পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একমাসের মাথায় মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুতের গ্রিড বিপযর্য়ে দেশের অধিকাংশ জেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়ে ১২ ঘণ্টার জন্য সারাদেশে বø্যাকআউট অবস্থা সৃষ্টির পর বিদ্যুৎ গ্রিডে আর তেমন কোনো বিপর্যয় সৃষ্টি না হলেও গত ৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে কুষ্টিয়া, যশোরসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো দেড় ঘন্টার জন্য বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এমনিতেই সাধারণ মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘাটতির কারণে পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ে মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বিদ্যুতহীন থাকতে হচ্ছে। বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়ে একসঙ্গে দেশের ৩২টি জেলায় ৪ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুতবিহীন থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা, ব্যাংকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং টেলিকমিউনিকেশনে অচলাবস্থা নেমে আসে। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে দেশের বিদ্যুৎ গ্রিডের সামগ্রিক অবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। গত দশকে প্রথমবার গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সরবরাহ লাইনে ত্রæটির কথা জানা গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরের গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি। ৪ অক্টোবরের গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করতে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠণের কথা জানা গেছে।
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে জাতির সামনে নতুনভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হল পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ বা পিজিসিবি। গত একযুগ ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক এজেন্ডা হলেও সাম্প্রতিক ঘাটতি ও লোডশেডিং দেশের সামগ্রিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। ৩০ দিনের মধ্যে দুইবার গ্রিড বিপর্যয় বিদ্যুত ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই মেলে ধরেছে। বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ, বড় আকারের বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি হলেও এসব বিদ্যুত কেন্দ্রের অধিকাংশ অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ভতুর্কির চাপ সামলাতে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুতের মান বা সরবরাহ লাইন উন্নয়নের উদ্যোগও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। গ্রিড বিপর্যয় এবং তার কারণ অনসন্ধানে ব্যর্থতা থেকেই আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার পশ্চাৎপদতা, সংশ্লিষ্টদের সীমাবদ্ধতা ও অদক্ষতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। গ্রিড বিপর্যয়ের পর ৪ ঘন্টার মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে সক্ষম হওয়ার পেছনে বিদ্যুৎ বিভাগের যে সব ইঞ্জিনিয়ার, কর্মকর্তা ও মাঠকর্মী কার্যকর ভ’মিকা রেখেছেন, তারা ধন্যবাদার্হ।
নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে স্বল্প মূল্যে বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে সরকারের বহুমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালনা ও সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যথাযথ উদ্যোগ নিরে বিদ্যুত খাতে আজকের অবস্থা দেখা দিতো না। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো অনেক পুরনো। যেখানে দেশের জাতীয় গ্রিড পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে যুক্ত হতে চলেছে, সেখানে বহু পুরনো সঞ্চালন ব্যবস্থাকে পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী ও ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পুরনো এনালগ ব্যবস্থায় নি¤œমানের ক্যাবল- সরঞ্জাম ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার বদলে বিশ্বমানের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে নানা খাতে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। সব প্রযুক্তির মূল চালিকাশক্তি বিদ্যুত ব্যবস্থাকে নড়বড়ে, অপ্রতুল ও অনিরাপদ রেখে ডিজিটালাইজেশন, কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব। বিদ্যুত গ্রিডের বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ নির্নয় করতে হবে। এর পেছনে যান্ত্রিকত্রæটি-বিচ্যুতি, সরঞ্জামের দুর্বলতা, পরিচালন ত্রæটি-অদক্ষতা, নাকি নাশকতা খুঁজে বের করে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। সেই সাথে গ্রিড বিপর্যয় নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি পিজিসিবি’র সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেসা ও ডিপিডিসি, পল্লীবিদ্যুতের মত বিদ্যুৎ সরবরাহের সাথে জড়িত সকল কোম্পানীকে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও আধুনিকায়নে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ গ্রিডের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামোতে আর কোনো বিপর্যয় বা নিরাপত্তাহীনতা জাতি দেখতে চায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।