পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। দিল্লি থেকে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা। এর আগে আম্মার মৃত্যুর দু-ঘণ্টার মধ্যেই তার উত্তরাধিকারী ঠিক করে ফেলে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল আন্না ডিএমকে। তামিলনাড়ুর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পনিরসেলভম। সোমবার রাতেই তাকে নেতা বেছে নেন আন্না ডিএমকে’র বিধায়করা। আম্মার ছবি পকেটে নিয়ে রাত সোয়া একটা নাগাদ রাজভবনে শপথ নেন তিনি। পনিরসেলভমের সঙ্গেই জয়ললিতা মন্ত্রিসভার একতিরিশ জন সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও।
গতকাল ভোর থেকেই হাজার হাজার ভক্ত, সমর্থক ও দলীয় কর্মীরা নেত্রীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন। তার লাশ ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে সরকারি রাজাজি হলে রাখা হয়। অসংখ্য মানুষ লাইন ধরে প্রিয় নেত্রীর কফিনের পাশ দিয়ে হেঁটে যান এবং তাকে এক নজর দেখেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার অনেকে কষ্টে নিজের কপাল চাপড়ান, বিলাপ করেন। প্রিয় নেত্রীর ছবি নিয়ে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন অনেকে। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা জয়ললিতা তার লাখ লাখ সমর্থকের কাছে ‘আম্মা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটায় চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তামিলনাড়–র ছ’বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। গত আড়াই মাস সেখানেই ভর্তি ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী জয়ললিতা।
গত ২২ সেপ্টেম্বর জ্বর ও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন রোগভোগের পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন দাবি করা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় জানা যায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার সারা দিনই মানুষের মাঝে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। সন্ধ্যায় গুজব ছড়ায়, মারা গেছেন জয়া। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই খবর সত্য নয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাত সোয়া বারোটা নাগাদ ঘোষণা করা হয়, রাত সাড়ে এগারোটায় মারা গেছেন রুপালি পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ জয়ললিতা।
খবর পেয়ে শোকবার্তা পাঠান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘ভারতীয় রাজনীতিতে বিপুল শূন্যতা তৈরি করল এই মৃত্যু।’ এছাড়া শোকবার্তা পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী ও প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। তামিলনাড়ুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গতকাল সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন করবে বলে ঘোষণা দেয়। সোমবার রাতেই লাশ নেয়া হয় জয়ললিতার বাড়ি পোজ গার্ডেনে।
দাহ নয়, গুরুর পরম্পরায় সমাহিত হবেন জয়ললিতা
তামিলনাড়ু রাজ্যের সদ্য প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার লাশ দাহ করা হবে না; তাকে সমাহিত করা হবে। কামারাজার সালাইয়ের এমজিআর মেমোরিয়ালে জয়ললিতার গুরু এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এমজি রামাচন্দ্রনের সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া খবরটি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে জয়ললিতার মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে-এর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তার দলের উচ্চ পর্যায় থেকে সমাহিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এআইএডিএমকে-এর প্রতিষ্ঠাতা এমজি রামাচন্দ্রনকেও সমাহিত করা হয়েছিল।
গতকাল সকালে পোয়েস গার্ডেনের বাড়ি থেকে প্রয়াত নেত্রীর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাই শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাজাজি হলে। পরনে ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় সবুজ রঙের শাড়ি। চার সেনা সদস্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর কফিন জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেন। শ্রদ্ধা জানান নতুন মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভম ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা। জয়ললিতাকে অন্তিম দর্শনের জন্যে সেখানে লাখো মানুষ জড়ো হতে শুরু করে।
স্থানীয় সময় গতকাল দুপুরে চেন্নাইয়ের রাজাজি হলে জয়ললিতার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতারা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজাজি হলে জড়ো হন।
তামিলনাড়ুতে সমর্থকদের কাছে জয়ললিতা ‘আম্মা’ হিসেবে পরিচিত। ভক্তদের আম্মা পুরাচ্চি থালাইভি, বা বিপ্লবী নেত্রী নামেও পরিচিত জয়ললিতা। ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহীশূরের মেলুকোটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের নায়িকা। নায়ক-রাজনীতিক এম জি রামচন্দ্রনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই রাজনীতিতে অভিষেক তামিলনাড়–র প্রিয় ‘আম্মা’র। ১৯৮২ সালে এআইএডিএমকে দলে যোগ দেন জয়ললিতা। ১৯৮৪ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হন রামচন্দ্রনের স্ত্রী। জয়ললিতা বিরোধী দলনেতা হন ১৯৮৯ সালে। পরে ১৯৯১ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। তিনি ছিলেন তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ পান ২০০১ সালে। কিন্তু পরে ২০০১ সালে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছাড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীর পদ। ২০০৩-এ জয়ললিতা ফের ফেরেন মুখ্যমন্ত্রিত্বে। ২০১১ সালে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন জনতার ‘আম্মা’ ও এআইএডিএমকে নেতা।
২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির দায়ে ৪ বছরের কারাদন্ড হয় জয়ললিতার। হারান মুখ্যমন্ত্রী পদও। একমাস পর ২৭ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর ২০১৫ সালের ১১ মে কারাদন্ড মওকুফ করে কর্নাটক হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন জয়ললিতা। একই দিনে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রিত্বে ফেরেন তিনি। পরে ২০১৬ সালে চতুর্থ বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তামিল জনগণের ‘আম্মা’। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।