Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রূপালি পর্দা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠা এক জয়ললিতা

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জয়ললিতা জয়রামের জীবনে যেমন এসেছে সাফল্য, তেমনি এসেছে ব্যর্থতা। বিভিন্ন সময়ে তিনি বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তুখোড় শিক্ষার্থী থেকে ছবিতে অভিনয়ের পর আসলেন রাজনীতিতে। তামিলনাড়ুতে সমর্থকদের কাছে জয়ললিতা আম্মা হিসেবে পরিচিতি পান। এক বর্ণময় জীবনের অবসান ঘটে গত সোমবার রাতে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে। ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহীশূরের মেলুকোটে জন্মগ্রহণ করেন জয়ললিতা। জয়ললিতারা দুই ভাই-বোন। বাবা জয়রাম ও মা বেদবল্লীর দুই সন্তানের মধ্যে তিনি বড়। তার ছোট ভাইয়ের নাম জয়কুমার। জয়ললিতার যখন দুই বছর বয়স তখনই তার বাবা মারা যান। এরপরই সংসার চালাতে কাজে নামতে হয় জয়ললিতার মা-কে। বেদবল্লী বোন অম্বুজাবল্লীর সঙ্গে চলে আসেন চেন্নাইয়ে। তবে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত জয়ললিতা কর্নাটকেই দাদা-দাদির কাছে ছিলেন। বেদবল্লী চেন্নাইয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর নাটক ও তামিল সিনেমায় কাজ শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে জয়ললিতা চেন্নাইয়ে গিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় জয়ললিতা গোটা তামিলনাড়ুতে প্রথমস্থান অধিকার করেন। এজন্য তিনি গোল্ড স্টেট পুরস্কারও পান। চেন্নাইয়ে তিনি চার্চ পার্ক কনভেন্ট স্কুলে পড়তেন। এছাড়া তিনি পড়াশোনার জন্য সরকারি স্কলারশিপও পেয়েছিলেন। তামিল ছাড়াও কন্নর, তেলুগু, মালয়ালম, হিন্দি ও ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন তিনি। ১৯৬১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়ে মোট ১৪০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়ললিতা। তখন দক্ষিণের ছবিতে সবচেয়ে সফল অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন তিনি। তামিল ছাড়াও তেলেুগু, কন্নর ছবিতেও তিনি সমান দক্ষতায় কাজ করেছেন। এছাড়াও নৃত্যশিল্পী হিসেবেও দক্ষতা ছিল তার। অভিনেতা-রাজনীতিক এমজি রামচন্দ্রণের ঘনিষ্ট ছিলেন জয়ললিতা। তার হাত ধরেই রাজনীতিতে অভিষেক তামিলনাড়ুর প্রিয় আম্মার। ১৯৮২ সালে এআইএডিএমকে দলে যোগ দেন জয়ললিতা। ১৯৮৪ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে রামচন্দ্রণ মৃত্যুবরণ করলে দলে বিভাজন তৈরি হয়। একদল ছিলেন এমজিআর-এর স্ত্রী জানকি রামচন্দ্রণের দিকে আর একদল ছিলেন জয়ললিতার সঙ্গে। রামচন্দ্রণের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হন রামচন্দ্রণের স্ত্রী।  
জয়ললিতা বিরোধী দলনেতা হন ১৯৮৯ সালে। পরে ১৯৯১ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। তিনি ছিলেন তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯১ সালেই মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি সম্মানতাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ পান ২০০১ সালে। কিন্তু পরে ২০০১ সালে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছাড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীর পদ। ২০০৩-এ জয়ললিতা ফের ফেরেন মুখ্যমন্ত্রিত্বে। ২০১১ সালে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন জনতার আম্মা ও এআইএডিএমকে নেতা। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির দায়ে চার বছরের কারাদ- হয় জয়ললিতার। হারান মুখ্যমন্ত্রীর পদও। একমাস পর ২৭ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর ২০১৫ সালের ১১ মে কারাদ- মওকুফ করেন কর্নাটক হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে একইদিনে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রিত্বে ফেরেন তিনি। পরে ২০১৬ সালে চতুর্থ বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তামিল জনগণের আম্মা। ভক্তদের কাছে তিনি পুরাচ্চি থালাইভি, বা বিপ্লবী নেত্রী নামেও পরিচিত। চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জয়ললিতা। তারপর অবস্থার অবনতি হয় তার। দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর সেরেও ওঠেন। জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। দলের তরফে যেদিন তার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার খবর ঘোষণা হয়, সেদিনই বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি।  
গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় অবসান ঘটে এক বর্ণাঢ্য জীবনের। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জয়ললিতা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ