Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে হিমালয়ের জমি চীনকে হস্তান্তরের অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

চীনের সাথে দেশের বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তের কাছে বসবাসকারী ভারতীয়রা তার সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বিতর্কিত এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং উভয় পক্ষ একটি বাফার জোন তৈরিতে সম্মত হওয়ার পর জমি দেওয়ার অভিযোগ করেছে।

এ মাসের শুরুর দিকে ২০২০ সালের জুন থেকে উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্ত বিরোধে অবরুদ্ধ ভারতীয় ও চীনা সৈন্যরা গোগরা-হট স্প্রিংসের বিতর্কিত এলাকা থেকে প্রত্যাহারের চুক্তিতে পৌঁছানোর পর প্রত্যাহার শুরু করে। ভারত সরকার বলছে যে, চুক্তিটি বিতর্কিত সীমান্তের উভয় পাশের এলাকাকে পুনরুদ্ধার করেছে, যা একটি ‘প্রি-স্ট্যান্ডঅফ পিরিয়ড’ হিসাবে পরিচিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নামে পরিচিত। নতুন সৃষ্ট বাফার জোনে কোনো পক্ষই তার সৈন্যদের টহল দিতে পারবে না।

তা সত্তে¡ও, স্থানীয় ভারতীয় বাসিন্দারা, এ অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং প্রাক্তন ভারতীয় সামরিক অফিসাররা যারা লাদাখের বিতর্কিত সীমান্তে কাজ করেছেন তারা দাবি করছেন যে, নতুন ‘বাফার জোন’ পূর্বে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এ অঞ্চলের একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর কনচোক স্ট্যানজিন বলেছেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এমন এলাকাগুলো খালি করে দিচ্ছে যেগুলো একেবারেই বিতর্কিত ছিল না, যখন চীনা সেনারা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের টহল দেওয়া এলাকায় অবস্থান করছে’।

স্ট্যানজিন দাবি করেছেন যে, লাদাখের প্যাংগং হ্রদের আশেপাশের প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে প্রত্যাহার করার জন্য ২০২১ চুক্তির সময় ভারত ইতোমধ্যেই চীনকে অঞ্চল ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বের বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, যেমন প্যাংগং সো এলাকায় যেখানে আমাদের সেনাবাহিনী আবার একটি বিশাল এলাকা হারিয়েছে’।

স্থানীয় এলাকার অনেক মানুষ শুধু তাদের নিরাপত্তার জন্যই উদ্বেগের কথা বলছিল না, বরং চীনা সৈন্যদের ভ‚মি হারানোর ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্যও উদ্বেগ ছিল। ‘আমরা বিশাল চারণভ‚মি হারাচ্ছি, যেগুলোকে আমরা চারণভ‚মি হিসাবে ব্যবহার করব’ বলেছেন স্ট্যানজিন, যিনি এলাকার বেশিরভাগ লোকের মতো, উপজাতীয় চাংপা গবাদি পশুপালক স¤প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তাদের জীবনযাত্রার প্রধান উৎস হল কাশ্মীরি পশম উৎপাদনকারী চ্যাংরা ছাগল।

তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের উদ্বেগ শুধুমাত্র চীনা অনুপ্রবেশ নিয়ে ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক, কারণ আমাদের সরকার আমাদের জমি আনন্দের সাথে ছেড়ে দিচ্ছে’। ‘যদি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকে তবে আমরা আরো জমি হারাবো’।

ভারতের প্রধান বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘বিনা লড়াইয়ে চীনকে ১ হাজার বর্গ কিমি [৩৯০ বর্গ মাইল] ভ‚খÐ দেওয়ার’ অভিযোগ করেছেন।
সা¤প্রতিক প্রত্যাহারে ঐকমত্য পৌঁছেছে গত সপ্তাহে, শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় ও চীনা সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ১৬তম দফায়। উভয় পক্ষ দাবি করেছে যে, গোগরা-হট স্প্রিংস এলাকায় ‘সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও প্রশান্তি বজায় রাখার জন্য’ একটি পদক্ষেপে নিজ নিজ পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে সম্মত হয়েছে।

১৯৯৭ সালের দিকে গোগরা-হট স্প্রিংস এলাকায় দায়িত্ব পালন করা একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা ক্যাপ্টেন তাশি চেপাল বলেছেন যে, এলাকাগুলোকে এখন ‘বাফার জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ভারতীয় বা চীনা সৈন্যরা অবস্থান করবে না, আগে ভারতীয় সেনারা টহল দিত।

চেপাল বলেন, ‘আমরা এসব অঞ্চলে টহল দেব যেখানে এখন চীনা পোস্ট রয়েছে, বাফার জোনগুলোকে একপাশে রেখে যা স্পষ্টতই আমাদের অঞ্চলে’। ‘আদর্শভাবে, চীনাদেরও তাদের টহল অঞ্চলের পিছনে সরে যাওয়া উচিত ছিল, তবে তা হয় বলে মনে হয় না।

২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে সৈন্যদের পুলব্যাক হল দ্বিতীয় বিচ্ছিন্নকরণ আইন, যখন সেনারা ‘আগামী মোতায়েন বন্ধ করে দেয়’ এবং এ অঞ্চলের অন্য একটি এলাকায় অবকাঠামো ভেঙে দেয় যেখানে ২০২০ সালের জুনে দুই পারমাণবিক শক্তির মধ্যে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়, যখন কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য এবং ৪ জন চীনা সৈন্য মারা গিয়েছিল।

সৈন্যরা লাঠি ও পাথর নিয়ে হাতে-হাতে লড়াইয়ের পর দুই দেশ বিতর্কিত সীমান্তে আর্টিলারি, ট্যাঙ্ক এবং ফাইটার জেট দ্বারা সমর্থিত কয়েক হাজার সৈন্যকে মোতায়েন করেছিল। এ অঞ্চলের সামরিকীকরণ আগে কখনও হয়নি।
২০২০ সালের সংঘর্ষের পর, উত্তেজনা অসাধারণ মাত্রায় বেড়ে যায়, সীমান্তের উভয় দিকে ২ লাখ সৈন্য মোতায়েন করা হয় এই দুর্গম উচ্চ-উচ্চতার ভ‚খÐে, যেখানে শীতকালে তাপমাত্রা -৪০ সে. (-৪০ ফা.) পর্যন্ত নেমে যায়। ২,১০০ মাইল সীমান্তের উভয় দিকে অভ‚তপূর্ব আর্টিলারি এবং অবকাঠামো নির্মাণও ছিল, যেখানে চীন ১৯৬২ সালে ভারত আক্রমণ করেছিল।

ফলে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক তুষারময় রয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সংঘর্ষের পর তারা প্রথমবার দেখা করেন, তবে দুই নেতার মধ্যে কোনো হ্যান্ডশেক বা বৈঠক হয়নি।

ভারতের সামরিক নেতারা বিচ্ছিন্নকরণকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন যা প্রতিদ্ব›দ্বী সৈন্যদের মধ্যে শারীরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনাকে হ্রাস করেছে, যারা নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রায় নাক-থেকে অবস্থান করছে। স¤প্রতি একটি বাফার জোন ঘোষণা করা এলাকায় চীন একটি অস্থায়ী সেনা ঘাঁটি তৈরি করেছে বলে জানা গেছে, যেটি তখন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

‘বাফার জোনের ধারণাটি হল বিচ্ছিন্ন করা যাতে সৈন্যরা একে অপরের মুখোমুখি না হয় এবং সমস্যা না হয়’ বলেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তর কমান্ডের প্রাক্তন প্রধান দীপেন্দর সিং হুডা, যার মধ্যে লাদাখ অঞ্চলও রয়েছে। ‘উদাহরণস্বরূপ, কিছু এলাকায় ট্যাঙ্কগুলো একে অপরের ১০০ মিটারের মধ্যে ছিল’।

ভারত যে ক্রমবর্ধমান শত্রæ চীনের সাথে মোকাবিলা করতে সফল হয়েছে এই ধারণাটি চিত্রিত করার জন্য সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য মোদি সরকারের প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে হচ্ছে আলোচনাগুলো।
তবুও, হুডা তাদের মধ্যে ছিলেন যারা বলেন যে, ভারত এখনও চীনকে লাদাখের ডেপসাং এবং ডেমচোক এলাকাসহ সবচেয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে পারেনি ‘যেখানে চীনারা ভারতীয় সৈন্যদের প্রচুর সংখ্যক জায়গায় টহল দিতে বাধা দিচ্ছে’।

চীনের সৈন্যদের বিশাল বিল্ডিংয়ের আবাসস্থল, ভারতের দৌলত বেগ ওল্ডি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র শিয়াচেন হিমবাহ, যেখানে ভারতের শত্রæ, পাকিস্তানের কৌশলগত উপস্থিতি রয়েছে, এর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ অঞ্চলটি ভারতের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হুডা বলেন, ‘এটাই সেই এলাকা যেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা’। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ