পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীসহ সারাদেশেই লেগুনা, টেম্পো, নসিমন-করিমন, পিকআপ ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিকসা থেকে শুরু করে লোকাল বাস শিশু চালকদের চালাতে দেখা যায়। এসব শিশু চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স যেমন নেই, তেমনি বেপরোয়াভাবে চালাতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারাদেশে এ ধরনের শিশু গাড়িচালক রয়েছে ১ লাখ ৫৫৫ জন। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর। এ তথ্য উদ্বেগের। এতে একদিকে যেমন দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে শিশুশ্রম আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। শিশু চালকদের প্রায় সবাই হেলপার থেকে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছে। তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। থাকারও কথা নয়। প্রাপ্ত বয়স্ক না হলে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ না হলে লাইসেন্স পাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এসব শিশুর বেশিরভাগই শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই গাড়ি চালাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও তা যে পুরোপুরি কার্যকর নয়, তা লাইসেন্সবিহীন শিশু চালকদের দিয়ে যানবাহন চালানো থেকেই বোঝা যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যেসব শিশুচালক যানবাহন চালাচ্ছে, তাদের লেখাপড়ার মধ্যেই থাকার কথা। জীবন ও জীবিকার তাকিদে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অর্থনীতির বিষয়টি জড়িয়ে আছে। করোনায় অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা জীবিকার প্রয়োজনে কাজে নেমে পড়েছে। তাদেরই একটি অংশ যানবাহনের হেলপার থেকে চালকে পরিণত হয়েছে। এটা যেমন বাস্তবতা, তেমনি রাজধানীসহ সারাদেশে কিশোরগ্যাং সৃষ্টিও এক বাস্তবতা। এই দুই বিপরীত চিত্রই উদ্বেগের। যেসব শিশু-কিশোরের হাতে যানবাহনের মালিকরা স্টিয়ারিং ধরিয়ে দিচ্ছে, এর সাথে তাদের আর্থিক বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। একজন পূর্ণবয়স্ক দক্ষ চালককে তার জায়গায় নিয়োগ দিলে মালিককে দ্বিগুণ-তিনগুণ পারিশ্রমিক দিতে হয়। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য তারা শিশু চালককে বেছে নিচ্ছে। এতে শিশু অধিকারের বিষয়টি যেমন উপেক্ষিত হচ্ছে, তেমনি যাত্রীদের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এ ধরনের অনিয়মের ক্ষেত্রে রাজধানীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ব্যর্থতা কম দায়ী নয়। রাজধানীতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে লোকসংখ্যা দুই-তিনগুণ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় রাজধানীমুখী হচ্ছে। এত মানুষের যাতায়াত ও চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন প্রয়োজন, যার স্বল্পতায় আনফিট ও লক্কড়-ঝক্কর যানবাহনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। যেখানে যানবাহন চলাচলের যথেষ্ট সড়ক নেই, সেখানে চলছে অসংখ্য যানবাহন। এরই উপসর্গ হিসেবে শিশুচালক সৃষ্টি হয়েছে। নগরবিদরা বলছেন, ঢাকার এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পরিকল্পিত সম্প্রসারণ জরুরি। রাজধানীর লোকসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে এর ওপর থেকে অনেকাংশে চাপ কমবে। এক্ষেত্রে ঢাকার দক্ষিণ দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুরের দিকে পরিকল্পিত সম্প্রসারণ হলে ঢাকাকে জনচাপমুক্ত রা সহজ হবে। শহর সম্প্রসারিত হয়েছে বটে, তাতে পরিকল্পনা বলে কিছু নেই। এলাকাটি এখন পুরান ঢাকার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের সম্প্রসারণের প্রয়োজন নেই। এতে সমাধানের পরিবর্তে সংকট আরও বাড়বে। যেহেতু ঢাকার সম্প্রসারণের প্রবণতা এখন দক্ষিণমুখী, এক্ষেত্রে যথাযথ মাস্টার প্ল্যান দরকার। পদ্মাসেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পদ্মার ওপারের জেলা শহরগুলোকে পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা গেলে রাজধানীমুখী জন¯্রােত যেমন কমবে, তেমনি এতে গণপরিবহনসহ সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
জীবন-জীবিকার জন্য যে শিশুচালকরা যানবাহনের স্টিয়ারিং ধরতে হয়েছে এবং যা কখনোই কাম্য নয়, তা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। তাদেরকে এই অমানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে আনতে হলে আর্থিক সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পড়ালেখা ছেড়ে যারা স্টিয়ারিং ধরেছে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনলেই হবে না, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে লেখাপড়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। এই সঙ্গে তাদের দরিদ্র পিতা-মাতার আর্থিক সংস্থান বা রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে পরিবহন খাত শিশুশ্রমমুক্ত হবে। শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন করে যাতে কোনো শিশুচালকের হাতে যানবাহনের স্টিয়ারিং না উঠে, সে ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।