২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ক্যান্সার একটি মাত্র রোগ নয়। এটা এক প্রকার জটিল ব্যাধিগোষ্ঠী। শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকৃতিতে সৃষ্ট হওয়া এবং বিভিন্ন প্রকার উপসর্গ সৃষ্টি করা সত্তে¡ও একই রকম রোগধারা ও মারাত্মক পরিণতির জন্য এদেরকে সমষ্টিগতভাবে ক্যান্সার বলা হয়। ক্যান্সার শব্দটা শোনামাত্রই মনের মধ্যে মরণের একটা ভয় জেগে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে দুরারোগ্য রোগক্লিষ্ট রোগীর ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু না, ক্যান্সার হওয়া মানেই নির্ঘাৎ মৃত্যু নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও প্রভুুত উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সাধারণ মানুষও এ রোগ সম্বন্ধে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করছে এবং প্রতিরোধ ও আশু চিকিৎসা গ্রহণে সচেতন হচ্ছে। ফলে কিছু কিছু ক্যান্সারের প্রকোপ যেমন কমছে, অন্যদিকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে অধিক সংখ্যক নিরাময় লাভ করছে। তাতে সঙ্গত কারণেই কিছুটা হলেও ক্যান্সারভীতি আগের তুলনায় কমে আসছে।
ক্যান্সার কী : শরীরের এক বা একাধিক কোষ অস্বাভাবিকভাবে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকলে, শরীরের যে কোন স্থানে পিÐ বা পিÐসমূহের সৃষ্টি হওয়া অথবা শরীরের কোন অংশের স্বাভাবিক কোষগুলো অস্বাভাবিক কোষ দ্বারা অপসারিত হওয়াকে ক্যান্সার বলা হয়। ক্যান্সার শব্দটি বহুল প্রচলিত সাধারণ শব্দ; যা বিভিন্ন প্রকার ম্যালিগন্যান্ট ডিজিজের সমষ্টিকে বুঝায়। যেমন-কার্সিনোমা, সার্কোমা-লিস্ফোমা, লিউকেমিয়া প্রবণতা।
উপসর্গ: নির্ভর করে প্রধানত আক্রান্ত অঙ্গ এবং উপরোল্লিখিত বিষয়াবলীর ওপর। কিছু উপসর্গ প্রায়ই দেখা যায়। যেমন- খাবারে অরুচি, রক্তশূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া, আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। শরীরের এমন কোন স্থান নেই- যেখানে ক্যান্সার হতে পারে না। তবে সবচে বেশী ক্যান্সার হয় মহিলাদের জরায়ুমুখে এবং স্তনে। পুরুষদের বেলায় সবচে বেশী হয় ফুসফুসে এবং মুখ ও গলার ভেতরে। সবচে কম ক্যান্সার হয় হৃদযন্ত্রে।
কেন হয়: ক্যান্সার কেন হয়, এর সঠিক কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ণয় সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কিছু ক্যান্সারের বেলায় নির্দিষ্ট কিছু কারণকেই দায়ী করা যায়। ক্যান্সার সৃষ্টিতে এগুলোর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রভাব আছে। যেমন-ফুসফুসের ক্যান্সারের বেলায় ধূমপানকে বেশী দায়ী করা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে বেশী দেখা যায় যেটা, শুধু ধূমপায়ীদের মধ্যে হয়ে থাকে। অধূমপায়ীর মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার যে দেখা যায় না তা নয়, তবে এ সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য । আমাদের দেশে একটি হাসপাতালভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৫০ জন ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ৪৯ জনই ধূমপান করতেন এবং মাত্র ১ জন অধূমপায়ী ছিলেন। মুখ ও গলার ভেতর ক্যান্সার সৃষ্টিতেও ধূমপানের দখল আছে। তবে চুন, সুপারি জর্দাসহ সেবন, মদ্যপান, দুক্তা, খৈনি ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারও মুখের ক্যান্সার সৃষ্টিতে দায়ী। ৮০ জন গলার ভেতরের ক্যান্সার রোগীর ওপর জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ জন ধূমপান করতেন আর ৬ জন ধূমপায়ী মহিলার মধ্যে ২ জনের স্বামী ধূমপায়ী ছিলেন, যা পরোক্ষ ধূমপায়ী হিসাবে বিবেচিত হবে। মুখের ক্যান্সারের বেলায় এ কারণগুলো ছাড়াও নিয়মিত মুখ পরিস্কার না করা, অসামঞ্জস্য দাঁত থাকা, যা দ্বারা খতের সৃষ্টি হয়, লৌহের অভাবজনিত রক্ত শূন্যতায় ভোগা, তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিস রোগে ভোগা এবং লিউকোপ্লাকিয়া ইত্যাদি। স¤প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে যে, হিসাবটা হচ্ছে-১শ’ জন মুখের ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ৭১জন ধূমপান করতেন, ১১ জন গুল/তামাকসহ পান সেবন করতেন, নিয়মিত মুখ-দাঁত পরিষ্কার করতেন না ৩৫ জন। খাদ্যনালির ক্যান্সার সৃষ্টিতেও ধূমপানকে দায়ী করা যায়। তবে অধিক ঝালযুক্ত খাদ্যও কম দায়ী নয়।
লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা মাছ, শুটকি এবং পোড়ানো মাছ বা গোশত খাদ্যনালিসহ পুরো পরিপাকতন্ত্রে ক্যান্সার সৃষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে। এর সঙ্গে কম আশযুক্ত খাদ্য এবং অধিক অ্যালকোহল গ্রহণ পরিপাকতন্ত্রে ক্যান্সার সৃষ্টি কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
খাদ্যদ্রব্যে ছত্রাক থাকা এবং হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস-এর আক্রমণ লিভারের ক্যান্সার সৃষ্টিতে দায়ী বলে মনে করা হয়। অধিক পরিমাণে মদ্যপানে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশী। বৃহদ অন্ত্রের ক্যান্সারের বেলায় বংশগত ঝুঁকি একটি স্বীকৃত কারণ। মহিলাদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার যেসব কারণে হয়, তার মধ্যে অল্প বয়সে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া, অবৈধ বা অধিক যৌন সঙ্গী, অল্প বয়সে ঋতুস্রাব, অধিক সংখ্যক ইনফেকশন হওয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগও অন্যতম।
মহিলাদের স্তন ক্যান্সার সাধারণত মোটা স্থূল মহিলাদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ পান করান না, নি:সন্তান/অবিবাহিত অথবা অল্প সন্তানের জননী মিহলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার বেশী দেখা যায়। বংশগত কারণও এখানে উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত কারণসমূহ ছাড়াও যেসব কারণে ক্যান্সার হতে পারে, সেগুলো হচ্ছে-সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি এক্স-রে গামা-রে (যা তেজস্ক্রীয় পদার্থ থেকে নির্গত হয়), আলকাতরা এবং পিচ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে। তাছাড়া এ্যাসবেলসটস, আরসেনিক, নিকেল ও আয়রন শ্রমিকদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার বেশী দেখা যায়।
ক্যান্সারের ৭টি সর্তক সংকেত হচ্ছে –
* খুসখুসে কাশি কিংবা ভাঙা কন্ঠস্বর।
* সহজে সারে না এমন কোন ক্ষত।
* অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
* স্তনে বা অন্য কোথাও চাকা/পিন্ডের সৃষ্টি।
* গিলতে অসুবিধা বা হজমে গÐগোল।
*মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন।
* তিল বা আচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন। উক্ত সংকেতসমূহের এক বা একাধিক সংকেত দু’-সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।
আশার বাণী : এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। আর অধিকাংশ অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের উপসর্গ উপশম করা সম্ভব। তাই হতাশ না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট।
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।