Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন-রাশিয়া বলয় শক্তিশালী হচ্ছে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বে আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকেই। তাতে পূর্ণভাবে সহায়তা করেছে তার মিত্র দেশগুলো। কিন্তু সম্প্রতি তাদের শক্তি দুর্বল হচ্ছে আর চীন-রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের শক্তি বাড়ছে। যেমন: ইউক্রেন যুদ্ধ। এটা মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এতে ছায়াযুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তারা সার্বিকভাবে ব্যাপক সহায়তা করছে ইউক্রেনকে। আমেরিকা যে ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করছে তার প্রমাণ বিটিডব্লিউসিকে দিয়েছে রাশিয়া, যা যুক্তরাষ্ট্র স্বীকারও করেছে। তবুও এ যুদ্ধে কোনমতে টিকে আছে ইউক্রেন। অবশ্য, যুদ্ধে উভয় পক্ষ ছাড়াও বিশ্ববাসীরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সব নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে দারিদ্র্যও বেড়েছে অনেক। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণের পর থেকে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের ক্রমবর্ধমান খরচ সাত কোটি মানুষকে অনাহারের মুখে ফেলেছে। উপরন্তু এ যুদ্ধ যতদিন চলবে, বিশ্ববাসীর চরম দুর্দশাও চলবে ততদিন। এমনকি যুদ্ধ শেষ হলেও এর রেশ থাকবে কিছুদিন। তবে, কিছুটা স্বস্তি দায়ক হয়েছে জাতিসংঘের উদ্যোগে ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্যপণ্য রফতানি শুরু হওয়ায়। এ যুদ্ধে রাশিয়াকে বধ করতে গিয়ে মার্কিন বলয়ই মরতে বসেছে! রাশিয়া তার গ্যাস দেওয়া বন্ধ করায় ইইউ’র দেশগুলো ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। মূল্যস্ফীতিও সর্বাধিক হয়েছে। তাই সেখানে মতভেদ দেখা দিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ নিয়ে। ফ্রান্সের প্রধান বিরোধী নেত্রী পেন সম্প্রতি বলেছেন, রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় প্যারিস অংশ নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক ভুল করেছে এবং ইইউ’র নীতি ‘সাম্রাজ্যবাদী’ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি প্যারিসে অসংখ্য মানুষ বিক্ষোভ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও ফ্রান্সকে ন্যাটো থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বৃদ্ধিতে মার্কিনীদেরও মরণদশা হয়েছে! অর্থনীতিও সংকুচিত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি বলেছে, বিশ্বে অর্থনৈতিক শক্তিতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপ। কিন্তু তাদের অর্থনীতির চাকা দ্রুত গতি হারাচ্ছে। অপরদিকে, রাশিয়ার যত ক্ষতি হবে বলে প্রতিপক্ষরা আশা করেছিল, ততটা হয়নি। বরং দেশটির বাণিজ্য ও রুবলের মান বেড়েছে অনেক। পুতিনেরও জনপ্রিয়তা বেড়েছে ব্যাপক। রাশিয়া ও পুতিনকে একঘরে করার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বৈঠক হচ্ছে যথারীতি। বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বৈঠকেও রাশিয়ার প্রতিনিধিগণ অংশ নিচ্ছেন, যার অনেকগুলোতে পুতিনও যোগ দিচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে চীনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে ও পরবর্তীতে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন পুতিন। তখন তিনি বলেন, চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের মধ্যে কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সর্বশেষ সমরখন্দের এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেন পুতিন।

সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলন হয় গত ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানের সমরখন্দে। এসসিও’র সদস্য দেশ-৮টি (চীন, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, কাজাখিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান)। ইরান সদস্য প্রাপ্তির স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া, আফগানিস্তান, বেলারুশ ও মঙ্গোলিয়া পর্যবেক্ষক দেশ ও আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্ক ‘সংলাপ অংশীদার’ দেশ এবং মিসর, কাতার ও সৌদি আরব সংলাপে অংশীদার দেশ হওয়ার প্রক্রিয়াধীন দেশ। এছাড়া, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন, এডিবি, আসিয়ানসহ অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসসিও সচিবালয় ও আরব লীগ সচিবালয়ের মধ্যেও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে গত বছর। তাই এসসিও’কে ন্যাটোর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমরখন্দে এসসিও’র সম্মেলনে বর্ণিত দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, বর্তমান বিশ্বে ঐক্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, সহযোগিতা ও বৈরিতার সমস্যা রয়েছে, যা বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক উন্নয়নে সহায়ক নয়। তাই সবার উচিত বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানো, অব্যাহতভাবে সদস্য দেশের উন্নয়নে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও এসসিও’র সদস্য সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া জোরদার করা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান করতে হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভেঙে ফেলতে চায় বলেই ইউক্রেনে সেনা পাঠানো হয়েছে। অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে সমরখন্দে ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসসিও অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে না, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলার অজুহাতে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা হবে। এসসিওকে আরও কার্যকর ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হবে এবং সংস্থাভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হবে ও রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন পালনের জন্য আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া, সম্মেলনে আন্তর্জাতিক খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা, সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে একাধিক ঘোষণা ও দলিল প্রকাশিত এবং ইরানের সদস্য পদ গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ এসসিও’র সমরখন্দ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা ও দলিলে সংস্থার এবং সমগ্র বিশ্বের শান্তি, সংহতি ও উন্নতির অঙ্গীকার করা হয়েছে।

এসসিও’র সম্মেলনের অবকাশে সংশ্লিষ্ট নেতারা ভিন্নভাবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। শি-পুতিন বৈঠকে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আর একা ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। বিশ্বে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। রাশিয়া এক চীন নীতি মেনে চলবে। শি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন ও রাশিয়া বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে ক্রম পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসবে। ইরান-পাকিস্তান বৈঠেকে রাইসি বলেন, ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্কের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। রাশিয়া-পাকিস্তান বৈঠকে পুতিন পাইপলাইনের মাধ্যমে পাকিস্তানে গ্যাস দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পুতিন-মোদি বৈঠকে পুতিন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ হবে। মোদি বলেন, এখন যুদ্ধের সময় নয়। শি-এরদোগান বৈঠকে শি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। পুতিন-এরদোগান বৈঠকে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে এরদোগান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এরদোগান বলেন, তুরস্ক এসসিও-তে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিতে চায়। শি-রাইসি বৈঠকে রাইসি বলেন, আমেরিকা যত হুঙ্কারই দিক না কেন, ইরান কখনো তার চাপের মুখে মাথানত করবে না। এছাড়া, পুতিন-রাইসি এবং চীন-রাশিয়া-মঙ্গোলিয়া ও চীন-বেলারুশ এর শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।

এদিকে, সমরখন্দে পুতিন ও শির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তীব্র নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘এই সময়ে পুতিনের সঙ্গে এরকম বৈঠক হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে ইউক্রেনে পুতিন যা করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তো নয়ই। ইইউ প্রধান উরসুলা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে পুতিনকে আইসিসি-তে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ও পুতিনকে অবশ্যই এই যুদ্ধে হারাতে হবে। ইতোপূর্বে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনকে দায়ী করেছেন। তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় আমেরিকা ও তার মিত্রদের ভয়াবহ আক্রমণে নারী-শিশুসহ অসংখ্য নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষ হত্যা ও দেশগুলো ধ্বংস হয়েছে, তার কী হবে? নিশ্চয় তাদেরও আইসিসিতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার হতে হবে। এটা হলে আর কেউ কোনো দেশকে আক্রমণ করার সাহস পাবে না। দ্বিতীয়ত: আমেরিকা অনেক দেশের বহু মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বন্দি শিবিরে রেখে লোমহর্ষক নির্যাতন করেছে, তার কী হবে?

বালিতে গত ৭-৮ জুলাই জি-২০ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের পর বলা হয়েছে, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ও জাতি সংঘ একমত হয়েছে, বহুপক্ষবাদ হলো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শ্রেষ্ঠ উপায়। তাই বিশ্বকে জরুরিভাবে বহুপাক্ষিকতা শক্তিশালী করতে হবে। অপরদিকে, চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিক্স গঠিত হয়েছে। ইরান ও আর্জেন্টিনা এর সদস্য হওয়ার আবেদন করেছে। এছাড়া, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিশর সদস্য পদ পাওয়ার আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা সকলেই সদস্য হলে ব্রিক্সই হবে জি-৭ এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী। এদিকে, ইউক্রেন ও মার্কিন বলয় বনাম রাশিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া একাই লড়ছে। দেশটির মিত্ররা একবিন্দুও সহায়তা করেনি। তারা সহায়তা করলে এতোদিনে ইউক্রেনের পরাজয় ঘটতো এবং আমেরিকা ও তার মিত্রদের পাততাড়ি গুটাতে হতো।

আমেরিকা তাইওয়ান নিয়ে চীনের সাথে গোলমাল বাঁধানোর পাঁয়তারা করছে! চীনকে উপেক্ষা করে তাইওয়ানের সাথে সরাসরি সামরিক ও বিভিন্ন বাণিজ্য করছে এবং দেশটির নেতৃবৃন্দ ঘনঘন তাইওয়ান সফর করছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও সম্প্রতি বলেছেন, চীন হামলা চালালে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রত্যুত্তরে বেইজিং বলেছে, আমেরিকা অখণ্ড চীনকে বিভাজিত করার চেষ্টা করলে চীনও বসে থাকবে না। তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চরম উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি নিউইয়র্কে বলেছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। কেউ কেউ ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধের’ আশঙ্কা করছেন। অথচ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এক চীন নীতি মেনে চলছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রও। তবুও দেশটি অবিরাম তা লঙ্ঘন করছে, যা দ্বিচারিতা। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, চীন তার প্রধান শত্রু। কারণ, স্বল্পদিনেই চীনের বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে বিশ্ব ও গ্রহ-নক্ষত্রের সর্বক্ষেত্রেই। উপরন্তু দেশটি মহাকাশে নিজস্ব নতুন স্পেস স্টেশন ‘তিয়ানগঙ’ তৈরি করছে, যার কাজ অচিরেই শেষ হবে। ২০২৫ সাল থেকে মহাকাশ পর্যটনও চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বোপরি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সাথে সুসম্পর্ক হয়েছে চীনের। তাই দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পরাশক্তি। আর আমেরিকা এক নম্বরে রয়েছে। তবে, ২০৩০ সালের মধ্যেই চীন বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি হবে বলে আন্তর্জাতিক সব মহলেরই অভিমত। যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও গত ১৬ জুলাই বলেছেন, পশ্চিমা আধিপত্য শেষের দিকে যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি। তাই চীনকে কাবু করার জন্যই নানা অপকর্ম করছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য তাতে এ পর্যন্ত চীনের একবিন্দুও ক্ষতি হয়নি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা এবং বেসরকারি খাতের নির্বাহীরা এক সমাবেশ বলেছেন, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পিছিয়ে পড়েছে, যা উদ্বেগের বিষয়। তদ্রুপ অন্য সব ক্ষেত্রেও। তাই তাইওয়ান নিয়ে চীনের সাথে যুদ্ধ বাঁধালে আমেরিকারই ক্ষতি হবে বেশি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মার্চে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে বিশ্ব একটি গুরুতর পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারাসহ (চীন) আমরা মিলে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো নিয়ে একটি বহুমেরুকেন্দ্রিক, ন্যায়পরায়ণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাব। এছাড়া, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আন্তঃসহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে একমত হয়েছে রাশিয়া ও চীন। উপরন্তু কিছু উদীয়মান দেশের সাথে তাদের সুসম্পর্ক হয়েছে, যা অটুট থাকলে অচিরেই চীন-রাশিয়া বলয়ই হবে বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী ও কল্যাণকর। আর আমেরিকা ও তার মিত্রদের শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে বলে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের ধারণা। এমনকি মার্কিনীদেরও। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইউ গভ’ এর জরিপ ফল মতে, প্রতি ১০ জন আমেরিকানের তিনজনই মনে করছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সুপারপাওয়ারের মর্যাদা হারাতে পারে। তবুও ক্রেমলিন মুখপাত্র পেসকভ সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ব নেত্বত্বের আসনে বসার কোনো আকাক্সক্ষা রাশিয়া ও চীনের নেই, যা অন্যান্য দেশের রয়েছে। যা’হোক, পশ্চিমাদের মুদ্রারও অধোগতি শুরু হয়েছে। এতদিন বিশ্বে তাদের মুদ্রা ছিল প্রধান। বিশেষ করে মার্কিন ডলার। কারণ, মার্কিন ডলারেই বিশ্বের বেশিরভাগ বাণিজ্য, ঋণ, রিজার্ভ ইত্যাদি চলতো। কিন্তু ইদানীং রাশিয়ার রুবল ও চীনের ইউয়ানের চাহিদা ও মান বাড়ছে। ফলে পশ্চিমাদের মুদ্রার মান কমছে। বাংলাদেশেও ইউয়ানের ব্যবহার শুরু হয়েছে সম্প্রতি। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুপি/টাকা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে অনেক মুসলিম দেশ চীন-রাশিয়া বলয়ভুক্ত রয়েছে। আরো অনেক মুসলিম দেশ যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক আরব ব্যরোমিটারের তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে মধ্যপ্রাচ্য।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন