Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রপতির কাক্সিক্ষত উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংলাপ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। খবর অনুযায়ী, চলতি মাসেই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর সুবিধাজনক সময়ে এ সংলাপ শুরু হতে পারে। সিরিজ সংলাপে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জাননো হবে। খুব সীমিত সময়ের মধ্যেই এ সংলাপ শেষ হবে। এজন্য একদিনে একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত নেবেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি ও মরক্কো সফর সম্পর্কে অবহিত করতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্র্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে কোন কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বলা হয়েছে, প্রথমে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কথা ভাবা হলেও বিএনপি সংসদে না থাকায় বিকল্প চিন্তা করা হয়েছে।
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ যখন শেষ পর্যায়ে তখন দেশের রাজনৈতিকদলগুলো সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি তুলেছে। কেবল দেশের ভেতরেই নয়, বাইরেও এনিয়ে বিস্তর আলাপ-অলোচনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা দেখতে চায় বিধায় তারাও আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে। নির্বাচন পরিচালনা যেহেতু নির্বাচন কমিশনের কাজ সে কারণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের কোন বিকল্প নেই। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিকদল সেকারণেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে আসছেন। বিশেষ করে গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এ বিষয়টি আরো গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে উচ্চতর আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও আরো দু’টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিধান রেখে দেয়ার প্রেক্ষিতেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও তার অনুকূলে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি জরুরি হয়ে দেখা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাবনা নিয়ে আলেচনার জন্য সময় দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই বাস্তবতায় রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছেন বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সময়োচিত ও প্রশংসনীয়। অবশ্যই এ আলোচনা হতে হবে ফলপ্রসূ। অতীত অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে অত্যন্ত তিক্ত। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো.জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেছিলেন। সে আলোচনা থেকে ফলপ্রসূ কিছু বের হয়নি।
এবারে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই দেশের বিশিষ্টজনেরা কথা বলেছেন। তারা সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের পক্ষে সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন না করা হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াবে বলেও তারা মত দিয়েছেন। রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে যে সংলাপের আহবান জানানো হয়েছে তাকেও বিশিষ্টজনেরা আলোচনা শুরুর একটা ইতিবাচক দিক বলে অভিহিত করেছেন। সে বিবেচনায় বলা যায়, রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগ  এবং এই আলোচনার মাধ্যমে যদি প্রকৃত সমঝোতায় পৌঁছা যায়, তাহলে সেটি হবে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি। আলোচনা সংক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়ে আমরা মনে করি, এনিয়ে তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে হলেও বি¯ৃÍত আলোচনা করাই উত্তম। মনে রাখতে হবে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন জাতীয় স্বার্থেই অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন