Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গুম-হত্যার অবসান চায় মানুষ

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশে আবারো গুম-নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তা থেকে এবং রাতের আঁধারে বাসস্থান থেকে কখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে, কখনো পরিচয়হীন চক্রের হাতে গুম হয়ে যাচ্ছে মানুষ। মূলত ২০১১ সালে বাংলাদেশে ফোর্স-ডিস্যাপিয়ারেন্স’র ঘটনা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী করে। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য গুমের ঘটনা কিছুটা কমে আসলেও সম্প্রতি তা আবারো আতঙ্কজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। গত দু’সপ্তাহে অন্তত ১০ জন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এতদিন প্রধানত বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরাই বেশী গুমের শিকার হলেও এবার সরকারী দলের নেতাকর্মীও গুমের শিকার হয়েছে। নাটোর থেকে অপহৃত হওয়ার দু’দিন পর দিনাজপুরে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার খবর গতকাল বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই তিনজনই নাটোরের যুবলীগ নেতা এবং এদের একজন একটি অনলাইন মিডিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। এদের র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। তবে র‌্যাব এ দাবী অস্বীকার করেছে। নিহতদের কেউ কেউ হত্যামামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত বলেও প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। অন্যদিকে রাজধানীর বনানী থেকে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ২ ছাত্রসহ চার তরুণ গত বৃহস্পতিবার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত তাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
নাটোর থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বনানীসহ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে গুমের শিকার পরিবারগুলোর মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুধু ভুক্তভোগী পরিবারেই নয়, গুম-হত্যার আতঙ্ক এখন সারাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে গত চার বছরে দেশে ২৩০ জন গুম হয়েছে। অজ্ঞাত বা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজদের অনেকের পরিবারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার দাবী করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথমত, অস্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এদের খুঁজে বের করা বা নিখোঁজ হওয়ার তথ্য উদ্ঘাটনেরও কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছেনা। যদিও নিখোঁজ ও ভিকটিমদের নিরাপত্তা এবং খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। নিখোঁজ বা গুম হওয়া মানুষদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের, এই মতামত ব্যক্ত করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ এ বিষয়ে একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন। বিশেষত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং নিখোঁজদের পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে স্বজনের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় দিন গোনার পাশাপাশি নানাভাবে দেন-দরবার করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যেন কিছুই করণীয় নেই। এ ধরনের বাস্তবতা সাধারণ মানুষকে আরো হতাশ ও অসহায় করে তুলছে।    
প্রায় তিন বছর ধরে নিখোঁজ এমন ২০ জনের পরিবারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানানো হয়েছে। আলোচিত ২০ জনের ১৯ জনই ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে নিখোঁজ হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সম্পাদকীয় থেকে জানা যায়। একইভাবে ২০ জনের সবাইকেই র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনকে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা তুলে নিয়েছে, বাকিদেরও র‌্যাব ও গোয়েন্দা পরিচয়ে তুলে নিয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসছে। অভিযোগের সত্যতা বা সংশ্লিষ্টদের অস্বীকার করার বিতর্কে না গিয়ে এখানে এটুকু বলা যায় যে, নিখোঁজ বা গুম হওয়ার তথ্যগুলো মিথ্যা নয়। এক স্থানে গুম হওয়ার পর অন্যস্থানে গুলিবিদ্ধ বা বস্তাবন্দি লাশ খুঁজে পাওয়ার তথ্যাবলীও অসত্য নয়। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নে এ এক ভয়াবহ বাস্তবতা। খোদ রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একই সময়ে চারজন নিখোঁজ হওয়ার পর গত ৬ দিনেও যেমন পুলিশ কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছেনা, একইভাবে ২০ জনের পরিবারসহ শ’ শ’ পরিবারের সদস্যরা তাদের নিখোঁজ স্বজনদের কোন হদিস পাচ্ছেনা। স্বজন হারানোর এই কষ্ট প্রকাশের কোন ভাষা থাকেনা। এ ধরনের আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কোন সমাজ সুখ-সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনা। হত্যাকারী, অপরাধী বা অপহরণকারী যারাই হোক, সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। দায় এড়ানো বা বিষয়কে হাল্কা করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন