Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা করতে হবে

কৃষিবিদ বশিরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পোল্ট্রি শিল্পই হচ্ছে সবচেয়ে সস্তার প্রাণীজ আমিষ যোগানোর মাধ্যম। ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানমুখী সমৃদ্ধ শিল্প এটি। গ্রামীণ পরিবারের গৃহস্থালি কাজের আয়বর্ধনেরও একটি হাতিয়ার। এই শিল্প যেমন লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে সস্তায় পুষ্টির যোগান দিয়ে দেশে মেধাবী এবং সুস্থ সবল প্রজন্ম সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। এক দশক আগেও দেশের মানুষ বছরে গড়ে ৫০টির বেশি ডিম খেতে পারত না। এখন বছরে গড়ে ১৩৬টি করে ডিম খাচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির মাংস খাদ্য তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদা পূরণে খাদ্য তালিকায় বছরে ১০৪টি ডিম থাকা দরকার।

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের লাইভ স্টক ইকোনমির তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার বা মাথাপিছু ১৩৬টি। ২০১২-১৩ বছর ছিল ৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৪ হাজার। সে হিসাবে এক দশকে বছরে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ ০৬ হাজার। এক দশকে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। একই সঙ্গে ভোক্তার ডিম খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। তবে খামারিদের দাবি, অন্যান্য পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় ডিমের দাম না বাড়ায় নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে শিল্পটি।

এই মুহূর্তে বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এরমধ্যে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বেশ সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব ধরনের গণমাধ্যম। অথচ, আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে একটি ডিম উৎপাদন খরচ কত? প্রতিটা খামারে প্রতিদিন কত কেজি মুরগির খাবার লাগে? আর সেই মুরগির খাবারের দাম কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে?

ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আধা লিটার ধারণ ক্ষমতা বোতল তৈরি করতে খরচ হয় ৩ টাকা ৬৭ পয়সা। এর সঙ্গে লেভেলিংয়ে ১ টাকা ও অন্যান্য ব্যয় হয় আরো ৩৭ পয়সা। আধা লিটার পানি পরিশোধনে খরচ হয় ১ টাকা। এ হিসাবে আধা লিটার পানি উৎপাদনে ভ্যাটসহ খরচ হচ্ছে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা। পরিবেশকদের কাছে তা বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা। তবে আধা লিটার পানির জন্য ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকার বেশি। কয়েকদিন আগেও খুচরা বাজারে আমরা একটা ডিম ক্রয় করেছি ১০ টাকা। কিন্তু বতর্মানে একটা ডিম ক্রয় করতে হচ্ছে ১২ টাকারও বেশি দামে। এই যে হঠাৎ করে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ছে, এটা সত্যি। কিন্তু খামারিরা কিন্তু বাড়তি দাম পাচ্ছে না বলে দাবি করছে। এ জন্য এই খাতের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

এ দুটো উদাহরণ থেকে খুবই সহজেই বোঝা যাচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পে বর্তমান অবস্থা। যেখানে আধা লিটার পানি বিক্রি করে একজন বিক্রেতা সহজে ডাবল লাভ করছে, সেখানে একজন ডিম কিংবা মুরগি বিক্রেতাকে টিকে থাকাই দুষ্কর। পানি বিক্রি করে একজন বিক্রেতা যে ডাবল লাভ করছে সেটা নিয়ে আমাদের কারো মাথাব্যথা নেই, অথচ, ডিম কিংবা কৃষিপণ্যের একটু দাম বৃদ্ধি হলে চারদিকে হইচই পড়ে যায়।

আসলে, এ শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে খাদ্যের উপাদানের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং অপরদিকে এ সেক্টরে উৎপাদিত পণ্য যেমন, ডিম ও ব্রয়লারের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া। এ চ্যালেঞ্জ দুটি মোকাবেলা করতে খামারিরা দিন-দিন হিমশিম খাচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটা চাই না। খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পোল্ট্রি ফিড বা হ্যাচারির ব্যবসা টিকতে পারবে না। আবার ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে খামারিদের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। উভয় পক্ষকে বিষয়টি বুঝতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, দফায় দফায় মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে। কিন্তু খামারিরা যখন পণ্য বিক্রি করতে যাচ্ছে, তখন ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। তাই প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০০৯ সালে দেশে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে এমন খামার বা ফার্মের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় উৎপাদন করে। আর বিক্রি করে ৪০ টাকায়। এতে খামারিরা মুরগি পালন করে পোষাতে পারছে না। সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি শিল্পের চলমান সংকট নিরসনে পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের প্রস্তাবের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রাণীসম্পদের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসার সনদসহ অন্যান্য সনদ প্রাপ্তি সহজ করা, খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা, খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান, খামারিদের বিমার আওতায় আনা এবং ডিম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন ইত্যাদি

তাদের এসব দাবি যুক্তিগ্রাহ্য বলে আমি মনে করি। কারণ, খামারিরা বিনিয়োগ করে, শ্রম দেয়, সময় ব্যয় করে। এত কিছুর পর তারা যদি লাভের মুখ না দেখে তাহলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। এমনিতেই করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ শিল্পের ওপর। খামারিরা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করেছে, বিক্ষোভ করেছে ও স্মারকলিপি দিয়েছে। এগুলো আমলে নিয়ে ধৈর্য ও সহানুভূতির সংগে পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সংকট সবসময় থাকবে, তবে এ শিল্পে সম্ভাবনাও রয়েছে ব্যাপক।

সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো, এখনো দেশে কোনো পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা কর্পোরেশন গড়ে ওঠেনি। অথচ, তুলা উন্নয়ন বোর্ড আছে, পাট, পানি কিংবা চা উন্নয়ন বোর্ড আছে। মসলা গবেষণা কেন্দ্র, আখ গবেষণা কেন্দ্র, ডাল গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদির মতো অসংখ্যা গবেষণা কেন্দ্র এবং বোর্ড রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হলে ৫০ লাখ মানুষ বেকার ও পরোক্ষভাবে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ পথে বসার উপক্রম হবে। ইতোমধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশি ১০টি কোম্পানি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। ভবিষ্যতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশি কোম্পানিগুলো জিম্মি হয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত কয়েক মাসে সয়াবিন মিল ও ভুট্টার দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি ও পরিবহনের খরচ। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিমের দাম বেড়েছে। অবশ্য পোল্ট্রি খাবারে কত ভাগ দাম বাড়লো আর কত টাকা লোকসান হলো সেটা সাধারণ ভোক্তাদের জানার বা বিবেচনারও বিষয় নয়। তাদের কাছে কম মূল্যে মুরগি ও ডিম খেতে পারাই বড় কথা। তবে পোল্ট্রি সেক্টরের পুরো সিস্টেমে যে খারাপ প্রভাব পড়েছে তা সহজেই সবার গোচরে এসেছে। এছাড়া খামারে রোগবালাই, চিকিৎসা ও ভাইরাসজনিত রোগে পুরো ফার্মের মুরগি মরে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। তাই এ শিল্পকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। পোল্ট্রি শিল্পের জন্য আলাদা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা কর্পোরেশন গড়ে তুলতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে।

লেখক: উপ-পরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা



 

Show all comments
  • jack ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৩৬ পিএম says : 0
    এই সরকার আছে কিভাবে জনগণকে ধ্বংস করতে হবে দেশটাকে ধ্বংস করতে হবে সবকিছুতেই পরনির্ভরশীল করে রেখে দিয়েছে আমাদের দেশটাকে আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করে তোমার আইন দিয়ে আমাদের দেশ চালাও তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সবকিছু উৎপাদন করতে পারব চায়না থেকে উন্নত হতে পারব
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->