Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রযুক্তির কারনে আশ্বিনা আমের ভাগ্য বদলেছে

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৪১ পিএম | আপডেট : ৬:৫১ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আমের নাম আশ্বিনা। ধারে কাছে যাসনা। এমন প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে আশ্বিনা নামের সাথে। কারন আমটি গায়ে গতরে ফজলি আমের কাছাকাছি হলেও কালচে সবুজ রং আর ভীষন টক স্বাদের জন্য। আর পাকা গায়ের চামড়া একেবারে বুড়ো মানুষের চামড়ার মত কুচকে যায়। হয় আরো শ্রীহীন। ফলে আমটির কপালে ফলের রাজা আমের সুখ্যাতি তার ভাগ্যে জোটেনি। প্রযুক্তির কল্যানে জন্ম থেকে অবহেলিত এই আমটির কপাল খুলেছে। ফ্রুট ব্যাগিং এর কল্যানে বদলেছে এর রং আর স্বাদ। গাঢ় সবুজ নয় একেবারে টকটকে হলুদ আভা গায়ে মেখে আম রসিকদের সামনে হাজির হয়েছে। আবার বাগানে যখন অন্য কোন আম নেই তখনি বাজার মাতাচ্ছে। দামও বেশ চড়া। খুশী বাগান মালিকরা। এতদিন যে আমটি আচার আর আমচুরের জন্য ব্যবহৃত হতো এখন আম রসিকদের টেবিলে চলে গেছে। বিগত বছর গুলোয় আশ্বিনা আম এক দেড় হাজার টাকা মনের বেশী দাম পাওয়া যায়নি। এখন মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে আট নয় হাজার টাকা। বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশে ফ্রুট ব্যাগিং আমের জনক ড. শরফ উদ্দিন ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, 'ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে এই আমের ভাগ্য যেমন পাল্টে গেছে। তেমনি আম চাষিদের ভাগ্যও বদলে গেছে। ২০১৬ সালে যখন এই আমগুলোতে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তখন ৩টি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি ছিল স্বাদের পরিবর্তন। আমগুলো সময়ের আগে পাড়া না হওয়ায় এর মিষ্টতা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল রঙের পরিবর্তন। বৃষ্টিতে না ভেজার কারণে এর রং অক্ষুন্ন থাকে। তৃতীয়টি, ব্যাগের কারণে আমে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।
এতদিন কেন আমটি ক্রেতার বিমুখ ছিল এর কারন সম্পর্কে বলেন, আমটি আম মওসুমের একেবারে শেষে আশ্বিন মাসে পরিপক্ক হয়। এজন্য আমটির নাম হয়েছে আশ্বিনা। তবে শুরুর দিকে আমের স্বাদটা ভীষন টক থাকে। তাছাড়া গায়ের রং ও আকর্ষনীয় নয়। আবার পাকলে বুড়ো মানুষের চামড়ার মত কুচকিয়ে যায়। ফলে এর প্রতি ভোক্তাদের প্রিয়তা পায়নি। অন্যান্য আমের দেখাদেখি যখন আম চাষীরা আশ্বিনা আমে ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু করেছে। আর ঠিক পরিপক্ক সময়ে পাড়ছে। তখন এর রং একেবারে পাল্টে গেছে। আর স্বাদ আগে থেকেতো মিষ্ট ছিল। কিন্তু ক্রেতার অপছন্দের কারনে আমটি সময় মত বাজার জাত করা হতো না। ফলে আশ্বিনা আম টক স্বাদের এই বদনাম থেকে বের হতে পারেনি। তবে এখন দিন বদলেছে। মানুষ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে। যার সুফলতো আমের বাজারে দেখতে পাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মোট বার্ষিক আম উৎপাদন প্রায় বার লাখ টন। এর প্রায় পনের শতাংশই আশ্বিনা আম।
আশ্বিনা আমের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে এবং বাকি অংশ আসে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও অন্যান্য জেলা থেকে।
ম্যাঙ্গোম্যান খ্যাত আম উৎপাদনকারী আনোয়ারুল হক বলেন, 'আমরা এখনকার মতো কখনও আশ্বিনা আমের যতœ নেইনি। তাই ফলও পায়নি। এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুফলতো পাচ্ছি।
বিশিষ্ট আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন সবচেয়ে নাবিজাত আম বাজারে যখন সব আম শেষে হয়ে যায় তখন বাজারে আসে আশ্বিনা আম। গাছে মুকুল আসার পর ফল পরিপক্ক হতে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফল পাড়ার পর পাকতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগে। পাকলেও গাঢ় সবুজ থাকে। খোসা মাঝারী মোটা। বেশী পাকলে চামড়া কুচকে যায়। এই জাতের আমটি রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগা জেলায় বেশী দেখা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাগ্য

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ