emergency,what go Amrika eorup big men read pass pot system or week men go bulo pass put all men all world go what poblam.amrika Europe amnesty international low not career. Com you emergency world war all world one time fenis.
    Total Reply(0) Reply
  • Harunur Rashid ৮ অক্টোবর, ২০২২, ১:৩২ এএম says : 0
    All tyrant thinks same way. If other countries destroyed and he thinks his country will be safe then someone need to wake him up from his dream. You are a total mad man comrades.
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Islam ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৯ এএম says : 0
    এইযুদ্ধে রাশিয়াকে জয় পেতে হবে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে,,
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Kibria ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৭ এএম says : 0
    এতক্ষনে আমেরিকায় হয়তো ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে!
    Total Reply(0) Reply
  • Saif Pigeon Loft ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৯ এএম says : 0
    পশ্চিমারা আগুন নিয়ে খেলছে পুতিন ছেড়ে দেওয়া ও হেরে যাওয়া লোক না সবকিছু ঠিক থাকলে চিনকে সাথে নিয়ে পুতিনের একটা পশ্চিমা ধ্বংস দেখাই অপেক্ষায় রইলাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ