Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডায়াবেটিস রুগীর ব্যায়াম

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


ডায়াবেটিস কি?
আমাদের শরীরে প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় নামে একটি অরগ্যান আছে যা থেকে তৈরি হয় ইনসুলিন নামের এক ধরনের হরমোন। এই হরমোনের কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজকে শরীরের কোষে ঢুকতে সাহায্য করা। আমাদের খাবার হজমের পর বেশিরভাগ গ্লুকোজ হিসেবে রক্তের মধ্য পৌঁছে যা ইনসুলিনের উপস্থিতিতে শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে যায় যা আমাদের কাজ করার শক্তি যোগায়। ইনসুলিন হরমোন যদি যথেষ্ট পরিমানে তৈরি না হয় বা সঠিকভাবে কাজ না করতে পারে তাহলে রক্তের গ্লুকোজ কোষে ঢুকতে পারে না ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে একদিকে কোষগুলো গ্লুকোজের অভাবে কাজ করার শক্তি হারায় আর অন্যদিকে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্র¯্রাবের সাথে বেরিয়ে যেতে থাকে। এই কারণে ঘন ঘন প্রসাব হয় ও শরীরের শক্তি হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ বলা হয়।
ডায়াবেটিস কয় ধরনের হয়?
ডায়াবেটিস দুই প্রকার।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস
অল্প বয়সে হয় এই ধরনের ডায়াবেটিস, এখানে একদমই ইনসুলিন তৈরি হয় না পানক্রিয়াসে। ফলে এই রোগিকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। তাই এদেরকে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস ও বলা হয়। এই ধরনের ডায়াবেটিস ৫% ভাগের মতো।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
এখানে অগ্নাশয় ইনসুলিন হরমোন তৈরি করলেও তা যথেষ্ট নয় বা বিভিন্ন কারণে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই ধরনের ডায়াবেটিস ৯৫%
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা :
- ব্যায়াম ও জীবনযাত্রা প্রণালীর পরিবর্তন
- খাবার অভ্যাস পরিবর্তন ও
- ঔষধ
ব্যায়াম : রোগীর মনে প্রশ্ন হতে পারে রোজ জামা জুতো পরে ব্যায়াম করব? সময়ের অপচয় করব? তার চেয়ে একটা ট্যাবলেট গিলে ফেললেই হলো বা একটা ইনজেকশন নিলেই হবে। বাস্তবতা হলো ব্যায়াম ঔষধের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ডায়াবেটিসের ফলপ্রদ ঔষধ মেটফরমিনের চেয়ে ব্যায়াম রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর।
ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়ামে কি উপকার হয়?
ডায়াবেটিসে ব্যায়ামের উপকার হলো :
- ব্যায়ামে শক্তি খরচ হয় ফলে শরীরের ওজন কম থাকে ও শরীরে চর্বি কমে।
- ব্যায়াম-এর মাধ্যমে পেঙ্ক্রিয়াসের বেটা সেল থেকে ইনসুলিন তৈরি বৃদ্ধি পায়
- ব্যায়াম ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয় তাতেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে বাড়তি ঔষধেরদরকার নাও পড়তে পারে।
- ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
- ডায়াবেটিসের জটিলতা কমানো সম্ভব হয়।
- বায়াম রক্তের ভালো কোলেস্টেরল(ঐউখ) বাড়ায় এবং খারাপ
কোলেস্টেরল(খউখ) কমায়
- ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
- ব্যায়াম দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে সতেজ প্রফুল্ল রাখে।
- ঘুম ভালো হয়।
- হাড় ও হৃৎপি-কে শক্তিশালী করে।
- জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে।
- বৃদ্ধ বয়সে হাড়ভাঙ্গার একটা প্রধান কারণ অস্টিওপোরসিস বা হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া বিশেষ করে মহিলাদের হিপ ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে। ব্যায়াম অস্টিওপোরসিস কমায়।
- ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ব্যায়াম বয়স বৃদ্ধিতে কমাতেও উপকারি। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের একই বয়সের লোকদের থেকে কম বয়স্ক দেখায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম যৌন ক্ষমতা অটুট রাখে।
- ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধেও উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস দেরিতে হবে অথবা নাও হতে পারে। ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীরা কি ধরনের ব্যায়াম করবেন?
বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম।
যেমন -
১। এরোবিক ব্যায়াম
২। স্ট্রেংথেনিং ব্যায়াম
৩। স্ট্রেচিং বায়াম
৪। ব্যালান্সিং ব্যায়াম
এরোবিক ব্যায়াম : সাধারণভাবে ব্যায়াম বলতে যে গুলোকে বোঝায় তা হলো এরবিক বায়াম। যেমনÑ হাঁটা দৌড়ানো, জগিং, বাই সাইকেল চালান, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। এই ব্যায়ামে শরীরের অনেকগুলো মাংশপেশী অনেকক্ষণ ধরে কাজ করে ফলে শক্তি ক্ষয় হয়। এই ব্যায়ামে নাড়ীর গতি শ্বাসপ্রশ্বাস, বাড়বে।
স্ট্রেংথেনিং ব্যায়াম : স্ট্রেংথ মানে হলো শক্তি। মাংসপেশীর শক্তি বাড়ানোর জন্য এই ধরনের ব্যাড়াম। এই বাড়ামে কাজ করতে হয় বেশি। যেমন ওজন তোলা বা স্প্রিং টানা ইত্যাদি
স্ট্রেচিং ব্যায়াম : মাংসপেশী এবং গিঠের জড়তা কাটিয়ে সচল করাই হলো এই ব্যায়ামের উদ্দেশ্য। এরবিক ব্যায়াম শুরু করার আগে স্ট্রেচিং করা উচিত।
ব্যালান্সিং ব্যায়াম : ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এই বায়াম। যেমন এক পায়ের উপর দাঁড়ানো। এই ব্যায়াম চলাচল করতে সাহায্য করে এবং পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করে।
সপ্তাহে কয়দিন ও কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?
সপ্তাহের অধিকাংশ দিন (কমপক্ষে ৫ দিন) এবং দিনে ৩০ মিনিট এরোবিক ব্যায়াম অধিকাংশ সুফল বয়ে আনে। একনাগাড়ে ৩০ মিনিট ব্যায়াম না করতে পারলে ১০ মিনিট করে দিনে ৩ বার ব্যায়াম করলেও হবে। প্রতিদিন ৩ বার খাওয়ার আগে ১০ মিনিট করে ব্যায়াম একটা সুবিধাজনক ব্যায়াম।
ব্যায়াম করার কোনো নিয়মাবলী আছে কি?
ব্যায়াম শুরু করতে কোনো সমস্যা নেই তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কোনো জটিলতা আছে কিনা তার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
অল্প ব্যায়াম দিয়ে শুরু করবেন ধীরে ধীরে বাড়াবেন। প্রতিদিন ৫ মিনিট করে বাড়িয়ে সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মিনিট করে ব্যায়াম করা আপনার লক্ষ্য থাকবে।
ব্যায়াম শুরুতে কিছুক্ষণ অল্পস্বল্প ব্যায়াম করে নেবেন যেটা হলো “ওয়ার্ম আপ” সাথে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম এবং শেষ করার সময় ও হঠাৎ করে থেমে যাবেন না শেষ ৫ মিনিট আস্তে আস্তে কমিয়ে ব্যায়াম করা থামাবেন যেটা হলো “কুল ডাউন”।
যত বেশি ব্যায়াম করবেন তত বেশি শক্তি ক্ষয় হবে এবং গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণে রাখা তত সহজ হবে। এরোবিক ব্যায়ামের পাশাপাশি স্ট্রেংথেনিং ব্যায়াম করতে হবে সপ্তাহে ২/৩ দিন। এটা হতে পারে ওজন ওঠান নামানো বা স্প্রিং টানা। ব্যায়াম শুরুর আগে কি কি বিষয় ঠিক করে নেয়া উচিত?
-কি বায়াম করবেন
-কতক্ষণ করবেন
-কতবার করবেন
-কখন করবেন
-কি ধরনের পোশাক, জুতো পরবেন।
-ইচ্ছাকৃত ব্যায়াম না করতে পারলে অন্য কি ব্যায়াম করতে পারেন।
-কিভাবে ব্যায়াম বাড়াবেন।
-কতদূর যাবেন।
কখন ব্যায়াম করবেন না?
এটা নির্ভর করবে আপনার দৈনন্দিন কাজ, খাবারের সময়, ডায়াবেটিসের জন্য কখন কি ঔষধ খাচ্ছেন ,রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ইত্যাদির উপর।
১। রক্তে খাওয়ার পর গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ মি গ্রা বা খালি পেটে ২৫০ মি গ্রা এর উপর থাকলে ব্যায়াম করবেন না।
২। খাওয়ার পর-পরি ব্যায়াম করবেন না।
৩। আমাদের মত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে তাপমাত্রাও মাথায় রাখার বিষয়। প্রচ-
রোদের মধ্যে ব্যায়াম করবেন না কারণ অতিরিক্ত তাপমাত্রাতে শরীর থেকে
পানি বেরিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে সেই হিসাবে ভোর বা সন্ধ্যাতে
ব্যায়াম করাই উত্তম।
ষ ডা. এম. ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা।
 মোবা : ০১৭১৭০৮৪২০২



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন